ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নতুন করে আর দ্বিপাক্ষিক সুযোগ থাকছে না

মাশুলের বিনিময়ে ভারতকে ট্রানশিপমেন্ট

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মাশুলের বিনিময়ে ভারতকে ট্রানশিপমেন্ট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে মাশুল গুনেই বাণিজ্যিকভাবেই পণ্য পরিবহন করতে হবে ভারতকে। দ্বিপাক্ষিক নৌ-প্রোটোকলের আওতায় দেশটিকে আরও এক দফা ৩৫ হাজার টন খাদ্যশস্য পরিবহনের অনুমতি দেয়া হলেও এরপর আর এ সুযোগ থাকছে না। সব ধরনের চার্জ ও ফি দিয়েই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ত্রিপুরায় খাদ্যশস্য পরিবহন করতে হবে ভারতকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এর ফলে কার্যত স্থল পথেও স্থায়ী ট্রানশিপমেন্ট পাচ্ছে ভারত। একই সঙ্গে খাদ্যশস্য পরিবহনকারী যানবাহন থেকে সব ধরনের চার্জ ও ফি আদায় করে বাংলাদেশেরও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ব্যবস্থা চালু হলে ফি দিয়েই পণ্য পরিবহন করবে ভারত। যত পণ্য যাবে তত ফি পাবে বাংলাদেশ। তখন আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করে অনুমতি দিতে হবে না। এর আগে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক নৌ-প্রোটোকলের আওতায় ভারতকে মানবিক কারণে ২৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য পরিবহনের সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তার আগেও ভারত ১০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য পরিবহন করে ত্রিপুরায়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এরপর ভারত বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ত্রিপুরাতে পণ্য পরিবহন করতে হলে বাণিজ্যিকভাবে করতে হবে। সব ধরনের চার্জ ও ফি নির্ধারণে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালানোর জন্যও পররাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়। গত ১৩ জানুয়ারির ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধিসহ সভায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহনে মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। সেখানে ভারতের ভেতর দিয়ে যেতে হয় ১,৬৫০ কিলোমিটার পথ। ফলে ব্যয় ও সময় বাঁচানোর জন্য এই ট্রানশিপমেন্টটি ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে ভারতও ট্রানশিপমেন্টটির জন্য আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার সড়কের অবকাঠামো উন্নয়নে এক হাজার ৫৭২ কোটি টাকা আর্থিক অনুদান দিচ্ছে বাংলাদেশকে। দুই লেনে থাকা এ রাস্তাটি ভারতের অনুদানে চার লেন করা হবে। এমনই প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। তাতে রাজি হয়েছে প্রতিবেশী এই দেশ। কারণ দুই লেনের আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কটির অবকাঠামোগত অবস্থা এত ভাল নয়। ট্রানশিপমেন্টের জন্য এটিকে আরও চওড়া ও ভারবাহী ক্ষমতাসম্পন্ন করা প্রয়োজন। ভারত এতে বিনিয়োগ করতে রাজি হয়েছে। সম্প্রতি আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কটি পরিদর্শন করেছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন। আখাউড়া-আশুগঞ্জ সড়কটি চার লেন করার বিষয়ে ট্রানশিপমেন্ট ছাড়াও বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির পণ্য পরিবহন বাড়বে বলে ভারত যুক্তি দিয়েছে। এছাড়া আশুগঞ্জ নৌবন্দরকে কনটেইনার টার্মিনালে (আইসিটি) পরিণত করতে সহজ শর্তে ঋণ দিতেও রাজি হয়েছে ভারত। ট্রানশিপমেন্ট প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ১৯৭২ সালের মূল বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ী কোন স্থল ট্রানশিপমেন্টের সুযোগ ছিল না। কারণ, একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ভূখ- ব্যবহার করতে দেয়ার অনেক রকম ঝুঁকি আছে। এবার যদি বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে স্থল পথে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পায় ভারত তাহলে স্থল পথেও ট্রানশিপমেন্ট পাচ্ছে তারা। তবে সেটা স্থায়ী বলা যাবে না। কারণ, যে কোন চুক্তি যত বছরের জন্যই হোক না কেন যে কোন দেশ ইচ্ছা করলেই বদলাতে পারে। তিনি বলেন, অবকাঠামো নির্মাণসহ নানা ধরনের ফি ও চার্জ যথাযথভাবে দিয়েই শুধু নয় বাংলাদেশকেও একই ধরনের ট্রানশিপমেন্টের সুযোগ ভারতেরও দেয়া উচিত। যদিও ভারতের ভূমি ব্যবহার করে নেপাল বা অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের ব্যবসা করার সুযোগ খুব বেশি নেই। সে দিক দিয়ে এই ট্রানশিপমেন্টে ভারতই বেশি লাভবান হবে উল্লেখ করে এই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক বলেন, আশা করি সকল ধরনের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে এবং সব ধরনের চার্জের বিনিময়েই ভারতকে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে সরকার। এর আগে বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করে ভারতীয় এনজিসির টার্বাইন ও ভারি পণ্যসামগ্রী পরিবহনের অনুমতি পেয়ে ২০১১ সালে ত্রিপুরা রাজ্যের ৭২৬ মেগাওয়াটের পালাটানা বিদ্যুত কেন্দ্রের ভারি ভারি যন্ত্রাংশ বোঝাই ১২০ চাকার ট্রেইলার পরিবহন করে ভারত। এরপর পরিবহন করে ১০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য। তবে সেবার বাংলাদেশের ছোট ছোট ট্রাক ব্যবহার করা হয়। আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্ত পথে ট্রানজিট প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ শুল্কমুক্তভাবে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এসব পণ্য প্রবেশ করে।
×