ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ নিউইয়র্ক টাইমসের ব্যাখ্যা চেয়েছে ট্রাইব্যুনাল

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ নিউইয়র্ক টাইমসের ব্যাখ্যা চেয়েছে ট্রাইব্যুনাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আদালত অবমাননার দায়ে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া জরিমানা ও এজলাসকক্ষে দাঁড়িয়ে থাকার সাজা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ করায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিউইয়র্ক টাইমসকে তাদের সম্পাদকীয় বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে ওই জবাব পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় ও জরিমানায় উদ্বেগ জানিয়ে ৪৯ জনের বিবৃতির বিষয়ে আদেশের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আদেশের দিন আজ থাকলেও ট্রাইব্যুনাল একদিন এগিয়ে এনে আদেশের দিন পুনর্নির্ধারণ করেছেন। অন্যদিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই হিসেবে পরিচিত শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার, খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২২তম সাক্ষী প্রাণ কৃষ্ণ হালদার জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, দুইটি নৌকাযোগে রাজাকাররা এসে ডাকরা মন্দিরে অবস্থানরত লোকদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ও ছোরা মেরে নিরীহ মানুষদের হত্যা করে। আসামি রাজাকার সিরাজ মাস্টার নিজ হাতে গুলি করে আমার বাবা হরিবর হালদারকে গুলি করে হত্যা করে। রাজাকাররা চলে যাওয়ার পর আমি সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার বাবা, কাকা আনন্দ মোহন হাওলার, জেঠাত ভাই সুখেন্দ্র হালদারসহ আনুমানিক ৬০০ থেকে ৭০০ লোকের লাশ পড়ে থাকতে দেখি। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১ মার্চ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া জরিমানা ও এজলাসকক্ষে দাঁড়িয়ে থাকার সাজা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে প্রকাশিত সম্পাদীয় প্রকাশে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের ব্যাখ্যা চেয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। ট্রাইব্যুনাল একই সঙ্গে বার্গম্যানের সাজা ও জরিমানার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতিদাতা ৪৯ জনের বিষয়ে আদেশের জন্য ২৩ ফেব্রুয়াির পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিউইয়র্ক টাইমসকে তাদের সম্পাদকীয় বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে ওই জবাব পাঠাতে হবে। তিন রাজাকার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই হিসেবে পরিচিত শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার, খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২২তম সাক্ষী প্রাণ কৃষ্ণ হালদার জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, দুইটি নৌকাযোগে রাজাকাররা এসে ডাকরা মন্দিরে অবস্থানরত লোকদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ও ছোরা মেরে নিরীহ মানুষদের হত্যা করে। আসামি রাজাকার সিরাজ মাস্টার নিজ হাতে গুলি করে আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। রাজাকাররা চলে যাওয়ার পর আমি সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার বাবা, কাকা আনন্দ মোহন হাওলার, জেঠাত ভাই সুখেন্দ্র হালদারসহ আনুমানিক ৬০০ থেকে ৭০০ লোকের লাশ পড়ে থাকতে দেখি। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১ মার্চ। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম প্রাণ কৃষ্ণ হালদার। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬২ বছর। আমার ঠিকানা গ্রামÑ ডাকরা, থানাÑ রামপাল, জেলা- বাগেরহাট। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ২০ থেকে ২১ বছর। তখন আমি সাংসারিক কাজকর্ম করতাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ২০ থেকে ২১ বছর। তখন আমি সাংসারিক কাজকর্ম করতাম। রাজাকারদের নির্যাতন ও অত্যাচারে ভীত হয়ে আমরা গ্রামের লোকজন ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেই। সে মোতাবেক ১৯৭১ সালের ২১ মে বাংলা ৬ জ্যৈষ্ঠ শুক্রবার আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে নৌকাযোগে আমাদের বাড়ি থেকে আমরা ডাকরা কালী মন্দিরের কাছে আসি। ওই কালী মন্দিরটি আমাদের বাড়ি থেকে আনুমানিক কোয়াটার মাইল হতে পারে। আমরা নোয়া ঠাকুরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের বলেন যে, ভাটা শুরু হলে তখন আমরা ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হব। ওই কালী মন্দির এলাকায় বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকার আনুমানিক ৬-৭ হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক সকলেই ভারতে আশ্রয় নেয়ার উদ্দেশে সেখানে সমবেত হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের অত্যাধিক গরম হওয়ায় আমার বাবাসহ পরিবারের অন্যান্য সকলে নৌকা থেকে নেমে কালী মন্দিরের পাশে বড় গাছের নিচে অবস্থান করছিলাম। সাক্ষী আরও বলেন, আনুমানিক দুপুর দুইটার দিকে লক্ষ্য করি যে, বাগেরহাটের দিক থেকে দুইটি ছিপ নৌকা মন্দিরের দিকে আসছে। ওই দুই নৌকায় আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ জন রাজাকার ছিল। একটি নৌকা ডাকরা হাইস্কুলের পাশে লাগায় এবং অপর নৌকাটি কিছু দূর সামনে এসে ডাকরা বাজারের পশ্চিম পাশে রাখে। এর পর পরই ওই দুই নৌকা হতে রাজাকাররা নেমে মন্দির এলাকায় অবস্থানরত লোকদের লক্ষ্য করে দুই দিকে থেকে এলাপাতাড়ি গুলি এবং ছোরা দিয়ে নিরীহ মানুষদের হত্যা করতে থাকে। স্কুলের কাছে নৌকায় থাকা রাজাকারদের নেতৃত্বে ছিলেন আসামি সিরাজ মাস্টার এবং অন্য নৌকায় থাকা রাজাকারদের নেতৃত্বে ছিলেন রজব আলী ফকির (বর্তমানে মৃত)। আসামি সিরাজ মাস্টার মন্দিরের পাশে থাকা আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। আমি আমার বাবাসহ অন্যদের হত্যাকা-ের ঘটনা নৌকায় থেকে দেখেছি। সাক্ষী আরও বলেন, ওই ঘটনা দেখে আমি নৌকা থেকে নেমে খাল দিয়ে পালিয়ে দক্ষিণ দিকে চলে যাই। রাজাকাররা চলে গেলে আমি সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার বাবা, কাকা আনন্দ মোহন হালদার, জেঠাত ভাই সুখেন্দ্র হালদারসহ আনুমানিক ৬০০ থেকে ৭০০ লোকের লাশ পড়ে থাকতে দেখি। আমি সেখানে আমার মা ও ছোট কাকিকে দেখতে পাই। তারা আমাকে জানায় যে, মন্দির এলাকায় যে হত্যাকা- হয়েছে তা আসামি সিরাজ মাস্টারের নেতৃত্বে হয়েছে। আমি রাতে সেখান থেকে চলে গিয়ে এক মুসলমান বাড়িতে আশ্রয় নেই। পরদিন সকালে এসে দেখি মন্দিরের পাশে আমার বাবা, কাকাসহ অনেকেরই লাশ সেখানে নেই। আমরা ধারণা করি ওই লাশগুলো রাজাকাররা নদীতে ফেলে দিয়েছি। দুই দিন পর পড়ে থাকা বাকি লাশগুলো স্থানীয় লোকজন পোড়ানোর ব্যবস্থা করে। জবানবন্দী শেষে সাক্ষী ডকে তিন আসামিকে সনাক্ত করেন।
×