ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বোমাতঙ্ক নিয়ে আর কতকাল- শেষ চায় মানুষ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

বোমাতঙ্ক নিয়ে আর কতকাল- শেষ চায় মানুষ

সমুদ্র হক ॥ সাধারণের মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ‘আর কত! অনেক তো হলো। এরপর কী!’ দেশের প্রত্যেক মানুষ আতঙ্ক অস্থিরতা আশঙ্কার দিন শেষে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে টিভির সর্বশেষ সংবাদ দেখতে ও শুনতে গিয়েই হোঁচট খায়। দেশজুড়ে অবরোধের মধ্যেই প্রতিদিন কয়েকটি জেলায় হরতালের ঘোষণা দেয়া হয়। তারপরও সকালে লোকজন ঘুম থেকে ওঠে আশা করে সুপ্রভাতে কোন সুসংবাদের। আশা ব্যর্থ হয়। সংবাদপত্র পাঠ করে, টিভির খবর ও ব্রেকিং নিউজ শুনে হতাশার মধ্যেই দিন শুরু করে। সাধারণের বাহন সড়ক পথের বাস-কোচ দিনে চলছে না। রেলগাড়ি চলে তবে কোন সিডিউল নেই। কোন্ ট্রেন কখন ছাড়ছে, গন্তব্যে পৌঁছুচ্ছেÑ তার ঠিক নেই। এ সব ট্রেনের ভেতরে উঠা লোকারণ্যে যুদ্ধ জয়েরই মতো। আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর বৈশিষ্ট্য আর নেই। আসন নম্বর দিয়ে টিকেট বিক্রি হয় ঠিকই তবে সেই আসনে বসা আরও কঠিন। স্টেশনে ট্রেন থামার সঙ্গে সঙ্গেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাত্রী। কে কার আগে উঠে সিট দখলে নিতে পারে সেই প্রতিযোগিতা। আন্তঃনগর, মেল, লোকাল ট্রেন সবই এক পাল্লায়। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে যত প্যাসেঞ্জার তার এক-চতুর্থাংশ কামরায় উঠে। বাকিদের কিছু ছাদে। অনেকের ভাগ্যে ট্রেনে উঠাও হয় না। রাতে সড়কপথে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা কিছু বাস চলে। এ সব বাসে যাত্রীদের জীবন থাকে হাতের মুঠোয়। এমনকি ঢাকা মহানগরীর বাসও নিরাপদ নয়। ট্রাকের চালক ও হেলপারের অবস্থা আরও কঠিন। কোন্ ট্রাকে পেট্রোলবোমা পড়বে তা কেউ জানে না। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোলবোমায় কয়েক চালক ও হেলপারের দেহ ঝলসে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দেশের প্রতিটি এলাকার লাখো মানুষ এক অসহনীয় অবস্থার মধ্যে দিনগুজরান করছে। অতি জরুরী প্রয়োজনে অনেকেই এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রওনা হচ্ছে। খরচ খুব বেশি। একজনের যাত্রীভাড়া যেখানে দূরত্ব ভেদে ৪শ’ থেকে ৬শ’ টাকা (সর্বোচ্চ), সেখানে গুনতে হচ্ছে ৭ থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত। ভাবা যায়! তারপর এখানেও ভীতি। মানুষের উপায় নেই। ছুটতেই হচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী অফিসে কোন কাজই ঠিকমতো হচ্ছে না। কুরিয়ার সার্ভিস ঠিকমতো চালু না থাকায় জরুরী ডকুমেন্ট নির্দিষ্ট স্থানে যাচ্ছে না; পৌঁছতেও পারছে না। এতে যে কত বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে, তা ভুক্তভোগীরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। সরকারী-বেসরকারী সামাজিক পারিবারিক কত ধরনের আয়োজন যে প- হয়েছে, বাতিল হয়েছে এবং হচ্ছে তার হিসাব নেই। রোগীরা পড়েছে বিপদে। জরুরী চিকিৎসার জন্য রাজধানীমুখী হতে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হচ্ছে গরিব রোগীদের। এর মধ্যে কত রোগী যে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে সেই হিসাবও নেই। স্বজনদের মৃত্যু সংবাদ সেলফোনে শুনে এখন শুধুই চোখের জলে সীমাবদ্ধ। শেষ দেখারও সুযোগ নেই। কৃষক পণ্য মূল্য পাচ্ছেন না। শ্রমিক দিনমজুরের ঘরে খাবার টান পড়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারে সবচেয়ে কঠিন অবস্থা। যারপরনাই নাজেহাল অবস্থায় এরা না পারছে বলতে, না পারছে সইতে! শিক্ষার্থীদের বিদ্যায় ধস নেমেছে। পাবলিক পরীক্ষার পরীক্ষার্থীরা দারুণ শঙ্কায়। আর কয়েক দিন পর মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু। কোমলমতি শিশুরা শঙ্কায়Ñ সময়মতো এবং ঠিকমতো পরীক্ষা হবে তো! সব কিছুর পর একটাই প্রশ্নÑ আর কত! এরপর কী...।
×