ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস সম্মিলনীর বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধনীতে বিশিষ্টজনরা

স্নাতক পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

স্নাতক পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাথমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষার প্রতিটি স্তরে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন ইতিহাসবিদ ও বিশিষ্টজনরা। একই সঙ্গে তারা বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় এ বিষয়ে ১০০ নম্বরের বাধ্যতামূলক পরীক্ষা চালুর দাবিও জানিয়েছেন। তারা বলছেন, শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্নস্তরে শারীরিক শিক্ষা, ধর্মশিক্ষা, ইংরেজী ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক। অথচ যে ৩০ লাখ শহীদের কঙ্কালের ওপর আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে, তাদের বীরত্মপূর্ণ আত্মদানের ইতিহাস পাঠে কোন বাধ্যবাধকতা নেই! জাতি হিসেবে এটি বিরাট লজ্জার। শহীদরা যে ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন, তা নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপটে তাদের গৌরবোজ্জ্বল আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতাবিরোধীদের ভূমিকা নতুন প্রজন্মকে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে; তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা কখনই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাবে না। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম। আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ইতিহাস না জানলে ভবিষ্যত কর্মপন্থা ঠিক করা যায় না। বাংলাদেশ কোন্ পথে চলবে তা ঠিক করতে হলে দেশের জন্মলগ্নের প্রেক্ষাপট জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ৯ মাসে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পরবর্তী ২৩ বছরের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতার ফসল মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম সেসব আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস বিশদভাবে জানে না। এজন্য সেই সময়ের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধীদের ভূমিকাও তাদের জানাতে হবে। সাবেক বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, আইন ও ইতিহাস পরস্পরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। ইতিহাসের প্রতিষ্ঠিত সত্য রায় প্রদানে বিচারকদের সহায়ক হয়। তাই সঠিক ইতিহাস সঠিকভাবে সংরক্ষণ জরুরী। বিকৃত ইতিহাস জাতিকে ভুল পথে পরিচালিত করে। স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষক কে তা নির্ধারণে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া কাম্য নয়। একই সঙ্গে ২৭ মার্চের ঘোষককে ২৬ মার্চের ঘোষক বানানোর চেষ্টাও অত্যন্ত নিন্দনীয়। তাই প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণের দায় ইতিহাসবিদের কাঁধে তুলে নিতে হবে। আর সরকারের কাজ হলো এ বিষয়ে সহযোগিতা করা। এসময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সর্বস্তরে পঠন বাধ্যতামূলক করা ও বিসিএসে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা প্রবর্তনের আবেদন জানিয়ে তার লেখা দুটি চিঠির জবাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পাবলিক সার্ভিস কমিশন দীর্ঘদিনেও না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবটি ছয় বছর ধরে ঝুলে আছে। কোন অগ্রগতি হয়নি। সরকার মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে যতটা তৎপর, কাজের বেলায় ততটা নয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণের চেয়ে সামরিক জাদুঘর নির্মাণে সরকারের আগ্রহ বেশি। এর কারণ হিসেবে তিনি প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে ডানপন্থী কর্মকর্তাদের আধিক্য ও দুর্নীতির কথা বলেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর, সাবেক বিচারপতি ফজলে কবীর, বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান, সাহিত্যিক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ইতিহাস সম্মিলনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পরে টিএসসির বিভিন্ন কক্ষে ‘ইতিহাস ও ঐতিহ্য’, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পবর্’, ‘মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’, ‘গণহত্যা-নির্যাতন ১৯৭১’ এবং ‘বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্ব’ শীর্ষক পাঁচটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
×