ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ

বাংলাদেশের লক্ষ্য শিরোপা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশের লক্ষ্য শিরোপা

রুমেল খান ॥ ‘অমানিশা ভেবে পাই না কূল-/পাবো কি জিনিসটা?/ নাকি পাবোই না?/ যদি পাই, পেলে কবে?/কিভাবে, কেমন করে? জানি না জানি না.../হিমেল হাওয়ায় রিক্ততার সুরে/ চলছি একা কোন্ সে বনে?/ ভ্রমরের গুঞ্জন, পাখির কলতান,/ রিক্তপবনের দোলা নিকুঞ্জ পটতলে,/ গোধূলির মেঘ-সীমানায়/ কিরণমালী কি ছড়াবে কিরণ, শিল্পসত্তা দিয়ে!’ কবিতার এই পঙ্ক্তিমালার মতো একই অবস্থা এখন হয়েছে মামুনুলদের। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের ২৬ বছর ধরে তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতো প্রতীক্ষার অবসান কী আজই? ১৬৫ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ খ্যাত স্বাগতিক বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল কি ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এর চূড়ান্ত মহারণে পরাভূত করতে পারবে ১৫৪ র‌্যাঙ্কিংধারী ‘মালয়ান টাইগার’ খ্যাত মালয়েশিয়া অনুর্ধ-২৩ জাতীয় ফুটবল দলকে? ফাইনালে মালয়েশিয়া যুবদলকে হারাতে পারলেই ২৬ বছর পর বাংলাদেশ ফিফা স্বীকৃত কোন টুর্নামেন্টে হবে আবার চ্যাম্পিয়ন। ১৯৮৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘প্রেসিডেন্টস গোল্ডকাপ’-এর ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার ইউনিভার্সিটি দলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ (লাল দল)। এরপর ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারের চার জাতি আমন্ত্রণমূলক ট্রফি, ১৯৯৯ ও ২০১০ সালে সাউথ এশিয়ান গেমস ফুটবল, ২০০৩ সালে সাফ গেমস ফুটবলের শিরোপা জেতলেও এগুলো ফিফা স্বীকৃত কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছিল না। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আসরটি ফিফা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হওয়াতে দীর্ঘদিন পর আরেকটি আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশের সামনে। তবে এ জন্য তাদের ভাল তো খেলতে হবেই, সেই সঙ্গে পেতে হবে ভাগ্যদেবীর খানিকটা কৃপাও। এবারের আসরে গ্রুপ পর্বে এই মালয়েশিয়ার কাছেই ০-১ গোলে হেরে অভিযান শুরু করেছিল বাংলাদেশ। আজ ফাইনালে তাদের হারিয়ে বদলা নেয়া এবং ট্রফি জেতা- দুটোই অর্জন করতে বদ্ধপরিকর ক্রুইফের শিষ্যরা। মজার ব্যাপার, দু’দলই ছিল ‘এ’ গ্রুপে! বাংলাদেশ দলের প্রথমে লক্ষ্য ছিল সেমিফাইনাল খেলা। তারপর ফাইনাল খেলা। আর এখন চোখ শিরোপায়। বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন এবং শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদেরের ঘোষণা অনুযায়ী চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে বাংলাদেশ দল পাবে ৭০ লাখ টাকা। সেমির ম্যাচ জেতে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ দল ৫০ লাখ টাকা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পেয়েছে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার সঙ্গে ম্যাচ খেলেছে ৩টি ফিফা স্বীকৃত ম্যাচ। দুটি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে, একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দুটি ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে। তবে দু’দল সার্বিকভাবে মুখোমুখি হয়েছে ৮ ম্যাচে। তাতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ১টিতে, মালয়বাহিনীর জয় ৬টিতে, বাকি ১ ম্যাচ ড্র হয়। এর আগে সর্বশেষ ২০০৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ জাতীয় দল। সেবার ভারতের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসের ফাইনালে আফগানিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ স্বর্ণপদক জেতলেও সেটা ছিল বাংলাদেশের অনুর্ধ-২৩ দল। যে কোন পর্যায়ে বাংলাদেশের সর্বশেষ শিরোপা অর্জন ২০০৩ সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন গোল্ডকাপে। সেবার অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটানের অধীনে বাংলাদেশ ফাইনালে মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের এটি তৃতীয় আসর। প্রথম দুটি আসরের ফাইনালে দর্শক ছিল স্বাগতিকরা। ১৯৯৬ সালে প্রথম আসরের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল মোহামেডান ও আবাহনী। সেমিফাইনালে মোহামেডান-আবাহনী উভয় দলই হেরেছিল টাইব্রেকারে। ১৯৯৯ দ্বিতীয় আসরে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় দল। স্বাগতিকরা বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। চেনা পরিবেশে, পরিপূর্ণ দর্শক সমর্থন এবং একবুক আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাংলার বাঘরা যদি হারাতে পারে মালয়ান বাঘদের, তাহলেই ঘটবে বাংলাদেশের ২৬ বছরের আন্তর্জাতিক ফুটবল শিরোপা-খরার অবসান। সেটা কি সম্ভব হবে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের পক্ষে?
×