ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাশকতার জন্য খালেদার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫

নাশকতার জন্য খালেদার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লাগাতার হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের একের পর এক হত্যাকা-, পেট্রোল বোমা হামলাসহ নাশকতা অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। একই সঙ্গে সংগঠনগুলো নাশকতাকারীদের কঠোরহস্তে দমনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। শুক্রবার রাজধানীতে আয়োজিত পৃথক পৃথক প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন কর্মসূচী থেকে এ দাবি উঠেছে। দাবি উঠেছে নাশকতার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও। এদিকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার স্বার্থে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘বোমা মেরে মানুষ হত্যা, দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার প্রতিহিংসার রাজনীতি’ বন্ধের দাবিতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সমাবেশ করেছে। সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ‘কুইন অব টেরর এ্যান্ড হরর’ হিসাবে অভিহিত করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। হাছান মাহমুদ বলেন, রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য। কিন্তু খালেদা রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে সারাদেশে সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। সংগঠনের সহ-সভাপতি ড. ইনামুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলম মুরাদ, এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, এম এ করিম, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ বলেন, খালেদা জিয়া যতই বোমা মারছেন, গাড়ি পোড়াচ্ছেন, মানুষ মারছেন তাতে তিনি ততই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। তার পক্ষে আর জনগণের ম্যান্ডেন্ট নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়। সহিংসতার জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তারা। এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে হোমিওপ্যাথিক শিক্ষার্থীদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমরাও (আওয়ামী লীগ) হরতাল অবরোধ দিয়েছি। আমাদের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হয়েছে। কিন্তু গুপ্ত হামলা করেনি। মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেনি। জঙ্গীবাদী কায়দায় গুপ্ত হামলা করে গণতান্ত্রিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা যায় না। মন্ত্রী বলেন, অবরোধ দিয়ে বিএনপির কেউ রাজপথে নেই। সন্ত্রাসীদের দিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করানো হচ্ছে। সন্ত্রাস দমন করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সরকার যে কোনো মূল্যে সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রতিহত করে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দেবে। বাংলাদেশ হোমিও মেডিক্যাল ফেডারেশনের সভাপতি ডাঃ সাখাওয়াত ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহ-সম্পাদক সুশান্ত রায়, জিয়াউল হক, বাংলাদেশ ডিএইচএমএস চিকিৎসক সমিতির সভাপতি ডাঃ জিএমএন জাব্বার, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘জ্বালাও-পোড়াও, শ্রমিক ও নিরীহ মানুষ হত্যা, শিক্ষা-ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহন ও শিল্প কারখানা ধ্বংসের যড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’ শীর্ষক সমাবেশের আয়োজন করে শ্রমিক-কর্মচারী-পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ। কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে বাংলার সকল মানুষের চেহারা পাল্টে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনি তো একটি জোটের নেত্রী, কিন্তু আপনি কি পুড়ে যাওয়া মানুষের কান্না শুনতে পাচ্ছেন। কলেজছাত্র অভিসহ যে সব মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন সে সব পরিবারের কান্না কি আপনি শুনতে পাচ্ছেন। শাজাহান খান আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া সমাবেশে জনগণের উদ্দেশে বলেছিলেন, আমি ক্ষমতায় গেলে আপনাদের চেহারা পাল্টে দেব। এখন তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পেট্রোল বোমা দিয়ে জ্বালিয়ে দেশের মানুষের চেহারা পাল্টে দিচ্ছেন। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান ইসমত কাদির গামা, আন্তঃজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম, শ্রমিক জোট নেতা আব্দুল ওয়াহিদ, পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মুখলেছুর রহমান প্রমুখ। নাশকতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে হরতাল অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শুক্রবার এক সভায় বলেছেন, টানা হরতাল-অবরোধের নাশকতায় শিক্ষা ব্যবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। নিরীহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হচ্ছে। এটা গ্রহণ করা যায় না। নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী কয়েকদিন পরেই এসএসসি পরীক্ষা। অবিলম্বে তাই কর্মসূচী প্রত্যাহার করতে হবে। সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, অধ্যক্ষ আসাদুল হক, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী প্রমুখ। এদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি আর রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির ঠেকাতে ২৭ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা সমাবেশে সংগঠনটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এ ঘোষণা দেন। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি যে সমাবেশ সেটা কোন গদিকে রক্ষার জন্য নয়, বাঁচার দাবিতে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যে আন্দোলন করছেন সেটা জনগণের অধিকারের বিরুদ্ধে। জনগণের বিপক্ষে গিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে মানুষ পুড়িয়ে মারার উৎসব চলছে বলেও মন্তব্য করেন সিপিবির এ নেতা। তিনি বলেন, দেশে আজ মৃত্যু উৎসব চলছে। ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম শহর। এ শহরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য উৎকট বৈষম্য। এখানে ৩০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করেন। কিন্তু শাসক শ্রেণী নানা কথা বলে তাদের সমস্যা আড়াল করছে। ঢাকা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশরাফুল ইসলাম আশুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর আহমেদ, ঢাকা কমিটির সভাপতি মোঃ কাদের প্রমুখ।
×