ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গুয়ানতানামোর বন্দী সালেহির মর্মস্পর্শী স্মৃতিকথা

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২৮ জানুয়ারি ২০১৫

গুয়ানতানামোর বন্দী সালেহির মর্মস্পর্শী স্মৃতিকথা

মোহাম্মদ উলাদ সালেহি। গুয়ানতানামো বে’র সামরিক কারাগারে ২০০২ সাল থেকে বন্দী। সেখানে তার কাছ থেকে তথ্য আদায়ের জন্য জিজ্ঞাসাবাদের তীব্র যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতি নিয়ে তিনি ‘গুয়ানতানামো ডায়রি’ নামে একটি স্মৃতিকথা লিখেছেন। ৭ বছরব্যাপী আইনী লড়াই এবং সামরিক সেন্সরের ব্যাপক সম্পাদনার পর বইটি প্রকাশিত হয়। বইটির ছত্রে ছত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসবাদ থেকে নিরাপদ রাখার সরকারের কিছু দুঃখজনক অযোগ্যতার বিষয় ফুটে উঠেছে। বইটির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো ২০০৩-এ কয়েক মাস স্থায়ী এক ‘বিশেষ জিজ্ঞাসাবাদে’ তার ওপর যে অকথ্য নির্যাতন চালানো হয় তার বিবরণ। এই জিজ্ঞাসাবাদের পর্বটি তৎকালীন প্রতিরক্ষমন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড ব্যক্তিগতভাবে অনুমোদন করেন। সালেহীর বিবরণী বেশকিছু সরকারী তদন্তে সমর্থিত হয়েছে। তার ওপর চালানো নির্যাতনের মধ্যে ছিল দীর্ঘ সময় ঘুমাতে না দেয়া, প্রচ- শব্দে গান বাজানো, হিমশীতল সেলে দিনের পর দিন গায়ে বেড়ি দিয়ে রাখা, বরফ পানিতে চুবানো, প্রহার করা এবং হুমকি দেয়া যে, তাকে গায়েব করে ফেলা হবে এবং তার মাকে গ্রেফতার করে গণধর্ষণ করা হবে। সালেহী বর্ণনা করেছেন তার ওপর চালানো বর্বর আচরণ থেকে রেহাই পেতে তিনি শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে সিদ্ধান্ত নেন যে, জিজ্ঞাসাবাদকারীরা যা তার কাছ থেকে শুনতে চায় বলে তিনি মনে করেন তিনি তাই বলবেন। তিনি বানানো ঘটনা বলবেন এবং অন্যদের অস্তিত্বহীন অপরাধে জড়িত করবেন। কয়েকজন জিজ্ঞাসাবাদকারী অবশ্য তার স্বীকারোক্তিতে সন্দেহ প্রকাশ করে তাকে মিথ্যা শনাক্ত করার পরীক্ষা দিতে বলেন। সালেহী সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্র করা কিংবা আলকায়েদাকে সমর্থনে অভিযোগ অস্বীকার করেন। ওই পরীক্ষার ফলাফলে বিভিন্নভাবে ‘প্রতারণা নেই’, কিংবা মতামত নেই- এভাবে বলা হয়। তাতে তার মনগড়া স্বীকারোক্তির দুর্বলতা ধরা পড়ে। মৌরিতানিয়ায় জন্মগ্রহণকারী সালেহী ওসামা বিন লাদেনের পাশাপাশি আফগানিস্তানের কম্যুনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ১৯৯০ তে আলকায়েদায় যোগ দেন। তার একজন জ্ঞাতি ভ্রাতা ও ভগ্নিগতি বিন লাদেনের সহযোগী ছিলেন। জার্মানিতে একবার সালেহীর সঙ্গে পরবর্তী সময়ে ৯/১১’র হামলার এক পরিকল্পনাকারী রামজি বিন আল-সিব-এর সাক্ষাত হয়। এই সূত্র ধরে মার্কিন সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, সালেহী একটি সময় আলকায়েদার ‘সিনিয়র নিয়োগকারী’ ছিলেন। তাকে গুয়ানতানামোর সবচেয়ে বিপজ্জনক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। তবে তার বিরুদ্ধে কখনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়নি। সালেহীর স্মৃতিকথার মনোযোগ কেড়ে নেয়া ও বিস্ময়কর একটি অংশ হলো যখন কোন নতুন জিজ্ঞাসাবাদকারীকে তাকে জেরা করার জন্য নিয়োগ করা হয়। তাকে বার বার একই প্রশ্ন করা হয় এবং তিনি বছরের পর বছর একই জবাব দিয়ে যান। ২০১০ এ সালেহীর হেবিয়াস আবেদন পর্যালোচনাকারী ফেডারেল বিচারক হেমস রবার্টসন সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, সরকারের সাক্ষ্যপ্রমাণ এত দুর্বল এবং ভয়ভীতি দেখিয়েও দুর্ব্যবহার করে কালিমালিপ্ত করা হয়েছে, এত শ্রেণীকরণ করা হয়েছে যে, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা যায় না। ২০১০ এ সালেহীর হেবিয়াস আবেদন পর্যালোচনাকারী ফেডারেল বিচারক হেমস রবার্টসন সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, সরকারের সাক্ষ্যপ্রমাণ এত দুর্বল যে, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা যায় না। বিচারক বলেন, সরকারের এই ভয়, একবার মুক্ত হলে তিনি আবার আলকায়েদায় যোগ দেবেন এটির সত্যতা থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু এ ধরনের উদ্বেগ তার অব্যাহত কারাবন্দিত্বকে যুক্তিসম্মত প্রতিপন্ন করে না। বিচারক তার মুক্তির আদেশ দেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা গুয়ানতানামো বন্ধের অঙ্গীকার করলেও তার প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জে করে। একটি আপীল আদালত তার মুক্তির আদেশ নাকচ করে দেয়। ৪৪ বছর বয়সী সালেহী গুয়ানতানামোতে অনিশ্চিত অবস্থায় থেকে যান, সেখানে তাকে বিনা বিচারে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয়েছে।-ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস।
×