ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচণ্ড ভালবাসা থেকেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করছি ॥ রুবেল

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

প্রচণ্ড ভালবাসা থেকেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করছি ॥ রুবেল

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মাসুম পারভেজ রুবেল। দেশীয় চলচ্চিত্রে এ্যাকশন হিরো নামে যিনি পরিচিত। তবে রূপালি পর্দায় আগমন একজন প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে। এরপর একাধারে সহকারী পরিচালক, ফাইটিং ডিরেক্টর, নায়ক, প্রযোজক, সর্বশেষ চলচ্চিত্র পরিচালক। সম্প্রতি ‘মিশন সিক্স’ নামে একটি এ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। নির্মিতব্য এ চলচ্চিত্র নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। ‘মিশন সিক্স’ চলচ্চিত্র নিয়ে বলুন.. রুবেল : আমাদের দেশে সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ নির্মিত হচ্ছে ভালবাসা কেন্দ্রিক। অনেক সময় দেখা যায় এসব চলচ্চিত্রের নামের সঙ্গে গল্পের কোন মিল থাকে না। দর্শকও একঘেয়েমি চলচ্চিত্র সব সময় পছন্দ করে না। তাই আমার ‘মিশন সিক্স’ হবে এ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রের গল্পের সঙ্গে নামের মিল রয়েছে। গল্পেও রয়েছে বৈচিত্র্য এবং ভিন্নতা। এতে পুলিশ বাহিনীকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ৬ জনের এক দুর্ধর্ষ গ্রুপকে ধরার জন্য পুলিশের অভিযান। এতে জায়েদ খানকে এ্যাকশন হিরো হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। আমাদের দেশের যেসব দর্শকরা এ্যাকশান চলচ্চিত্র দেখতে পছন্দ করেন, অমার বিশ্বাস তাদের আশা পূরণ করতে পারব। এ্যাকশন হিরো হিসেবে আপনার পরিচিতি, নির্ভেজাল সামাজিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন কি? রুবেল : আমাদের দেশে শহরসহ গ্রাম অঞ্চলেও কিন্তু বিভিন্ন ধরনের মারামারি হয়ে থাকে। এগুলোও কিন্তু সমাজ বহির্ভূত কিছু নয়। আমি সব সময় এ ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। তবে নিরেট সমাজিক চলচ্চিত্রে বলতে যদি, একেবারে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রেক্ষাপটের গল্পে নির্মিত, মোটেও মারপিট নেই এমন চলচ্চিত্রে অভিনয় করা হয়নি। আপনার পরিচালিত চলচ্চিত্র নিয়ে বলুন.. রুবেল : এ পর্যন্ত ১৬টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছি। ১৭ নম্বর চলচ্চিত্র ‘মিশন সিক্স’ শুরু করেছি। আমার পরিচালনার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘মায়ের জন্য যুদ্ধ’, এটি মুক্তি পায় ২০০১ সালে। আর শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘রক্ত পিপাসা’ ২০০৮ সালে মুক্তিপায়। রূপালী পর্দায় আসার প্রথম দিকের কথা বলুন? রুবেল : আমার বড় ভাই সফল নায়ক সোহেল রানার মাধ্যমে। তিনিই আমাকে এতদুর নিয়ে আসেন। তার জন্যই আজ আমি নায়ক রুবেল হিসেবে পরিচিত। তবে, চলচ্চিত্রে আমার শুরুটা ‘জীবন নৌকা’ চলচ্চিত্রে একজন প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে। এরপর চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হয়ে কাজ করি। তারপর ফাইটিং ডিরেক্টর হিসেবে, এরপর নায়ক হয়ে কাজ করার পর প্রযোজক হয়ে কাজ করেছি। সর্বশেষে পরিচালক হয়ে কাজ করি। সব কিছুর পাশাপাশি অভিনয়ও করছি। আমাদের চলচ্চিত্রে নায়ক