ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বুটজোড়া তুলে রাখলেন রিকুয়েলমে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫

বুটজোড়া তুলে রাখলেন রিকুয়েলমে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর ফুটবল খেলব না। এখন থেকে আমি শুধুই ফুটবলের দর্শক।’ সব ধরনের ফুটবল থেকে সোমবার অবসরের ঘোষণা দিয়ে কথাগুলো বলেছেন আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি তারকা মিডফিল্ডার জুয়ান রোমান রিকুয়েলমে। অভিমানে জাতীয় দল থেকে ২০০৮ সালে অবসর নিলেও স্বদেশী ক্লাব বোকা জুনিয়র্সের হয়ে খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। অবশেষে ৩৬ বছর বয়সী রিকুয়েলমে বুটজোড়া পাকাপাকিভাবে তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাক্ষাতকারে অবসর প্রসঙ্গে রিকুয়েলমে বলেন, আমার ক্যারিয়ার নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। আমি সবসময় ফুটবলকে উপভোগের চেষ্টা করেছি। আশা করছি আমার সঙ্গে আমার ভক্তরাও উপভোগ করেছে। নিজের কিছু ভাল সময় কাটানোর চেষ্টা সবসময়ই করেছি। বোকা জুনিয়র্স, আর্জেন্টিনা, ভিয়রিয়াল, বার্সিলোনার তরুণ দল এবং মূল দলের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে সর্বাত্মক দেয়ার চেষ্টা করেছি। ফুটবল ছেড়ে কি করতে চাচ্ছেন এ প্রশ্নের জবাবে রিকুয়েলমে বলেন, ফুটবল থেকে বিদায় নিলেও তা আমার মনের কোনে পড়ে থাকবে। ছেলেমেয়ে আর পরিবারকে সময় দিয়ে আমি আমার অবসর জীবন অতিবাহিত করতে চাই। এখন থেকে আমার ফুটবলীয় জীবন শেষ হয়ে গেল। শুরু হলো নতুন জীবন। অভিমানে জাতীয় দল আর্জেন্টিনা থেকে আগেই অবসর নেয়া এ তারকা তিনটি ভিন্ন মেয়াদে বোকা জুনিয়র্সের হয়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন। ক্যারিয়ারের শেষ সময় আর্জেন্টিনাস জুনিয়র্সের হয়ে খেলেছেন ১৫ ম্যাচ। বোকা জুনিয়র্সের হয়ে রিকুয়েলমে পাঁচটি লীগ শিরোপা ছাড়াও তিনটি কোপা লিবারেটেডোরেসের শিরোপা জিতেছেন। ভিয়ারেলের হয়ে দুইবার ইন্টারটোটো কাপ জিতেছেন। চারবার তিনি আর্জেন্টিনার বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব জয় করেন। এর মধ্যে ২০০০ সালে প্রথমবার ও ২০১১ সালে শেষবার তিনি সেরা হন। আর্জেন্টাইন সাবেক এ তারকা জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ১৯৯৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ৫১ ম্যাচ। গোল করেছেন ১৭টি। ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বার্সিলোনার হয়ে ৩০ ম্যাচে গোল করেন ৩টি। ভিলারিয়ালের হয়ে খেলেছেন ১০০ ম্যাচ। আর দুই ধাপে বোকা জুনিয়র্সের হয়ে খেলেছেন ৩১৬ ম্যাচ। জীবন্ত কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনার বদৌলতে ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর আর কোন বড় আসরে সাফল্য পায়নি আর্জেন্টিনা। বর্তমান প্রজন্মের কাছে ম্যারাডোনা ঈশ্বরতুল্য হলেও তার শিষ্যরা জাতীয় দলকে সাফল্যের জোয়ারে ভাসাতে পারেননি। ৮৬’র পর গত দুই যুগেরও বেশি সময় আর্জেন্টিনার বড় সাফল্য বলতে ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিক ফুটবলে স্বর্ণ জয়। সেই স্বর্ণ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন মিডফিল্ডার জুয়ান রোমান রিকুয়েলমে। অলিম্পিকের শিরোপা জয় করায় সঙ্গতকারণেই মনে লালন করছিলেন ২০১০ সালের বিশ্বকাপকে। কিন্তু আর্জেন্টিনার ফুটবলে ম্যারাডোনা কোচ হয়ে আসার পর রিকুয়েলমের ইচ্ছেটা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এর কারণ ফুটবল ঈশ্বরের সঙ্গে তার বিবাদে জড়ানো। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের জন্য আর্জেন্টিনার ৩০ সদস্যের দলে ছিলেন বোকা জুনিয়র্সের এই প্লেমেকার। কিন্তু এরপরই ম্যারাডোনার সঙ্গে তার ব্যক্তিত্বের সংঘাত সৃষ্টি হয়। যে কারণে ক্ষোভ আর অভিমানে ম্যারাডোনার অনুরোধ সত্ত্বেও বিশ্বকাপ খেলতে আসেননি। শুধু তাই নয় তিনি ঘোষণা দিয়ে বসেন, ম্যারাডোনা যতদিন আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে থাকবেন ততদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন না। শেষ পর্যন্ত রিকুয়েলমের জেদই জয়ী হয়। ম্যারাডোনার অধীনে তিনি ফুটবল খেলেননি। তবে বিশ্বকাপের পর কোচিং স্টাফদের নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ম্যারাডোনার পদচ্যুতি হওয়ার পর আবারও আর্জেন্টিনার হয়ে মাঠে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল রিকুয়েলমের। তবে শেষ পর্যন্ত অবসর ভেঙ্গে ফেরার সম্ভাবনা আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। খেলে গেছেন ক্লাব দলের হয়ে। এখন সব ধরনের ফুটবলকেই বিদায় বললেন সাবেক আর্জেন্টাইন তারকা।
×