ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাতৃভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক স্মরণীয় ঐতিহাসিক ঘটনা। বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র তা শুরু হয়েছিল পাকিস্তান জন্মের আগেই। তদানীন্তন পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেছিল এটা ঐতিহাসিক সত্য। এ সময় পূর্ব বাংলায় রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে যাদের আধিপত্য ছিল তার বেশিরভাগই ছিল হিন্দু জমিদার, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী শ্রেণীর। এ কারণে মুসলমানরা এ সময় মুসলিম জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। এটা ছিল ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। পাকিস্তান জন্মের পর এদের আশা হতাশায় পরিণত হলো। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় পরিম-লে বাঙালীদের তেমন আধিপত্য রইল না। তারা ক্রমেই শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতে লাগল। পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যেই অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়তে লাগল। নানা শোষণ বঞ্চনার শিকার হয়ে তারাই আবার পাকিস্তানের দিক থেকে মুখ ফিরিযে নিল। তখন বাঙালী জাতীয়তাবাদের চেতনায় সঞ্চারিত হতে লাগল। এর পর এল মাতৃভাষা বাংলা ভাষার ওপর আক্রমণ। গর্জে উঠল সমগ্র বাঙালী সমাজ। আজ ৪ ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির ডাকে এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সমর্থনে ঢাকা শহরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। প্রায় ১০ হাজার ছাত্রছাত্রীর অংশগ্রহণে বের করা হয় মিছিল। মিছিলটি প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীনের বাসভবন হয়ে নবাবপুর রোড, পাটুয়াটুলী, আরমানিটোলা, নাজিমুদ্দীন রোডসহ কিছু এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এ সময় ছাত্রছাত্রীরা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এবং ‘আরবী হরফে বাংলা লেখা চলবে না’ বলে সেøাগান দেয়। পর দিন ৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদে ছাপা হয় সংবাদটি। ভাষাসৈনিক অলি আহাদের লেখা থেকে জানা যায়, একই দিন উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বিরাট ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমআর আখতার মুকুলের প্রস্তাবক্রমে যুবলীগ নেতা গাজীউল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেয় অগণিত শিক্ষার্থী। সভায় ইতোপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ কর্তৃক ঘোষিত ও সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক সমর্থিত ২১ ফেব্রুয়ারির হরতাল কর্মসূচী সফল করার অঙ্গীকার করা হয়। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রছাত্রীরা। এভাবে ফেব্রুয়ারির প্রতিটি দিনই হয়ে উঠছিল ঘটনাবহুল। সেই সব দিনের স্মৃতি মনে করে এখনও পুলকিত ও আনন্দিত হন আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট বীররা। অমর একুশের সেই সময়ের ভাষাসৈনিকরা আজ বয়সের ভারে ন্যুব্জ। অনেকেই মারা গেছেন। তবে যারা বেঁচে আছেন, তাদের এখনও সবুজ মন। আগামী প্রজন্মের কাছে তারা নিজেদের কীর্তির কথা তুলে ধরছেন। তরুণ প্রজন্মও তাদের কাছ থেকে শিখছেন কীভাবে ভাষাকে ভালবাসতে হয়। একদিন হয়ত ভাষাসৈনিকরা সবাই চলে যাবেন। তবে বাংলা ভাষা বেঁচে থাকবে শতাব্দীর পর শতাব্দী।
×