ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে যৌথবাহিনীর তৎপরতা ॥ জনমনে স্বস্তি ফিরছে

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বরিশালে যৌথবাহিনীর তৎপরতা ॥ জনমনে স্বস্তি ফিরছে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ হরতাল ও অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের কতিপয় শীর্ষ নেতার মদদে চরমপন্থীদের একের পর এক নাশকতায় দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ডেঞ্জার জোন এলাকা হিসেবে পরিচিত গৌরনদীতে গত পাঁচদিনে বিজিবির তৎপরতায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। গোটা দক্ষিণাঞ্চলে বর্তমানে অবরোধ ও হরতালের কোন প্রভাব নেই। সূত্রমতে, গত পাঁচদিন বিজিবির নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর সদস্যরা গৌরনদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নাশকতা মামলার অসংখ্য আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়াও বরিশাল উত্তর জনপদের একমাত্র নাশকতার মদদদাতা এক বিএনপি নেতার বাড়িতে যৌথবাহিনীর সদস্যদের তল্লাশির ফলে নাশকতাকারীরা এখন ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে থানা ও হাইওয়ে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে নাশকতাকারীরা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে পর পর ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। যে কারণে গত ২ ফেব্রুয়ারি বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদীর টরকী নবীনগর এলাকায় মধ্যরাতে ট্রাকে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে দুইজনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ নাটকীয়ভাবে থানায় সড়ক দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যুর বিষয়ে একটি জিডি করেছেন। বিজিবির পাশাপাশি র‌্যাব-৮ এর সদস্যরা চরমপন্থী অধ্যুষিত বাবুগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক তৎপরতা শুরু করায় গা-ঢাকা দিয়েছে চরমপন্থী দলের সদস্যরা। গত শনিবার রাতে র‌্যাব-৮ এর সদস্যরা বাবুগঞ্জের রাকুদিয়া এলাকা থেকে ২০টি পেট্রোলবোমাসহ দেলোয়ার হোসেন নামের এক চরমপন্থীকে গ্রেফতার করেছে। র‌্যাব-৮ এর সিপিসি-১ কমান্ডার ক্যাপ্টেন আবুল বাশার জানান, গৌরনদীতে ট্রাকে পেট্রোলবোমায় পাঁচজন ও উজিরপুরে একজনকে পুড়িয়ে মারার পর বোমা হামলাকারীদের শনাক্ত করার জন্য র‌্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়। সেমতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বাবুগঞ্জের রাকুদিয়া গ্রামের শাহ আলম হাজীর বাড়ির সন্নিকটে বোমাবাজদের আনাগোনার খবর পেয়ে র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে দেলোয়ারকে আটক করতে সক্ষম হলেও তার সহযোগী ৫-৭ জন পালিয়ে যায়। পরে দেলোয়ারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পার্শ¦বর্তী রাকুদিয়া এলাকার একটি বাগান থেকে দুটি প্লাস্টিকের ব্যাগে রক্ষিত ২০টি পেট্রোলবোমা উদ্ধার করা হয়। এর আগে গৌরনদী থানা পুলিশ বাদুরতলা গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে চারটি এবং আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা মহাসড়কের বার্থী এলাকা থেকে একটি পেট্রোলবোমা উদ্ধার করলেও এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নগরী থেকে গৌরনদীর ভূরঘাটা পর্যন্ত ৫৫টি সংযোগ সড়কসহ জেলায় চোরাগোপ্তা হামলা হয় এমন ৮৭টি স্পট নির্ধারণ করে যে কোন ধরনের নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ প্রশাসন, আনসার ভিডিপির সদস্যদের পাশাপাশি গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে বিজিবি মোতায়েন ও টহল শুরু করে। নাশকতাকারীদের গ্রেফতারের জন্য একাধিক অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে নাশকতা মামলার অসংখ্য আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার একেএম এহসান উল্লাহ বলেন, পেট্রোলবোমা হামলায় নিহতের ঘটনার পর এলাকাজুড়েই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোসহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়াও নাশকতাকারীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকায় বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি আরও জানান, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সকল প্রকার নাশকতাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।
×