ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়া ৩-২ বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধু কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন মালয়েশিয়া ॥ শেষ মুহূর্তের গোলে বাংলাদেশের স

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বঙ্গবন্ধু কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন মালয়েশিয়া ॥ শেষ মুহূর্তের গোলে বাংলাদেশের স

স্পোটর্স রিপোর্টার ॥ গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেলের শেষ মুহূর্তের একটি ভুল। কর্নারের উড়ন্ত বল ঠেকাতে নিজের অবস্থান ছেড়ে অনেকটা এগিয়ে আসেন। বলে হাত ছোঁয়ানোর আগেই বলের সঙ্গে মাথার সার্থক সংযোগ ঘটিয়ে ফেলেছেন মালয়েশিয়া অনুর্ধ-২৩ জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড মুহাম্মদ ফাইজাত। আর তাতেই সর্বনাশ! ইনজুরি টাইমের (৯০+১) ওই গোলের কয়েক সেকেন্ড পরই খেলা শেষ। সেই সঙ্গে শেষ ১৬৫ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ খ্যাত বাংলাদেশ দলের সব আশা-ভরসা এবং সুনীল স্বপ্ন। তাদের কাছে ৩-২ গোলে হেরে গেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। আর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১৫৪ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী ‘মালয়ান টাইগার’ খ্যাত মালয়েশিয়া, যারা কিনা ১৯৯৬ সালে এ টুর্নামেন্টের প্রথম আসরেও জিতেছিল শিরোপা (সেটা ছিল মালয়েশিয়ার লাল দল, ফাইনালে ২-১ গোলে হারিয়েছিল প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়ার উজাং পান্ডাং ক্লাবকে)। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে রবিবার পর্দা নামল আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এর। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে যারা খেলেছিল, ফাইনালেও খেলে তারা। আরেকটা মিল হচ্ছেÑ ২৯ জানুয়ারির সেই উদ্বোধনী ম্যাচেও মালয়বাহিনীর কাছে ০-১ গোলে হেরেছিল স্বাগতিকরা। খেলা শেষে বিজয়ী ও বিজিত দলকে পুরস্কৃত করেন প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরও উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথি টুর্নামেন্টের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, জেলা ফুটবল লীগ কমিটির চেয়ারম্যান মনজুর কাদেরসহ আরও অনেকে। ১৯৮৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘প্রেসিডেন্টস গোল্ডকাপ’-এর ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার ইউনিভার্সিটি দলকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। দলের কোচ ছিলেন আবদুস সাদেক। এরপর ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারের চারজাতি আমন্ত্রণমূলক ট্রফি, ১৯৯৯ ও ২০১০ সালে সাউথ এশিয়ান গেমস, ২০০৩ সালে সাফ গেমস শিরোপা জিতলেও এগুলো ফিফা স্বীকৃত কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছিল না। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আসরটি ফিফা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হওয়াতে দীর্ঘদিন পর আরেকটি আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারল না লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। সর্বশেষ ২০০৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়শিপের ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ জাতীয় দল। সেবার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সার্বিয়ান কোচ জোরান জর্জেভিচের অধীনে এসএ গেমসের ফাইনালে আফগানিস্তানকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জিতলেও সেটা ছিল বাংলাদেশের অনুর্ধ-২৩ দল। যে কোন পর্যায়ে বাংলাদেশ সর্বশেষ শিরোপা অর্জন ২০০৩ সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন গোল্ডকাপে। সেবার অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটানের অধীনে বাংলাদেশ ফাইনালে মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আফসোস, সাদেক-কোটান-জর্জেভিচ হতে পারলেন না ক্রুইফ! টুর্নামেন্টের ‘এ’ গ্রুপের দল বাংলাদেশ গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ চারে নাম লেখায় (২ খেলায় ১ জয় ও ১ হারে ৩ পয়েন্ট নিয়ে)। সিলেটে প্রথম ম্যাচে তারা ০-১ গোলে ‘মালয় টাইগার্স’ খ্যাত মালয়েশিয়ার কাছে হারলেও ঢাকায় দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১-০ গোলে পরাভূত করে। সেমিতে একই ব্যবধানে হারায় থাইল্যান্ডকে। পক্ষান্তরে মালয়েশিয়া ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে ওঠে। ২ খেলায় পূর্ণ ৬ পয়েন্ট অর্জন করে তারা। প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে হারায় স্বাগতিক বাংলাদেশকে। তার পরের ম্যাচে ২-০ গোলে পরাভূত করে শ্রীলঙ্কাকে। সেমিতে ১-০ গোলে হারায় সিঙ্গাপুরকে। রবিবারের ফাইনালে দুর্ভাগ্য যেন শুরু থেকেই ছেঁকে ধরে বাংলাদেশকে। ম্যাচ শুরুর আগে ওয়ার্মআপ করতে গিয়ে পায়ে চোট পেয়ে লাইডলাইনে চলে যান দলের অন্যতম সেরা ফুটবলার-এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস। ৫ মিনিটে ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে মাঠ ছাড়েন দলের নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার জাহিদ হোসেন। এই জোড়া আঘাতে যেন বেসামাল হয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। প্রথমার্ধে বল নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে থাকলেও (৫২%) ৪০ মিনিটের মধ্যেই অপ্রতাশিতভাবে দুই গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে মামুনুলরা। ৩১ মিনিটে মালয়েশিয়ান অধিনায়ক নাজিরুল নাইমের ২৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত ফ্রি কিক জড়ায় বাংলাদেশের জালে (১-০)। ৪০ মিনিটে ফরোয়ার্ড সিজুয়ানের পাস থেকে বল পেয়ে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে স্বাগতিকদের বক্সে ঢুকে আগুয়ান গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ফরোয়ার্ড কুমাহরান (২-০)। দ্বিতীয়ার্ধে ২৫ হাজারেরও বেশি দর্শক সমর্থন নিয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে স্বাগতিকরা। ৪৮ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে রায়হানের থ্রো থেকে মালয়েশিয়ার বক্সে ঢুকে হেড করেন ডিফেন্ডার নাসির উদ্দিন চৌধুরী। গোলরক্ষক বল ফিরিয়ে দিলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলি বাঁ পায়ের উঁচু শটে গোল করেন (১-২)। ৫৪ মিনিটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলামের কর্নার থেকে চমৎকার হেড করে সমতা আনেন আরেক ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান (২-২)। উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ শিবির। যখনই মনে হচ্ছিল প্রবল আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ আর হারবে না, টাইব্রেকারে গেলেও জেতবে, তখনই গোল খেয়ে স্বপ্নের অপমৃত্যু (সেই গোলের বর্ণনা লেখার শুরুতেই)। মালয়েশিয়াকে হারিয়ে বদলা নেয়া এবং ট্রফি জেতাÑ কোনটাই হলো না ক্রুইফ বাহিনীর।
×