ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী অর্থায়ন

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

জঙ্গী অর্থায়ন

দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গী সংগঠন বাংলাদেশে সক্রিয় আছে। এর মধ্যে লস্কর-ই-তৈয়বার প্রধান খুররম খৈয়াম বাংলাদেশের জঙ্গীদের সক্রিয় রাখার ব্যাপারে কলকাঠি নাড়ছেন- এ মর্মে পত্রিকায় খবরও এসেছে একাধিকবার। এ ছাড়া সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম আজহারী ওরফে সুফিয়ান, আশরাফ আলী জিহাদ ও মোঃ মনোয়ার আলীসহ অন্তত ১০ জঙ্গী নেতা বাংলাদেশে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন এমন তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে। পাকিস্তানের পেশোয়ারে সম্প্রতি জঙ্গী হামলার পর বাংলাদেশের সব কটি সীমান্ত এলাকা, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কঠোর নজরদারির আওতায় আনার নির্দেশ দেয় সরকার। এতসব সতর্কতা সত্ত্বেও খোদ পাকিস্তানী হাইকমিশনেই চলছে এহেন কাণ্ড। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের। ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাযহার খানকে গত মাসে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আটক করা হলেও হাইকমিশনের তৎপরতায় বনানী থানা থেকে মুক্তি পান তিনি। ওই কর্মকর্তা এ দেশে জঙ্গী সংগঠনের অর্থায়ন, মুদ্রা পাচার, জাল মুদ্রা সরবরাহসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা বাংলাদেশকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ভূ-রাজনীতির কারণেই পাকিস্তানী রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা এতে ইন্ধন দিয়ে আসছে। লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্যরা ভারতীয় জাল রুপীর যে ব্যবসা চালিয়ে আসছে তাতে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রানজিট হিসেবে। প্রায়ই আকাশপথে করাচী থেকে ভারতীয় জাল রুপীর চালান ঢাকায় আসছে। এখান থেকে আবার বাংলাদেশী জাল টাকার ব্যবসায়ী এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবি সদস্যদের মাধ্যমে তা সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে ভারতে। ইতোমধ্যে ভারতীয় জাল রুপীসহ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে গত ৫ বছরে অর্ধশতাধিক পাকিস্তানী গ্রেফতার হয়েছে। পাকিস্তানে জঙ্গীরা এখন অত্যন্ত সক্রিয়। সেখানকার বর্তমান সরকার জঙ্গীদের দমনে সাম্প্রতিককালে কঠোরতার পরিচয় রাখছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে অন্যদেশে তাদের একটি হাইকমিশনে কর্মকর্তা পরিচয়ের আড়ালে খোদ জঙ্গী কর্মকা- চালিয়ে আসাটা পাকিস্তান সরকারের জন্যই বিব্রতকর। অপরপক্ষে এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে পাকিস্তানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গ্রুপের সক্রিয় সদস্যরা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে যাতায়াত করছেন এমন তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এতে সহযোগী ভূমিকা পালন করেন পাকিস্তান হাইকমিশনেরই কিছু কর্মকর্তা। কূটনৈতিক শিষ্টাচার রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময়ই সঙ্গত সন্দেহ যাচাইয়ের জন্য হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের যথাযথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয় না। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে মাযহার খানকে বহিষ্কারের জন্য যে সুপারিশ করা হয়েছে তার চেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আর কিছু হতে পারে না। এছাড়াও ওই প্রতিবেদনে পাকিস্তান থেকে আগতদের ব্যাপারে কড়া নজরদারির যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে সেটাও যুক্তিযুক্ত। তাদের এদেশীয় দোসরদের ভেতর যারাই জঙ্গীবাদী কর্মকা-ে সহায়তা করছে তাদের সবাইকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন হবে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, বিগত এক মাস ধরে আন্দোলনের নামে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট যে সহিংসতা ও নাশকতা চালিয়ে আসছে তা জঙ্গীবাদী কর্মকা-েরই সমতুল্য। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বাংলাদেশকে জঙ্গীবাদের ছায়ার নিচে নিয়ে আসার জন্য এটি তাদের প্রাথমিক মিশন কিনা। এখন খতিয়ে দেখা দরকার জঙ্গী সহায়তাকারী পাকিস্তানী হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বর্তমান নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কোনো যোগসাজশ রয়েছে কিনা। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের কোনো স্থান নেই। যে কোনো মূল্যে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ করতেই হবে।
×