সংকটের কারণ কি? রুবেল : মূলত ফিল্মের প্রতি অভিনেতাদের ভালবাসার অভাব। যতদিন পর্যন্ত ফিল্মের প্রতি অভিনেতাদের ভালবাসা না থাকবে, ততোদিন পর্যন্ত আমরা ভাল নায়ক বা অভিনেতা আশা করতে পারি না। আমরা চলচ্চিত্রের প্রতি প্রচ- ভালবাসা থেকেই অভিনয় করেছি। এ কারণেই আমাদের সময়ে নায়কের সঙ্কট ছিল না। এক সময়ে আমরা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি। সে চলচ্চিত্রেও দর্শকপ্রিয়তাও পেয়েছি। সম্প্রতি চলচ্চিত্রের গল্প প্রসঙ্গে আপনার অনুভূতি কি? রুবেল : বাংলা চলচ্চিত্রের এমন দুরাবস্থা হওয়ার জন্য কিছুসংখ্যক প্রযোজক, পরিচালকরাও দায়ী। এমন কিছু প্রযোজক আছেন যাঁরা নিজেরাই গল্প-চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে আর্টিস্ট পর্যন্ত সবকিছু করে দেন। এবং এ দিয়েই চলচ্চিত্র তৈরির কাজ শুরু করেন। এতে করে চলচ্চিত্রের মান ক্ষুণœ হয়। এক সময় আমাদের চলচ্চিত্রগুলো এতো ভাল করেছে কারণ গল্পের বৈচিত্র্যতা ছিল। সে সময় গল্প নিয়ে পর্যালোচনা করা হতো। এক গল্পের সঙ্গে যেন আরেক গল্পের মিল না থাকে। এখন তা করা হয় না। আর কিছু পরিচালক এমনও আছেন যারা পরিচালনার অনেক কিছুই বোঝেন না। না বুঝেই নির্মাণে হাত দিয়েছেন। পরিচালক হচ্ছেন একটি চলচ্চিত্রের কান্ডারী। তাই চলচ্চিত্রের অবস্থা আগের মতো নেই। আমাদের চলচ্চিত্রাঙ্গনে সিনিয়র ও জুনিয়র শিল্পীদের মাঝে পার্থক্য খুঁজে পান কি? রুবেল : আমরা চলচ্চিত্রকে শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করতাম, নেয়ার চেষ্টা করতাম বড়জোড় পাঁচ ভাগ। আর এখন নতুনরা চলচ্চিত্র থেকে নেয়ার চেষ্টা করে শতভাগ, দেয়ার চেষ্টা করে পাঁচ ভাগ। তাদের বলব, তোমরা চলচ্চিত্রকে দাও, চলচ্চিত্র তোমাদের অনেক কিছু দেবে। রাজ্জাক ভাই, আলমগীর ভাই, আমার বড় ভাই সোহেল রানা প্রত্যেকেই চলচ্চিত্রকে ভালবেসে অনেক কিছু দিয়েছে বলেই আজ তাদের এই অবস্থান। যতদিন বাংলাদেশে চলচ্চিত্র থাকবে ততদিন তাদের সবাই মনে রাখবে। চলচ্চিত্রের প্রতি ভালবাসা না থাকলে সে চলচ্চিত্র কখনই দাড়াবে না। সিনেমা হল বাঁচাতেই হিন্দি চলচ্চিত্রের আমদানি করা হচ্ছে বলে একপক্ষ দাবি করছেন, আপনি এটাকে কিভাবে দেখেন? রুবেল : আমাদের দেশের মতো এতো ভাল দর্শক পৃথিবীতে নেই। তারা দেশের চলচ্চিত্র এবং চলচ্চিত্রের লোকদের এতোই ভালবাসেন যা বলে শেষ করা যাবে না। তাদের ঋণ শোধ হওয়ার নয়। অথচ হলগুলোর নোংরা, বাজে অবস্থার কারণে দর্শক হলবিমুখ হচ্ছে। এদেশে এখনও ভাল চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। দর্শক হলে যাচ্ছে। যেমন ‘অনেক সাধের ময়না’ চলচ্চিত্রটিই তার প্রমাণ। যারা এদেশে হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানি করে প্রদর্শন করছে তারা দেশের সঙ্গে বেইমানী করছে। তারা দেশপ্রেমিক হলে এমনটি করত না। আমার ‘মা’ সে কানা হোক, অন্ধ হোক সে আমার মা। অন্ধ হলেই তাঁকে অস্বীকার করব, তাকে মেরে ফেলব, তা কোন সুসন্তানের কাজ হতে পারে না। এদেশে কোনভাবেই হিন্দি চলচ্চিত্র চলতে পারে না। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন কমিটি প্রসঙ্গে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই? রুবেল : শাকিব খুব ভাল ছেলে। তার এবারও সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় স্বাগত জানাই। আমি মনে করি তাঁর মানসিকতার পরিবর্তন না হলে ভাল করবে। অমিত হাসানও ভাল। আশা করছি দুজনেই সমিতির জন্য অনেক ভাল কাজ করবে। -গৌতম পা-ে
×