ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাঠে ফেরার দিন গুনছে সেই রাকিব

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫

মাঠে ফেরার দিন গুনছে  সেই রাকিব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মনে আছে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় ফুটবল দলের ফুটবলার রাকিব হাসানের কথা? একজন মহৎপ্রাণ, নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া ব্যক্তিত্বের কারণেই আজ সে সুস্থতার পথে। বাঁ পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে পঙ্গু হওয়ার দিকে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলা এক কিশোর আজ আবার নতুন করে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। অপারেশনের পর থেকে নিয়মিত ডাক্তারের দেয়া প্রেসক্রিপশন ও নিয়ম অনুযায়ীই চলছে তার চিকিৎসা। গত ২১ নবেম্বর জনকণ্ঠের খেলার পাতায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘চিকিৎসার অভাবে পঙ্গুপ্রায় রাকিব’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর এটি অনেকেরই নজরে আসে। বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় ইনজুরিগ্রস্ত ফুটবলার রাকিবের চিকিৎসার খরচ দিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক। তিনি রাকিবের চিকিৎসার ব্যাপারে বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। তার সাহায্যেই গত বছরের ৯ ডিসেম্বর দরিদ্র পরিবারের সন্তান রাকিবের অপারেশন হয়। প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয় অপারেশনের জন্য। ‘আগে কথা ছিল ২১ জানুয়ারি ঢাকায় গিয়ে এ্যাপোলো হাসপাতালে ডাঃ প্রশান্ত আগারওয়াল এবং নন্দ কুমারকে দেখাব। পরে হরতাল-অবরোধের কারণে নির্ধারিত তারিখে যেতে পারিনি। ২৪ তারিখে ঢাকা যাই। সেখানে ডাক্তাররা আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তারা বলেছেন আমার পা দ্রুত সেরে উঠছে। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছে। পরে আবারও আরেকবার আমাকে ঢাকা গিয়ে পা পরীক্ষা করাতে বলেছেন তারা। তারা আমাকে আরও বেশি ও নিয়মিতভাবে জিম চালিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।’ রাকিবের কথা। কতক্ষণ জিম করা হয়? ‘একবেলা (সকালে) ১ থেকে সোয়া ১ ঘণ্টা জিম করি সপ্তাহে ৫ দিন।’ ডাক্তারের ভাষ্য অনুযায়ী, এভাবে সব ঠিকঠাক চললে রাকিবকে আগামী মার্চেই মাঠে দেখা যাবে। তখন বল নিয়ে হাল্কা অনুশীলন করতে পারবে সে। আর এপ্রিলে খেলতে পারবে ফুটবল ম্যাচ। তবে বল নিয়ে হাল্কা অনুশীলন করার আগে ব্যায়াম করার হার আরও বাড়াতে হবে তাকে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাকিবের এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার সময় কি ব্যায়াম করার সময়-সুযোগ পাওয়া যাবে? ‘পরীক্ষা নিয়েও ব্যস্ত থাকলেও আমি সময় বের করে ব্যায়ামটা ঠিকই চালিয়ে যেতে পারব। সেক্ষেত্রে সকালে পরীক্ষা থাকলে বিকেলে এক্সারসাইজ এবং বিকেল পরীক্ষা থাকলে সকালে এক্সারসাইজ করব।’ রাকিবের আশাবাদ। যার কল্যাণে রাকিব অপারেশন করার টাকা পেল, সেই মহৎপ্রাণ ব্যক্তির সঙ্গে প্রায়ই ফোনে কথা হয় তার, ‘স্যারকে চিনি। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। ফোনে তার সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়। আমাকে উৎসাহ দেন। এখনও দেখা করা হয়নি তার সঙ্গে। আসলে তিনিও তার কাজ নিয়ে অসম্ভব ব্যস্ত, আর আমি থাকি সাভারে। তবে একদিন অবশ্যই তার সঙ্গে দেখা করব।’ অপারেশন হওয়ার পর রাকিবের মানসিক অবস্থাটা এখন কেমন? ‘আগে স্বপ্ন ছিল একজন ভাল ফুটবলার হব। কিন্তু ইনজুরিতে পড়ার পর সেই স্বপ্নটা বলতে গেলে ভেঙ্গেই গিয়েছিল। কিন্তু এখন অপারেশন করার পর স্বপ্নটা আবারও বেঁচে উঠেছে। মনের জোর আবারও ফিরে এসেছে। সর্বাত্মক চেষ্টা করব ভাল ফুটবলার হতে। এখানে বিকেএসপিতে সবাই আমাকে অনেক সাহস জোগান। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’ ২০১৩ সালে কোরবানির ঈদের পর বিকেএসপির মাঠে একটি অনুশীলন ম্যাচ খেলতে গিয়ে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের সঙ্গে সংঘর্ষে বাঁ পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় লেফটব্যাক পজিশনে খেলা বগুড়ার এক দরিদ্র সবজি বিক্রেতার ছেলে রাকিবের। অপারেশন না করার ফলে তার চোটের অবস্থা প্রকট আকার ধারণ করায় ক্যারিয়ার হয়ে পড়ে সঙ্কটাপন্ন। এখন অপারেশনের জন্য কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু গরিব বাবা-মায়ের সামর্থ্য নেই এই টাকা জোগাড়ের। উপয়ান্তর না দেখে রাকিব শরণাপন্ন হয় বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টাস ফোরামের। তাদের কাছ থেকেই বিষয়টি জেনে রাকিবকে নিয়ে বিশেষ রিপোর্ট করে জনকণ্ঠ। ২০১১ সালে রাকিব ভর্তি হয় সাভারে বিকেএসপিতে। এরপর ২০১৩ সালে বগুড়া ফুটবল লীগের ১টি ম্যাচে (ফাইনাল) খেলা। অনুর্ধ-১৬ জাতীয় দলে ডাক পাওয়া ওই বছরই। সেবারই বয়সিভিত্তিক সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে যায় নেপালে। বাংলাদেশ সেমি পর্যন্ত খেলে। সে আসরে দলের ৪ ম্যাচের ৩টিতেই খেলে রাকিব।
×