ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘বোম মারলি চোখ-মুখ তো বাঁচবে’

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫

‘বোম মারলি চোখ-মুখ তো বাঁচবে’

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ ‘পেটের টানে রিকশা চালাই। বাড়িতে অসুস্থ মা। বউ-বাচ্চা আছে। পরিবার টানতি হয়। কাজ না করলি খাব কী। আর কাজ করতি হলি তো আগে বাঁচতি হবে। তাই এক ভাইয়ার কাছে চাইয়ে হেলমেট মাথায় দিয়ে রিকশা চালাচ্ছি। বোম মারলি চোখ-মুখ তো বাঁচবে...।’ রিকশাচালক ফখরুল কথাগুলো বলছিলেন। বাগেরহাটের হরিণখানা এলাকায় তাঁর সঙ্গে দেখা। জামায়াত-বিএনপির টানা অবরোধের নামে নাশকতা, বোমাবাজি, সহিংসতার মধ্যে তাকে জীবিকার প্রয়োজনে রিকশা চালাতে হচ্ছে। কিন্তু আর দশজনের মতো তিনিও আতঙ্কিত। তাই তো নিজেকে রক্ষার চেষ্টা হিসেবে হেলমেট মাথায় দিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন। দেশজুড়ে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতায় আতঙ্ক কাটছে না জনমনে। শঙ্কিত মানুষ যে যার মতো নিজেকে রক্ষার নানা প্রকার চেষ্টা করছে। রিকশাচালক ফখরুলের এমন চেষ্টায় কিশোর, তরুণরা কোতূহল বোধ করে। বয়স্কদেরও দৃষ্টি কাড়ে। টানা অবরোধের প্রভাব পড়ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাপনে। ক্ষমতায় যাওয়ার দ্বন্দ্বে খেটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষগুলো পড়েছে চরম বিপাকে। নাশকতা কিংবা নানা শঙ্কা থাকলেও জীবনের প্রয়োজনে পথে না বেরিয়ে উপায় নেই তাদের। কিন্তু পথে বেরোলেই পেট্রোলবোমা, ককটেল কিংবা হামলার শিকার হওয়ার ভয় থেকে রক্ষা নেই কারও। কিন্তু এমন ভয় নিয়ে ঘরে বসে থাকারও উপায় নেই হতদরিদ্রদের। বেঁচে থাকতে, উপার্জনের প্রয়োজনে পথে বের হতেই হয়। ফখরুলদের একদিন উপার্জন না হলে হাঁড়ি চড়ে না। ফখরুল জানান, তাঁর ৭ সদস্যের পরিবার। অসুস্থ বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসার খরচও তাঁকেই বহন করতে হয় এই রিকশা চালিয়ে। তাইতো চলমান পরিস্থিতিতে নিজের নিরাপত্তা আর অবরোধ-হরতালকারীদের হামলা থেকে বাঁচতে মাথায় হেলমেট পরেই রিকশা চালাচ্ছেন তিনি। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অবরোধ-হরতালের সহিংসতার বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার জন্নি পোড়াইয়ে মানুষ মারতিছে। এসব ভাল না। আমরা বাঁচতি চাই।’
×