ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৯৪৭ সাল। ধর্মের ভিত্তিতে নতুন দেশ। একটি ভারত। অন্যটি পাকিস্তান। বর্তমান বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অংশ। কিন্তু তা কাগজে-কলমে। আদতে পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাস শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের কোন মিল ছিল না। বরং দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল সংশয় সন্দেহ। আর তাই যুগল পথচলার শুরুতেই বিরাট বাধা। পাকিস্তানের শাসকরা রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে উর্দুকে প্রতিষ্ঠার দুরভিসন্ধি নিয়ে এগোতে থাকে। কিন্তু মায়ের ভাষা বাংলা ভুলে নতুন ভাষা শেখার কথা চিন্তাও করতে পারে না বাঙালী। তাদের উপলব্ধি হয়, শুধু ভাষার প্রতি নয়, এ আঘাত বাঙালী সংস্কৃতির ওপর। প্রতিবাদে তাই ফেটে পড়ে তারা। বিশেষ করে ছাত্ররা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হয়। এর পরও দারুণ স্পর্ধা দেখিয়ে চলে গোঁয়ার পাকিস্তানীরা। আজ ৩ ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই দিনে আবারও উর্দু নিয়ে খায়েশের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন। ১০ দিন ধরে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থান সফর করে ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গবর্নমেন্ট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও অখ-তার স্বার্থে একটিমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা পুর্নব্যক্ত করেন তিনি। শুধু তাই নয়, খাজা সাহেব এদিন বেশ কঠোর ছিলেন বলে মনে হয়। তার বক্তব্যটি ছিল এরকম- আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হতে চলেছে, অন্য কোন ভাষা নয়। তবে এটা যথাসময়ে হবে। তিনি বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নাকচ করেন দেন। তবে হুঙ্কারে কোন কাজ হয় না। বরং সংগঠিত হওয়ার তাগিদ বোধ করে বাঙালী। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার নতুন শপথ নেয় তারা। ফেব্রুয়ারি এলে এখনও সেই ভাষা রক্ষার শপথের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করে বাঙালী। নানা অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে ওঠে সারাদেশ। এবারও এর কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। যথারীতি মাসের প্রথম দিন থেকে বাংলা একাডেমি চত্বরে শুরু হয়ে গেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। দ্বিতীয় দিন সোমবার দিনভর মেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন পাঠক-দর্শক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার চত্বরে আয়োজিত কবিতা উৎসবেও ছিল প্রাণপ্রাচুর্য। শত শত কবি মায়ের ভাষায় লেখা কবিতা পড়ে শুনিয়েছেন। একুশের এই মাসে রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। পুরো মাস দেশ জুড়ে চলবে আরও নানা অনুষ্ঠান আয়োজন। প্রতিটি মঞ্চ থেকে প্রকাশিত হবে ভাষার জন্য ভালবাসা।
×