সংসদ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সের দেয়া নোটের কঠোর সমালোচনা করেছেন সংসদ সদস্যরা। তাঁদের অভিযোগ, বিএনপি-জামায়াত জোট যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। এ সব লবিস্টের মাধ্যমে শুধু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে বিতর্কিত করা নয়, দেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু পৃথিবী এখন আর আগের অবস্থায় নেই, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলা বাংলাদেশও আগের অবস্থায় নেই। বাংলাদেশ এখন আগের মতো বিশ্ব মোড়লদের ধমক খাওয়ার অবস্থায় নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সের দেয়া নোটের তীব্র প্রতিবাদ জানানোর দাবি জানান তাঁরা।
মঙ্গলবার স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর অধিবেশন শুরু হলে এ বিতর্কের সূত্রপাত করেন জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল। অনির্ধারিত এ বিতর্কে অংশ নিয়ে বিএনএফের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে গুলশান থেকে বিএনপির চেয়ারপার্সনের দলীয় কার্যালয় উচ্ছেদের দাবি জানান।
বিতর্কের সূত্রপাত করে মইনউদ্দীন খান বাদল বলেন, সাম্রাজ্য হারিয়ে এখনও সাম্রাজ্যবাদী আচরণ করছে অনেক দেশ। বাংলাদেশকে নিয়ে ‘সুইপিং কমেন্ট’ করেছে ব্রিটিশ হাউজ অব কমনস। এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ করা উচিত। তিনি বলেন, পৃথিবীর আজ আর আগের জায়গায় নেই, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশও এখন আগের অবস্থানে নেই। বাঙালি জাতি এখন আর দু’মুঠো খাবার জন্য কারোর কাছে হাত পাতে না। যে দেশ অপরের কাছে খাদ্যের জন্য হাত পাতে না, তাদের মেরুদ- সব সময় সোজা থাকে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী বিচার হবে, ট্রাইব্যুনাল হবে। কীসের ওপর ভিত্তি করে হাউস অব কমন্স যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন? অন্যের বিষয়ে কেন নাক গলাচ্ছেন?
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যসহ উনার মিত্ররা গণতন্ত্রের ছবক শেখাতে যে দেশেই গেছেন সেই দেশকে শেষ করে দিয়েছেন। অন্য দেশ নিয়ে কথা বলার আগে তাদের আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখা উচিত। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন! ফ্রান্স, বেলজিয়াম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকা-ের কারণে জড়িতদের হত্যা করা হচ্ছে। সে বিষয়ে তারা কোন কথা বলেন না। আন্দোলনের নামে জঙ্গী কায়দায় সন্ত্রাসীরা যখন আমাদের মা-বোনকে পুড়িয়ে মারবেন, ফিসপ্লেট তুলে গোটা রেলকে ফেলে দিয়ে নাশকতা চালাচ্ছেনÑ তখন কী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা দেখে শেক্সপিয়ারের কবিতা পাঠ করবেন? আমাদের দাবিÑ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যথাযথভাবে দেখতে হবে, আমরা ধমক খাওয়ার মতো অবস্থান করছি না।
একই ইস্যুতে সরকারী দলের সংসদ সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট বিদেশে শত শত কোটি টাকা খরচ করছে দেশের গণতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্র করছে। সাংবিধানিক অপরিহার্যতা থেকেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়েছে। ৫ নির্বাচন না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা আসতো, অনির্বাচিত অসাংবিধানিক সরকার আসতো। তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিএনপির নৈতিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু না এসে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, দেশের অর্থ-সম্পদ ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, হাউস অব কমন্স বলেছে নির্বাচন ঠিক হয়েছে, তবে অনৈতিক হয়েছে। জবাবে তিনি বলেন, কেউ নির্বাচনে না এলে ওই নির্বাচন কখনই অবৈধ হয় না। নির্বাচনে বিএনপি না এসে ‘ব্লান্ডার’ করেছে।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনগণের গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে কোটি কোটি টাকা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে অবৈধ প্রমাণের চেষ্টা করছে। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পূর্ণ বৈধ ও সাংবিধানিক। নির্বাচনে না আসা বিএনপির ভুলের খেসারত দেশের মানুষ দিতে পারে না। যারা নির্বাচনে না এসে এখন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছেন, একদিন ইতিহাসের কাছে তাদের জবাব দিতেই হবে।
সরকারী দলের আবু জাহির বলেন, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার নীলনক্সা থেকেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করেছিল। আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি, মমতাজ উদ্দিনকে হত্যার ধারাবাহিকতা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল, ২১ নেতাকর্মীর প্রাণ ঝরে গিয়েছিল। তিনি বলেন, প্রতিটি ঘটনার মতো শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলাটি নিয়েও জজ মিয়ার নাটকের মতো আওয়ামী লীগের কাঁধে চাপানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এখন সুষ্ঠু তদন্তে প্রকৃত হত্যাকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। আমরা অচিরেই খুনীদের কঠোর শাস্তি হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিএনএফ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের মধ্যে গুলশান মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ অবস্থিত। গত একটি মাস ধরে ওই স্কুলে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। যে দলের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদ, সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়, সম্পদ নষ্ট করা হয়- এখনও ওই বাড়িতে কেন অপারেশন চালানো হলো না? আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে গুলশান থেকে বিএনপির কার্যালয়টি প্রত্যাহার করে নিতে হবে।