ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিজিএমইএ ভবনের সামনে প্রতীকী অনশন

অর্থনীতি ধ্বংসের চক্রান্ত করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অর্থনীতি ধ্বংসের চক্রান্ত করা হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ হরতাল-অবরোধের নামে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এখন হরতাল-অবরোধ করা হচ্ছে। আর এটাই হচ্ছে রাজনীতি। এই রাজনীতি যারা করছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় তো বটেই দেশের সাধারণ মানুষও তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। বোমাবাজদের কাছে মাথানত না করে প্রয়োজনে রাজপথে আরও কঠোর এবং কঠিন কর্মসূচী দেয়া হবে। তবে সেই কর্মসূচী হবে শান্তিপূর্ণ। শনিবার রাজধানীর কাওরানবাজারে বিজিএমইএ ভবনের সামনে হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতীকী অনশনে অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বক্তব্যে এভাবেই নিজেদের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন। গার্মেন্টস খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমইএ যৌথভাবে এই অনশন কর্মসূচীর আয়োজন করে। বেলা সোয়া ১১টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচী চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক পানি পান করিয়ে ব্যবসায়ীদের অনশন ভাঙেন। কর্মসূচী চলাকালে দুপুর সোয়া বারোটার সময় অনশন স্থলে একটি ককটেল নিক্ষেপ করে সন্ত্রাসীরা। তবে এ ঘটনায় হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীরা সেই সময় মাইকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ঘোষণা দেন, বোমা মেরে বা ককটেল নিক্ষেপ করে ব্যবসায়ীদের আন্দোলন থামানো যাবে না। হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার এবং এ ধরনের কর্মসূচী বন্ধে সরকারী উদ্যোগ না নেয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। কর্মসূচীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেছে আরও ৪০ বাণিজ্যিক সংগঠন। এছাড়া ব্যবসায়ীদের শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচীতে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ আরও কয়েকটি বাণিজ্যিক সংগঠন। এদিকে হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখতে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন বলে জানা গেছে। হরতাল-অবরোধে গার্মেন্টস শিল্পে কি ধরনের ক্ষতি হচ্ছে এবং এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তাও এই কমিটি দেখভাল করবে। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সারাদেশে হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা হাতে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। গত ৩৯ দিন ধরে দেশে টানা হরতাল-অবরোধ পালন করছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি আর্থিক খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। বিজিএমইএ বলছে, এ পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের কারণে বিভিন্ন খাতে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মূলত দেশের আর্থিক খাত ধ্বংস করার জন্যই এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচী দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে শক্ত হাতে এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে। তাঁরা বলছেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পৈশাচিকতা তালেবানদেরও হার মানিয়েছে। কারণ তালেবানরা সন্ত্রাসী কর্মকা- করে স্বীকার করে দায়ভার নেয়। আর এখন বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতৃত্বে নাশকতা চললেও তারা তা স্বীকার করছে না। এদিকে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান না হলে দেশের অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে সতর্ক করে সঙ্কট কাটাতে রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গার্মেন্টস খাতের ব্যবসায়ীরা। চলমান সহিংসতা চলতে থাকলে শুধু ব্যবসায়ীদের অনশন নয়, কোটি কোটি শ্রমিক বাস্তবে অনাহারে থাকতে বাধ্য হবে বলে সবাইকে সতর্ক করেন ব্যবসায়ী নেতারা। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে অবরোধ চালিয়ে আসা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের নেতাদের উদ্দেশে সমাবেশ থেকে বলা হয়, হরতাল না মানার অধিকার আমাদের আছে। আর সরকারের প্রতি নিরাপত্তা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, হয় নিরাপত্তা দিন, নয় তো ক্ষতিপূরণ দিন। অনশনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বিজিএমইএ’র সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম, ব্যবসায়ী নেতা আসিফ ইব্রাহিম, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ, মোঃ জসিমউদ্দিন, ডিসিসিআইয়ের সভাপতি শোয়েব চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা মঈনউদ্দিন, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, স্কয়ার গ্রুপের কর্ণধার তপন চৌধুরী, পরিবহন মালিক সমিতির সদস্য ও বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রস্তম আলী খান, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এ কাদের কিরণ, বারভিডার সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন প্রমুখ। এছাড়া সংসদ সদস্য তারানা হালিম, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা মন্টু ঘোষ, গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের সভাপতি বাবুল শিকদার ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অনশন কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের সেই কর্মসূচীতে ককটেল হামলা চালানো হলো। এভাবে বোমাবাজি করে আমাদের আটকানো যাবে না। বোমাবাজদের কাছে আমরা মাথানত করব না। আমরা ব্যবসা করতে চাই। আমাদের ধ্বংস করবেন না। তিনি আরও বলেন, আমাদের একের পর এক কর্মসূচী চলতেই থাকবে। রাজনীতিবিদদের বলব, আপনারা রাজনৈতিকভাবে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করুন। আমাদের হত্যা করে নয়। এসব করে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করার দুরভিসন্ধি চলছে। ইএবি প্রেসিডেন্ট সালাম মুর্শেদী বলেন, আমাদের ব্যবসা করতে দিন। ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নামলে পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না। আমরা ধ্বংস হলে তার দায় কে নেবে, সে চিন্তা করুন। ক্রেতারা দেশ থেকে অর্ডার প্রত্যাহার করারও চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ খাতের সবাইকে পথে নামতে হবে। একে আজাদ বলেন, আপনারা আপনাদের রাজনীতির কারণে আমাদের পুড়িয়ে মারবেন না। আমাদের ওপর বোমাবাজি করবেন না। বায়াররা আমাদের জিজ্ঞেস করে সমস্যা সমাধানে আমরা কী করছি। আমরা তাদের উত্তর দিতে পারি না। আমরা নিজেরাই জানি না আমরা কোন অনিশ্চয়তায় আছি। আবুল কাশেম আহমেদ বলেন, হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী বন্ধে দেশের সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন এই কর্মসূচী প্রত্যাখ্যান করুন। অবিলম্বে নাশকতা বন্ধের দাবি জানিয়ে তপন চৌধুরী বলেন, আপনারা দয়া করে নাশকতা বন্ধ করুন। তা না হলে পুরো দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে সবাইকে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মী তারানা হালিম বলেন, যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে তারা চিহ্নিত। কিন্তু তাদের নাম উল্লেখ করলে বলা হয়, রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সহিংসতা বন্ধ না হলে ঢাকার কয়েক লাখ দোকান মালিক-কর্মচারীকে নিয়ে কঠোর কর্মসূচীতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তৌফিক এহসান।
×