ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সহিংসতা দমনের তাগিদ বিদেশী কূটনীতিকদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

সহিংসতা দমনের তাগিদ বিদেশী কূটনীতিকদের

তৌহিদুর রহমান ॥ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা কঠোরভাবে দমনের জন্য সরকারের প্রতি তাগাদা দিয়েছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। তারা বলেছেন, বিরোধী পক্ষের আন্দোলনের অধিকার থাকলেও কোন ধরনের সহিংসতা করার অধিকার নেই। গণতন্ত্রে সন্ত্রাস ও সহিংসতার কোন স্থানও নেই। তাই যে কোন ধরনের সহিংসতা সরকারকে কঠোর হাতে দমন করা প্রয়োজন। সরকারের সঙ্গে চার দফায় বৈঠকে বিদেশী কূটনীতিকরা এমন অভিমত প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে সরকারের ইতোমধ্যেই কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। সেসব বৈঠকে কূটনীতিকরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সহিংসতা, জ্বালাও, পোড়াও চলছে, সেটা যেন সরকার কঠোর হাতে দমন করে। সাধারণ জনগণের জীবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সূত্র জানায়, বিএনপির ডাকা চলমান অবরোধের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই চার দফায় ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এসব বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সরকারের সঙ্গে বিদেশী কূটনীতিকদের নিয়ে প্রথম দফায় ঢাকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়। অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, কানাডা, ব্রাজিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠক হয়। তৃতীয় দফায় সার্ক ও আসিয়ান দেশের প্রতিনিধি ও চতুর্থ দফায় ওআইসি ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। গত ১৪ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কূটনীতিকদের সঙ্গে সরকারের চার দফার বৈঠকে তারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা দমনের পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, সরকার বিরোধী পক্ষের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। তবে সেই আন্দোলন যেন কোন ধরনের সহিংসতায় যেন না পৌঁছে। একই সঙ্গে গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ দেয়ার জন্যও আহ্বান জানান তারা। সরকারের সঙ্গে বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় বিভিন্ন স্থানে মৃত্যু, শতাধিক হতাহত ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে রংপুরে বাসযাত্রীদের ওপর ভয়াবহ হামলার বিষয়ে ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন ঢাকার ইউরোপীয় মিশন প্রধানরা। এদিকে কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপানের কূটনীতিকরা দেশের চলমান সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, সহিংস কর্মকা- চালিয়ে গণতন্ত্র শক্তিশালী করা যায় না। ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে বলা হয়েছে, এছাড়া ঢাকার অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশন থেকে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক বলেছেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে আমি তীব্র নিন্দা জানাই। শান্তিপূর্ণভাবে এই সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। তিনি শান্তিপূর্ণ উপায়ে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের আহ্বানও জানিয়েছেন। চলমান অবরোধে সহিংসতায় জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধের আহ্বানও জানিয়েছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। তারা বলেছেন, যেসব রাজনৈতিক দল নিরীহ মানুষ হত্যা করে, গাড়িতে আগুন দেয়, সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করছে, তাদের দ্রুত নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ওআইসির অন্যতম প্রধান সদস্য দেশ মিসর ও ফিলিস্তিনের কূটনীতিকরা সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানান। বিএনপির ডাকা আন্দোলনের সহিংসতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও নিন্দা জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন চলমান সহিংস ঘটনায় প্রাণহানিতে দুঃখপ্রকাশ ও তদন্ত করে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া সহিংসতার অবসান ঘটাতে গিবসন সকল দলের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানান। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। সকল রাজনৈতিক দলকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোরও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে সহিংস পরিস্থিতি চলছে তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, সকল রাজনৈতিক দলকেই জনগণের অবাধ চলাফেরা, সমাবেশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সূত্র জানায়, কূটনীতিকদের সঙ্গে সরকারের চার দফা বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের অবহিত করা হয়, আন্দোলনের নামে বিএনপি সারাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। সাধারণ মানুষের চলাফেরার অধিকারও বিঘিœত করছে তারা। দেশের অর্থনীতিরও ক্ষতি করছে বিএনপি। সারাদেশে বিএনপির সহিংসতার বিভিন্ন চিত্রও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে, সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট রয়েছে। দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের টেলিফোন আলাপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের বিবৃতি নিয়েও কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়। এই দুটি ঘটনায় পুরোপুরি মিথ্যা বলেও তাদের অবহিত করা হয়।
×