ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন আইনের প্রয়োজন নেই;###;অসাংবিধানিক সরকারের স্বপ্ন দেখে লাভ নেই

সংসদে প্রধানমন্ত্রী ॥ জরুরী অবস্থা নয়

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সংসদে প্রধানমন্ত্রী ॥ জরুরী অবস্থা নয়

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরী অবস্থা জারির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল-অবরোধের নামে সহিংসতা-নাশকতা ঠেকাতে জরুরী অবস্থা জারির প্রয়োজন পড়বে না। আর জরুরী অবস্থা জারির মতো কোন পরিস্থিতিও দেশে সৃষ্টি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই সন্ত্রাস-সহিংসতা দমন করা হবে। তাদের কোন জনসমর্থন নেই, তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে। দেশের জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা মোকাবেলা করবো। দুই-চারজন সন্ত্রাসীর জন্য মানুষের জীবন ও দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে, গায়ে একবিন্দু রক্ত থাকতে তা হতে দেব না। সরকারও হতে দেবে না। সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, খালেদা জিয়া লাশের ওপর পা রেখে ক্ষমতায় যেতে চান। ক্ষমতার জন্য উনি উন্মাদ হয়ে গেছেন। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে হিংস্র হয়ে পড়েছেন। উনার নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট সাপের মতো হিংস্র ফণার ছোবলে দেশকে বিষাক্ত করে ফেলছে। তার কাছে কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের জীবনও নিরাপদ নয়। আর ওনার প্রতি আমাদের আস্থাও নেই। সুযোগ পেলে তিনি হয়তো শিক্ষার্থীদেরও মেরে ফেলতে দ্বিধা করবেন না। এ কারণেই এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হয়েছে। কেননা আমরা একজন শিক্ষার্থীর জীবনকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারি না। বুধবার জাতীয় সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। দেশে অসাংবিধানিক শাসনের আর কোন সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, অসাংবিধানিক শাসনের স্বপ্ন দেখে কোন লাভ নেই। কেউ করতে চাইলে জনগণই রুখে দেবে। আর অসাংবিধানিক শাসনের অলৌকিক স্বপ্ন দেখে কেউ দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন, দেহে রক্ত থাকতে তা হতে দেব না। সংবিধান সংশোধন করে অসাংবিধানিক শাসনের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে- সংবিধান লঙ্ঘন করে কেউ ক্ষমতা দখল করলে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর এ অপরাধে ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের (মৃত্যুদ-) বিধান রয়েছে। তাই সুযোগ সন্ধানীরা যেন সেই স্বপ্ন না দেখেন। নাশকতা-সহিংসতা দমনে নতুন আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত সংরক্ষিত আসনের সদস্য সানজিদা খানমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আইনের কোন অভাব নেই। আইনের সঠিক প্রয়োগটাই যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা গ্রেফতার হচ্ছে তারা যেন সঙ্গে সঙ্গে জামিনে ছাড়া না পায়, সেজন্য ব্যবস্থা নেবেন। কারণ সন্ত্রাসীরা জামিন নিয়ে বেরিয়ে আবারও অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। তাই দ্রুত জামিন যাতে না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। গ্রেফতার হওয়া সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডের গভীরতা বিচার করেই ব্যবস্থা নেবেন। বিরোধী দলের চীফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই জরুরী অবস্থার কথা বলেন। কিন্তু দেশে জরুরী অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতি হয়নি। তিনি বলেন, ইয়াজউদ্দিন সাহেব ইমার্জেন্সি দিতে পেরেছিলেন। কারণ তখন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানও উনি নিজে ছিলেন। অর্থাৎ সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানও তিনি। এখন যদি ইমার্জেন্সি দিতে হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে লিখে তা পাঠাতে হবে রাষ্ট্রপতির কাছে। তারপর রাষ্ট্রপতি ইমার্জেন্সি ডিক্লেয়ার করতে পারবেন। কিন্তু সেই অবস্থা দেশে নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় আসলে টক-শো ওয়ালাদের সুবিধা হয়। তাই তারা অনেকেই সেই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু সেটা আর হবে না। দেশে অসাংবিধানিক শক্তির ক্ষমতা দখলের বেশির ভাগ ঘটনার জন্য বিএনপি দায়ি। ৭৬ সাল থেকে ৮২ সাল পর্যন্ত বিএনপির দুঃশাসনের কারণে এবং ২০০১ সালের পর ২০০৬ সালের জোট সরকারের দুঃশাসনের কারণে অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছিলো। কিন্তু আমরা সংবিধান সংশোধন করে সেই পথ বন্ধ করেছি। তিনি বলেন, আমরা সুশাসন কায়েম করতে পারি। আমরা যে কোন অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তাই মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে টক-শো সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা টকশ’ করেন তাদের কবে শুভবুদ্ধির উদয় হবে তা আমি জানি না। টক-শো ওয়ালাদের প্রধান টার্গেটই তো আমি। তাদের বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া কে দেবে? তিনি বলেন, অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতায় এলে তাদের সুবিধা হয়। তাদের কদর বাড়ে। তাই বসে থাকে কখন অসাংবিধানিক সরকার আসবে। তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাস-সহিংসতা দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতা-সহিংসতা সৃষ্টির সঙ্গে যারা জড়িত, যারা হুকুমদাতা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া যারা এসব সহিংসতায় অর্থের যোগান দিচ্ছে, কোথায় থেকে আসছে, কারা বোম- পেট্রোলবোমা বানাচ্ছে তা আমরা খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছি। জড়িতদের অবশ্যই কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এসএসসি পরীক্ষা সম্পর্কে সাবেক আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, দেশের ছেলে-মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায়, তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞান নিয়ে শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠুক সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সকল ছেলে-মেয়েরা যাতে স্কুলে যায় সেজন্য বিনামূল্যে পহেলা জানুয়ারিতেই বই বিতরণ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, দেশের একজন শিক্ষার্থীর জীবনও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। খালেদা জিয়া হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। নির্বাচনে না এসে উনি (খালেদা জিয়া) ভুল করেছেন। নিজের ভুলের মাশুল নিজে দিচ্ছেন না। মাশুল দিতে হচ্ছে দেশের জনগণকে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেত্রী মানসিক বিকৃতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তাকে বিশ্বাস করতে পারি না। তাই এসএসসি পরীক্ষার্থীদের আগুনের মুখে ঠেলে দেয়া যায় না। উন্মাদ হয়ে উনি এখন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। এ কারণে পরীক্ষার সময় পিছিয়ে দিতে হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ায় কিছুটা সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। তবে আমি নিশ্চিত শিক্ষার্থীরা সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই পরীক্ষা দিয়ে ভালভাবেই পাস করবে। কারণ আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন অনেক মেধাবী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট দেশের জনগণকে কামড়ে খাচ্ছে। উনার স্বামী (জিয়া) অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে হাজার হাজার সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। খুন-খারাবি ছাড়া উনি আর কিছু বোঝেন না। পুত্রের (তারেক জিয়া) পরামর্শ নিয়ে উনি এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন। তার পুত্রের সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না, দেশের মানুষ ভাল করেই তার সম্পর্কে জানেন। কিন্তু যতই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করুক না কেন ইনশাল্লাহ আমরা দেশকে ধ্বংস হতে দেব না। সরকারী দলের আবদুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার (খালেদার) ছেলের বউ (জুবাইদা রহমান) ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছেলের চেয়ে দেশ বড়।’ কিন্তু যে মা নিজের ছেলেকে ভালবাসে না, সে কিভাবে দেশকে ভালবাসবে? নিজের ছেলেকে না ভালবাসলে দেশকে ভালবাসা যায় না। এ প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন. মাহমুদুর রহমান মান্নাদের সাক্ষাতের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ছেলে (কোকো) মারা যাওয়ার পর এক সপ্তাহ না যেতেই তিনি (খালেদা জিয়া) মাথায় ঘোমটা দিয়ে আল্লাহ-রাসূলের নাম না নিয়ে আঁচল ফেলে দিয়ে বসেছিলেন। নতুন নতুন শাড়ি ব্লাউজ পরে বসেছিলেন। কাকে দেখানোর জন্য তিনি এগুলো করেছিলেন? সবাই সেখানে গেছে তাকে দেখার জন্য। কি দেখেছে, দেখে এসেছে তিনি কী শোকাহত? আসলে তিনি পুত্রশোকে কাতরও নন, পাথরও নন। এ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, বিএনপি নেত্রীর পুত্র অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। মাত্র ৪-৫ ঘণ্টায় মালয়েশিয়ায় যাওয়া যায়। দেখলাম না ওই ৪-৫ ঘণ্টার যাত্রা করে উনি (খালেদা জিয়া) মালয়েশিয়ায় গিয়ে অসুস্থ ছেলের পাশে গেছেন। ছেলের জন্য দু’ফোটা জল ফেলেছেন। অসুস্থ ছেলেকে দেখতে গেছেন। বেগম জিয়ার সিঙ্গাপুর সফর প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে পুত্রদের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে। তিনি সিঙ্গাপুর কোথায় গিয়েছিলেন সব তথ্য আমার কাছে আছে। কোন কোন শপিং মলে ঘুরেছেন, শাড়ি-চুড়ি কিনেছেন- সে সব ছবি আমার কাছে আছে। চাইলে আমি সবাইকে দেখাতে পারবো। বিএনএফ চেয়ারম্যানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া উন্মাদ ও হিংস্র্র হয়ে গেছেন, হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। তবে একজন শিক্ষার্থীর কোন ক্ষতি হলে তার সকল দায়-দায়িত্ব খালেদা জিয়াকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থীরা বিএনপি নেত্রীর কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করছে কারণ তারা সুন্দর ও শান্ত পরিবেশে পরীক্ষা দিতে চায়। তাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হোক তা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা চান না। কিন্তু বিএনপি নেত্রীর কারণে সেই শান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। তবে আমরা আশা করব যে বিএনপি নেত্রীর হারিয়ে ফেলা হিতাহিত জ্ঞান ফিরে আসবে, হিংস্র্রতা বন্ধ করে জনগণকে ছোবল দেয়া বন্ধ করবেন, তার সুমতি ফিরে আসবে।
×