ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লেবাননে গিয়ে নারীর দুর্বিষহ জীবন

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

লেবাননে গিয়ে নারীর দুর্বিষহ জীবন

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ লেবাননে মোটা বেতনের চাকরির প্রলোভন দিয়ে এক নারীকে নিয়ে গিয়ে জোর করে দেহ ব্যবসায় নামানোর গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদেশে পদে পদে বিড়ম্বনা ও ঝক্কি-ঝামেলা এড়িয়ে অবশেষে প্রাণ নিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন ওই নারী। এসেই মামলা করেছেন ঢাকার প্রতারক সংস্থা এএ ওভারসিজের ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। দেশে ফিরে এসে সেদেশে নিগৃহের করুণ বর্ণনা দিয়েছেন চল্লিশোর্ধ ওই নারী। তিনি জানান, প্রথমে তাকে বলা হয়েছিল, বিদেশে বাসা বাড়িতে পরিচারিকার কাজ দেয়া হবে। বেতন ১৭৫ ডলার। টাকায় তা কত সে হিসেব করার প্রয়োজন মনে করেনি। ডলারে বেতন শুনেই যাওয়ার তোড়জোর। এরপর যোগাযোগ হয় রাজধানীর বিজয়নগরের ২০৫ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণির এএ ওভারসিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। মূল যোগাযোগ হয় ম্যানেজার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। ট্রেনিং, পাসপোর্ট, ফিঙ্গার প্রিন্ট, ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারিং কার্ড সব মিলিয়ে দফায় দফায় নেয়া হয় ৭০ হাজার টাকা। শেষে টিকেটের জন্য নেয়া হয় আরও ৩০ হাজার টাকা। গতবছরের ২৭ নবেম্বর তাকে পাঠানো হয় লেবাননে। এয়ারপোর্ট থেকে মার্লেন নামের এক নারী গ্রহণ করে বাড়ি নিয়ে যায়। প্রথম দুই দিন তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা হলেও তৃতীয় দিন তাকে একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে সংক্ষিপ্ত পোশাক পরতে বাধ্য করা হয়। পরে এক বয়স্ক লোকের ঘরে পাঠায়। এই ব্যক্তি তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তবে ওই নারীর চিৎকারে ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পেলেও আকমান ওরফে সারোয়ার নামের এক বাংলাভাষী এসে তাকে মারপিট করে। এক পর্যায়ে সে জানতে পারে তাকে দেহ ব্যবসায় নামানোর জন্য দুই হাজার ডলার নেয়া হয়েছে। পরে সেখানে তাকে তিন বছর থেকে দেহ ব্যবসায় নামার প্রলোভন দেখানো হয়। ওই নারী গত ২৭ জানুয়ারি ফিরেছেন লেবানন থেকে। তার অভিযোগ, তাকে সেখানে গৃহপরিচারিকার কাজের জন্য নেয়া হলেও রাতে দেহ ব্যবসার জন্য চাপ দেয়া হয়। এতে রাজি না হওয়াতে তাকে বেদম মারপিট করা হয়। এক পর্যায়ে সেখান থেকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কাছে মাক্তাব এলাকায় একটি পরিবারের কাছে যায়। সেখান থেকে অপর এক মেয়ের সহযোগিতায় সে রাজশাহীতে যে বাড়িতে কাজ করত তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ অবস্থায় রাজশাহী থেকে গৃহকর্তা ব্যবসায়ী তাকে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে স্থানীয় পুলিশের কাছে যেতে বলেন। তার কথা অনুযায়ী সে থানায় যায়। তবে সেখানে তাকে আটক রাখা হয়। তার কথা (বাংলা ভাষা) বুঝতে না পারায় এক বাঙালী মেয়েকে ডাকা হয়। পরে তাকে একটি রিমান্ড হোমে পাঠানো হয়। সেখানে এক সপ্তাহ রাখার পর দেশে পাঠানোর জন্য এয়ারপের্টে নেয়া হয়। তবে পথ থেকে তাকে আবারও জেলে নেয়া হয়। পরে এক পদস্থ কর্মকর্তার নজরে আসে তার বিষয়টি। তার নির্দেশে তাকে দেশে ফেরার টিকেট দেয়া হয়। অবশেষে ২৬ জানুয়ারি রাতের ফ্লাইটে দুবাই রওনা দেন। ২৭ জানুয়ারি সকালে তিনি বাংলাদেশে পৌঁছান। অবশেষে মঙ্গলবার রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় তিনি মামলা দায়ের করেন প্রতারক ওভারসিজ কোম্পানির বিরুদ্ধে। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি এবং বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টা তাকে আইনী সহযোগিতা দিচ্ছে।
×