ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর খাদ্য নিরাপদ আইন, শাস্তি ৫ বছর জেল

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৯ জানুয়ারি ২০১৫

ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর খাদ্য নিরাপদ আইন, শাস্তি ৫ বছর জেল

তপন বিশ্বাস ॥ অবশেষে খাদ্য নিরাপদ আইন কার্যকর হতে যাচ্ছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হচ্ছে আইনটি। মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। খাদ্য সচিব মুশফেকা ইকফাত্ স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নিরাপদ খাদ্য আইনের ১ (২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আইনটি কার্যকরের তারিখ নির্ধারণ করল। আজ বৃহস্পতিবার এ লক্ষ্যে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেবেন বলেন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ আইনে অপরাধভেদে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদ- বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া সর্বনিম্ন ছয় মাসের কারাদ- কিংবা ১ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদ- বা ২০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ের বিধান এবং সর্বনিম্ন এক বছর কারাদ- বা ৪ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। সূত্র জানায়, নিরাপদ খাদ্য আইনে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অথবা বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক দ্রব্য বা তার উপাদান কিংবা বস্তু যেমন ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন, সোডিয়াম সাইক্লোমেট, কীটনাশক বা বালাইনাশক, সুগন্ধি ইত্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভেজাল, নিম্নমান, মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য বা উপকরণ বিক্রির উদ্দেশ্যে উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ বা বিক্রি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এছাড়া রোগাক্রান্ত ও পচা মাছ, রোগাক্রান্ত ও মৃত পশু-পাখির মাংস, নষ্ট ডিম বা দুধ দ্বারা কোন খাদ্যদ্রব্য কিংবা খাদ্যোপকরণ প্রস্তুত, সংরক্ষণ বা বিক্রিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি আইনে অ-আমলযোগ্য অপরাধ করলে তা সংশোধনে ৩০ দিনের সময় দেয়া হবে। এ নির্দেশ পালনে কোন ব্যক্তি ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রশাসনিক জরিমানা আরোপের বিধান রাখা হয়েছে। তবে আমলযোগ্য অপরাধ হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপযুক্ত আদালতে মামলা করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন। বিধিমালা অনুযায়ী ভেজাল খাদ্য জব্দ করবেন পরিদর্শক বা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত কর্মকর্তা আর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবেন কর্তৃপক্ষ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এক্ষেত্রে পরিদর্শক নিয়োগ ও দায়িত্ব প্রদানের এখতিয়ার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর নিরাপদ খাদ্য আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। এরপর বিধিমালা না হওয়ায় দীর্ঘদিন আটকে থাকে এ আইনের প্রয়োগ। প্রায় এক বছর পর ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিরাপদ খাদ্য (খাদ্যদ্রব্য জব্দকরণ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ পদ্ধতি) বিধিমালা-২০১৪ গেজেট আকারে প্রকাশ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, নিরাপদ খাদ্য আইনের অধীনে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য পদে তিনজনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বিগত ২১ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. ইকবাল রউফ মামুন ও অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মালেককে চার বছর মেয়াদে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের সাবেক সদস্য মাজেদা বেগমের অবসর উত্তর ছুটি বাতিল করে চার বছরের জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। এ কর্তৃপক্ষ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য জোগান নিশ্চিত করতে খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, বিতরণ, বিপণন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও পরিবীক্ষণ করবে। ভেজাল খাদ্যে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার পক্ষে আদালতে মামলা করবে কর্তৃপক্ষ। এ আইনের অধীনে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে। দেশে খাদ্যে ভেজাল মারাত্মক রূপ নেয়। ফল-মূল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, জুস, শিশুখাদ্যসহ প্রায় সব খাদ্যে ভেজাল বেড়ে যায়। দিন দিন খাদ্যে ভেজাল বাড়তে থাকে। এর প্রভাবও পড়তে থাকে জনস্বাস্থ্যে। কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন কঠোর রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর বিরুদ্ধে মিডিয়াও সোচ্চার ভূমিকা রাখে। একের পর এক দাবির প্রেক্ষিতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে থাকে। একপর্যায়ে শিশু খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে একটি আইনও জাতীয় সংসদে পাস করা হয়। কিন্তু সর্বস্তরে ভেজাল হওয়ায় সরকার উদ্যোগ নেয় নিরাপদ খাদ্য আইন করা। ২০১৩ সালের শেষ দিকে আইনটি পাসও করা হয়। কিন্তু পাস করার পর দীর্ঘদিন তা বাস্তবায়ন করা হয় না। এ নিয়ে আইন আদালতও হয়েছে। আদালতও এটি দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে। অবশেষে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হতে যাচ্ছে।
×