ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘জনরোষেই নিশ্চিহ্ন হবে’

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

‘জনরোষেই নিশ্চিহ্ন হবে’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত শিবিরের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- শীঘ্রই জনরোষের মাধ্যমে প্রতিহত হবে। আশার বিষয় হচ্ছে, তাদের জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যার মতো কর্মসূচী দেশের মানুষ মেনে নিচ্ছে না। এ কারণে জনরোষেই প্রতিহত হবে বিএনপি-জামায়াত। বৃহস্পতিবার সকালে অর্থ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় একথা বলেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চারটি বিভাগ-অর্থ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের চার সচিবসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ আজ সচেতন। তাই বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কোন কর্মসূচী দেশের মানুষ মেনে নিচ্ছে না। যারা নাশকতা করছে, গাড়িতে পেট্রোলবোমা ও অগ্নিসংযোগ করে মানুষ পুড়িয়ে মারছে তাদের হাতেনাতে ধরে মানুষ গণধোলাই দিচ্ছে। জনগণই নাশকতাকারীদের ধরা শুরু করছে। ফলে জনরোষের মাধ্যমে তারা প্রতিহত হবে। শীঘ্রই এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারা মানবাধিকারবিরোধী কাজ। একাজ ইসলামবিরোধীও। বোমা মেরে মানুষ হত্যা, অর্থনীতির ওপর আঘাত হানা-এসবই বিএনপি-জামায়াতের কাজ। যে দল দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, যে দল সামরিক শক্তির অপব্যবহারের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত তাদের পক্ষেই সম্ভব এভাবে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা ও মানুষের ধন-সম্পদ ধ্বংস করা। এরা দেশের জন্য কোনও উন্নয়ন না করে, মুফতে সব কিছু পেয়ে গেছে। আর সে কারণেই দেশের ধ্বংস হলে তাদের কিছু যায় আসে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা আগে থেকেই দক্ষ। তাই মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবেলা করতে পারব। আমরা যে পারি সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। শত প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা সরকার কঠোর হস্তে দমনের চেষ্টা করছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে হত্যার পর মিলিটারি ডিক্টেটরের হাত দিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় যুদ্ধাপরাধী হিসেবে স্বীকৃত জামায়াত-শিবির। এই দলটি সেই সময় পাকিস্তানীদের সহায়তায় দেশে হত্যা, গণধর্ষণ এবং মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। স্বাধীনতার এতদিন পরও তাদের চরিত্র বদলায়নি। তাই বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও দেশের উন্নতির দিকে তাকায়নি। নিজেরা দুর্নীতি করে টাকা কামাই করে বরং বিদেশে পাচার করেছে। তাই এরা বাংলাদেশকে ধ্বংস করবে; এটাই তাদের আসল চরিত্র। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, মূল্যস্ফীতি হ্রাস, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রজ্ঞা ও দক্ষতা এবং তাঁর নিরলস কাজ করে যাওয়ার ক্ষমতারও ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহারে দক্ষতা বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। রফতানি আয় তিনগুণ বেড়ে ৩০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে শ্রমঘন শিল্প গড়ে তুলতে হবে। গত ছয় বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। আগামী ১০ বছরে আরও ১০ শতাংশ কমানো সম্ভব হবে। শেখ হাসিনা বলেন, গত ছয় বছরে প্রতিবারই বাজেটের আকার বেড়েছে। গত ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বাজেট বৃদ্ধির ফলে প্রবৃদ্ধির গতি যেমন সচল হয়েছে তেমনি দারিদ্র্য ও অসমতা কমছে। ক্রমেই বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে। শেখ হাসিনা বলেন, বৈদেশিক ঋণের স্থিতি জিডিপির ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহারে আমাদের দক্ষতা বেড়েছে। এছাড়া ওই সভায় বর্তমান সরকারের মেয়াদের বাকি চার বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার আরও ১০ শতাংশ কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তার সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টায় গত ছয় বছরে দারিদ্র্যের হার ২৪ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, সকলের নিরলস শ্রমেই বিএনপি-জামায়াতের রেখে যাওয়া অনেকটা বিপর্যস্ত অর্থনীতি থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়েছে। দেশের ভেতরেই বাজার সৃষ্টি করে দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো তার সরকারের লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে; যার মাধ্যমে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অর্থনৈতিক দূরদর্শিতার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত এই পরিকল্পনা বাতিল করে, এ্যাডহক ভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়ে দেশের অর্থনীতিকেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে তার সরকার ষষ্ঠ পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা নেয়, যা দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতেও তার সরকারের উদ্যোগগুলোর কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, খাদ্য মজুদ আধুনিকতর করতে তার সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে দুই-তিন বছর পর্যন্ত খাদ্য মজুদ করা সম্ভব হবে। অগ্নিদগ্ধদের জন্য নয় প্রতিষ্ঠানের ৬ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা ॥ পেট্রোলবোমায় আহত ও নিহতদের আর্থিক সহায়তা প্রদানে সরকারী নয় প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ৬ কোটি টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ব্যাংক ১ কোটি করে ৩ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ৭৫ লাখ, জীবন বীমা কর্পোরেশন ২৫ লাখ, সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন ৫০ লাখ, সাধারণ বীমা ৫০ লাখ, বিডিবিএল ৫০ লাখ এবং আইসিবি ৫০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।
×