ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নিন

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নিন

অবরোধ-হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারার পৈশাচিকতা চলছে মাসাধিককাল ধরে। এই সময়ের ভেতর নিহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন শতাধিক অগ্নিদগ্ধ মানুষ। আর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পোড়া ক্ষত সারানোর অপেক্ষায় আরও শত মানুষ। কিছুতেই নাশকতা থামছে না। অবরোধের নামে যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মানুষ হত্যার কর্মসূচী শেষ হচ্ছে না। বরং দিন দিন আরও চরম আকার ধারণ করছে এই নৈরাজ্য। সন্ত্রাস সহিংসতার ভেতর ফের চলতি সপ্তাহে চাপিয়ে দেয়া হয় ৫ কর্মদিবসব্যাপী লাগাতার হরতাল। বাংলাদেশকে যের মগের মুল্লুক ভেবে বসেছে! বাতাস ভারি হয়ে উঠছে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটের। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মানুষ খুনের প্রকল্পে বেঁচে যাওয়া অগ্নিদগ্ধ মানুষের ঠাঁই যেন আর হচ্ছে না হাসপাতালের ওই ইউনিটে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এই আগুন দিয়ে গোটা দেশকেই যেন বার্ন ইউনিট বানাতে চাওয়া হচ্ছে! সোমবার রেলে আবার বড় ধরনের নাশকতা হয়েছে। মঙ্গলবার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী নৈশকোচে দুর্বৃত্তদের পেট্রোলবোমায় বাসের ভেতরেই পুড়ে অঙ্গার হয়েছে ঘুমন্ত সাতজন। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ ও আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এর দু’ সপ্তাহ আগে একইভাবে রংপুরের মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহী বাসে দুর্বৃত্তদের পেট্রোলবোমায় বাসের ভেতরেই পুড়ে অঙ্গার হয়েছিল এক শিশুসহ চারজন। এসব ঘটনায় যে কোন বিবেকবান মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দেবেইÑ আমরা কোন্্ দেশে বাস করছি? এ কেমন বীভৎসতা? কোন মানুষ কি এভাবে মানুষ হত্যা করতে পারে? এ ধরনের সহিংসতা দিয়ে কি কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিল করা সম্ভব? এ কোন্্ কাল এলো যখন বাঙালী পুড়িয়ে মারছে আরেক বাঙালীকে! মনে পড়ে যায় একাত্তরের কথা। সে সময়ে মুক্তিকামী বাঙালীর ওপর অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়া পাকিস্তানী খানসেনাদের পাশাপাশি তাদের এদেশীয় দোসর, যারা ছিল বাঙালীই, হত্যাকা-ে সহযোগিতা করেছিল। চরম পরিতাপের কথা আজ স্বাধীনতার চার দশক পেরিয়েও বাঙালী পরিচয়ধারী সেই কুলাঙ্গারদের বংশধররাই যেন আবার বাঙালী হত্যায় মেতেছে! মানুষ পুড়িয়েই তারা ক্ষান্ত হচ্ছে না, তাদের সহিংসতা ও নাশকতায় দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন ঘটছে বিপুল পরিমাণে। ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যত বিপন্ন হয়ে উঠেছে। এই ধারাবাহিক অপরাধ নিশ্চয়ই মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে! এটা সংবিধানসম্মত যে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকারের ওপরেই ন্যস্ত। নাশকতা প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত ব্যবস্থায় কিছু কিছু সাফল্য এসেছে সত্য। তবে তা যথেষ্ট নয়। মঙ্গলবার গভীর রাতে চট্টগ্রামে বিজিবির অভিযানে ৩১ পেট্রোলবোমা ও ককটেলসহ আটক হয়েছে ২১ জন। এর আগে রাজধানীসহ আরও কয়েকটি স্থানে সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করা হয়েছে। আবার তার বিপরীতেই ঘটল কুমিল্লা ট্র্যাজেডি! মানুষ পুড়িয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের আর কোনো ছাড় নয়। এবার সরকারের আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত এবং সেটা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই।
×