ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২ শতাংশ কাজ সমাপ্ত

পারমাণবিক বিদ্যুতে অগ্রগতি

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পারমাণবিক বিদ্যুতে অগ্রগতি

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ শিল্প কারখানা ও আবাসিক খাতে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পারমাণবিক বিদ্যুতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বহুল আলোচিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের কার্যক্রম চলছে দ্রুতই। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের ২০ শতাংশ ভৌত কাজ শেষ হয়েছে, সেই সঙ্গে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১২ শতাংশ। এমনই তথ্য দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। দেশের অর্থতৈনিক অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এ প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছে সরকারের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত এ সংস্থাটি। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। এ অংশ বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৫ হাজার ৮৭ কোটি ৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে রাশিয়া দিচ্ছে চার হাজার কোটি এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৮৭ কোটি ৯ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের মূল্যায়নের চেয়ে এ প্রকল্পের অগ্রগতি আরও অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্পের পরিচালক ড. শওকত আকবর। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তার সবগুলোই বাস্তবায়ন হয়েছে। কোন ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার বেশি বেশি কাজ হয়েছে। আর্থিক অগ্রগতি ও ভৌত অগ্রগতি এই মুহূর্তে শতাংশে বলা না গেলেও এটুকু বলতে পারি জিইডির যে মূল্যায়ন তার থেকে অনেক বেশি হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ প্রকল্পটির প্রাথমিক কাজ তিন পর্যায়ে করা হচ্ছে। একটি হচ্ছে প্রি-ডিজাইনের কাজ। এ ক্ষেত্রে সাইট মূল্যায়ন অর্থাৎ সাইটের সঙ্গে রাশিয়ার যে কারিগরি সহযোগিতা প্রযুক্তি নেয়া হচ্ছে তার বন্ধন বা সম্পর্ক নির্ণয় করা হচ্ছে। প্রি-ডিজাইনের সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছেÑ মূল ডিজাইনের মাঠ পর্যায়ের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে। এটি করতে মোট ২৪ মাস সময় নেয়া হয়েছে। তৃতীয়ত মূল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের অপরিহার্য নির্মাণ কার্যাদির জন্য যন্ত্রাংশ সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে। এ অংশে মাটি ভরাট ও ভূমি উন্নয়নসহ মোট ৬৩টি কাজ যুক্ত রয়েছে। জিইডির সদস্য ড. শামসুল আলম এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে এ বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সাইট সংশ্লিষ্ট ডিজাইন প্যারামিটার ও টেকনো ইকনোমিক সলিউশন নির্ধারণ, পরিবেশগত ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী বিশ্লেষণ এবং রিপোর্ট তৈরি, পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ডিজাইন-ডকুমেন্টেশন প্রণয়ন ও যাবতীয় পারমাণবিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত দলিলাদি প্রণয়ন, বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রস্তুতিমূলক নির্মাণ কার্যক্রম সম্পাদন করা হচ্ছে, যা ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সূত্র জানায়, দেশের পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য ১৯৬১ সালে পাবনার রূপপুরে জমি অধিগ্রহণ করা হয় এবং পরবর্তীতে সেখানে আবাসিক ভবন, রেস্ট হাউস, সাইট অফিস, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, পাম্প হাউস ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৮-৮৯ সালে সরকার বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য একটি সম্ভাব্যতা জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদন বাংলাদেশের জন্য যথার্থ এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হিসেবে চিহ্নিত হয়। ১৯৮০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় ১২৫ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু অর্থায়নসহ নানা সমস্যার কারণে প্রকল্পটি আর এগোয়নি। পরবর্তীতে ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে এ প্রকল্পের ফলো-আপ স্টাডি করা হয়। এ স্টাডিতেও প্রকল্পটি কারিগরি এবং আর্থিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়। তারপর থেকে ওই অবস্থায়ই পড়ে ছিল প্রকল্পটি। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ নেয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সার্বিক দিক নির্দেশনা প্রদান ও বাস্তবায়ন কার্যাবলী মনিটরিংয়ের জন্য ২০১০ সালের ৯ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন বিষয়ক একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের অর্থায়নের উৎসসমূহ চিহ্নিতকরণ, অর্থায়নে প্রয়োজনীয় শর্তাদি নির্ধারণ, সম্ভাব্য প্রযুক্তি ও সরবরাহকারী চিহ্নিতকরণের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কারিগরি কমিটি এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে ভৌত, কারিগরি ও অন্যান্য বিষয়ে প্রতিবেদন প্রণয়ন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপসহ কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়।
×