নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ জেলার সীমান্তে জামায়াতের অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুদের খবর জনকণ্ঠে প্রকাশ হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনসহ গোয়েন্দা বিভাগে চলছে তোলপাড়। বিএনপি-জামায়াতের সময় নিয়োগ পাওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা এই সিন্ডিকেটের সহায়তাকারী বলে অভিযোগ রয়েছে। কাউকেই তোয়াক্কা করেন না তিনি।
জেলার হাতীবান্ধা সীমান্তে ক্ষুদ্রাস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকদ্রব্য জামায়াত, শিবির ক্যাডার ও উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী মজুদ করেছে বলে খবর গ্রামের মানুষের মুখে মুখে প্রচার পাচ্ছে। এর আগেও হাতীবান্ধার মাদ্রাসায় গোপন বৈঠক করার সময় জেএমবির সদস্যরা আটক হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়। লালমনিরহাট সদর থানায় মহিলা সদস্যসহ মৌলবাদী চক্রের কয়েকজনকে আটক হয়। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় জঙ্গী তৎপরতা চালানোর মামলা ছিল। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক ঘোরাফেরার মামলা দেয়ায় খুব সহজে তারা ছাড়া পেয়ে যায়। এছাড়াও লালমনিরহাটের আব্দুল খালেক (এপিপি) স্থানীয় বিএনপির রাজনৈতিক কর্মী। তিনি সরকারী উকিল নিয়োগ পাওয়ায় আইনীভাবেই আটককৃতরা খুব সহজেই জামিনপ্রাপ্ত হয় বলে আদালত চত্বরে প্রচার রয়েছে।
নেত্রকোনায় সদ্য বদলি হয়ে যাওয়া লালমনিরহাটের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নরেশ চন্দ্র সরকার ঢালাও জামিন না দেয়ায় এপিপি আব্দুল খালেকের বড়ভাই আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আদালত চলাকালে তাঁকে নানাভাবে অপমানিত করেন। পরে বিচারকের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়। জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় জামায়াত, শিবির ও উগ্র মৌলবাদী চক্রের রয়েছে শক্তিশালী ঘাঁটি। বিগত দিনে এখানে জামায়াত রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ছিল। জামায়াত, শিবির ও উগ্র মৌলবাদী চক্র এখানে আওয়ামী লীগের অনেক নেতার পরিবারে আত্মীয়তা করেছে।
জামায়াত, শিবির ও উগ্র মৌলবাদী চক্রটি এই জেলায় স্থানীয় রাজনীতির মাঠ দখল করতে সমাজসেবার নামে গরিব মানুষের বাড়ি বাড়ি নলকূপ, টয়লেট, টিন, শ্যালো মেশিন, কন্যা দায়গ্রস্ত পরিবারের বিয়েতে অনুদান, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে জঙ্গীবাদী আদর্শ প্রচার করেছে। সুসংগঠিত হয়েছে। যার ফলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কয়েকটি ইউনিয়নে জয়ী হয়। এই অঞ্চলে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে ধরলা নদীর চরে কয়েক হাজার পরিবারের বসবাস। এখানে বর্ষায় পানি ও শুষ্ক মৌসুমে বালুরচরের কারণে দুই দেশের কোন দেশের প্রশাসনের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ এখানে নেই। এই সুযোগে মাফিয়া চক্র সীমান্তে শক্তিশালী অবস্থা গড়ে তুলেছে। চক্রটি অর্থের বিনিময় বিস্ফোরক, গরু, ক্ষুদ্র অস্ত্র, গ্রেনেড, মাদক ও জাল (ভারতীয় বাংলাদেশী) মুদ্রার রমরমা ব্যবসা করছে। প্রায় বছরখানেক আগে জেলা সদরের মোগলহাটে বালুরচরে তাজা একটি আর্জেস গ্রেনেড পরিত্যক্ত অবস্থায় সীমান্তের মানুষ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। সদর থানার পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে গ্রেনেডটি ড্যামেজ করে দেয়া হয়।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি জনকণ্টে পাকি গোয়েন্দা আর খালেদার নাশকতার যোগাযোগ সম্পর্কে ‘তোলপাড় সারাদেশ’ শিরোনামে খবর প্রকাশ হয়। এই খবরে জঙ্গী নেতা মাযহারের লালমনিরহাটে কানেকশন রয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ পায়। এর পরই গ্রেফতার এড়াতে জামায়াত, শিবির ও উগ্র মৌলবাদী নেতারা আত্মগোপনে গেছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: