ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিজেপির ইশতেহারে ফুঁসছে উত্তর-পূর্ব ভারত

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিজেপির ইশতেহারে ফুঁসছে উত্তর-পূর্ব ভারত

দিল্লীর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ইশতেহারে উত্তর-পূর্ব ভারতের লোকদের ‘ইমিগ্রান্ট’ (অভিবাসী) ও ‘মাইগ্রান্ট’ (ভিন্ রাজ্যের মানুষ) হিসেবে চিহ্নিত করায় ফুঁসছে নরেন্দ্র মোদির ‘অষ্টলক্ষ্মী’। লোকসভা ভোট-প্রচারে এসে দেশের উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যকে ওই নামই দিয়েছিলেন গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার সে সব রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পুড়েছে মোদি, রাজনাথ সিংহের কুশপুতুল। ক্ষোভ প্রশমনে তৎপর দিল্লীর বিজেপি নেতৃত্ব। এ দিন একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভুল স্বীকার করেছেন। আসরে নেমেছেন খোদ মোদিও। তবে, ভুল স্বীকার বা ক্ষমা চাওয়ার পথে না হেঁটে, তিনি আক্রমণ শানিয়েছেন সমালোচকদের উদ্দেশে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘ভোট আসবে-যাবে। কিন্তু দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা নষ্ট হতে দেব না। আমি গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত ঘুরেছি। ৬০ বছরে সেখানে যা উন্নতি হয়নি তা করে দেখাব। ছাপার ভুল নিয়ে রাজনীতি করে লাভ নেই।’ আনন্দবাজার পত্রিকা বিজেপির প্রথম সারির দুই নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ ও নির্মলা সীতারামনও পরপর সাংবাদিক বৈঠকে দুঃখপ্রকাশ করেন। এ দিন হিন্দিতে প্রকাশিত হয় বিজেপির ইশতেহার। তাতে ওই সব শব্দের উল্লেখই করা হয়নি। নির্মলা বলেন, ‘উত্তর-পূর্বের মানুষের কাছে অনুরোধ, সামান্য মুদ্রণ বিভ্রাটের জন্য আমাদের সদিচ্ছাকে ছোট করে দেখবেন না। আপনাদের প্রতি আমরা বরাবর যতœশীল।’ তাঁর মন্তব্য, ‘বিজেপি ইশতেহারের ভুল তুলে ধরে রাজনীতি করছেন কংগ্রেস, আম আদমির নেতারা। তাঁদের কাছে প্রশ্ন, আপনাদের ইশতেহারে উত্তর-পূর্বের জন্য কেন একটিও বাক্য খরচ করা হয়নি?’ বুধবার বিজেপি সাফাই দেয়, ইশতেহারে ‘ভিন্ রাজ্যের মানুষের’ বদলে ছাপার ভুলে ‘অভিবাসী’ লেখা হয়েছে। কিন্তু, তাতে পরিস্থিতি বদলায়নি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো হাতে নতুন ‘অস্ত্র’ পেয়ে যায়। উত্তর-পূর্বের বিদ্বজ্জন মহল দাবি করেন, ওই দুটি শব্দই বিচ্ছিন্নতাবাদী। গুয়াহাটিসহ বিভিন্ন জেলায় রাস্তায় নামে অসম গণপরিষদ, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি, যুব কংগ্রেস, আমসু, আসু। কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির প্রধান অখিল গগৈ বলেন, ‘এত দিন ভিন্ দেশ থেকে বেআইনীভাবে আসা লোকেদের অনুপ্রবেশকারী বলে চিনতাম। দেশের রাজধানীতে আমাদের একই পঙতিতে বসিয়ে দিল বিজেপি। ভিন্ রাজ্যের মানুষ বললেও মেনে নেয়া যায় না। তা হলে, দিল্লীর মারোয়াড়ি বা পঞ্জাবীদেরও তা বলা হোক।’ এর জেরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে সর্বানন্দ সোনোয়াল, কিরেণ রিজিজুর মতো উত্তর-পূর্বের প্রতিনিধিদের ইস্তফা দেয়ার দাবি উঠেছে। আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলেন, ‘উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে বিজেপিকে। তবে, মানুষ তাঁদের ক্ষমা করতে পারবেন কি না সন্দেহ!’ প্রদেশ কংগ্রেসও এ দিন প্রতিবাদ মিছিল করে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, ‘আমরা ভারতীয় না বহিরাগত, তা ঠিক করার অধিকার বিজেপির নেই।’ যুব কংগ্রেস কর্মীরা প্রদেশ বিজেপির সদর দফতর ঘেরাও করেন। পোড়ানো হয় বিজেপির পতাকা। সব মিলিয়ে শোচনীয় হাল উত্তর-পূর্বের বিজেপি নেতাদের। দলীয় ইশতেহারে ভুলের ধাক্কায় তাঁরা বেসামাল। অসমের বিজেপি সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য দাবি করেন, ‘অভিবাসী’ এবং ‘ভিন্ রাজ্যের মানুষের’ মধ্যে যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। অরুণাচলের নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু কাল বলেছিলেন ‘ক্ল্যারিক্যাল ভুল’। আর বুধবার বক্তব্য, ‘উত্তর-পূর্বের মানুষ বিদেশি হলে, আমি কেন্দ্রে কী করে মন্ত্রী হলাম?’ কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও ভুল স্বীকার করেন।
×