ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হরতাল-অবরোধ রুখে দাঁড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫

হরতাল-অবরোধ রুখে দাঁড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

এম শাহজাহান ॥ দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত বঙ্গবাজারে কাপড়-চোপড়ের ব্যবসা করছেন আকতার হোসেন। প্রতিবছর শীতের এই সময়টাতে দম ফেলার সময় পান না তিনি। বাহারী সব শীতের পোশাক কিনতে সারাদেশ থেকে ছুটে আসেন পাইকাররা। সেই সঙ্গে লেগে থাকত নগরীর খুচরা ক্রেতার ভিড়। কিন্তু এবারের দৃশ্যপট ভিন্ন! দোকানে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পোশাক, তবে নেই ক্রেতা। হরতাল-অবরোধের কারণে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঢাকা আসছেন না। কমে গেছে খুচরা বিক্রিও। এখন হরতাল-অবরোধের খবর জানতে পত্রিকা পড়ে সময় কাটে তাঁর। আকতার হোসেনের মতো দেশের সব ব্যবসায়ীই আজ এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি। সারাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা এক কঠিন অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফুঁসে উঠছেন তাঁরা। রাজনৈতিক এই ধ্বংসাত্মক কর্মসূচীর বিরুদ্ধেও আসছে পাল্টা কর্মসূচী। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, সারাদেশের ৩৫৫টি এ্যাসোসিয়েশন ও ৬৪টি চেম্বার থেকেও পৃথক কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক ও সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচীর বিরুদ্ধে আগামীকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে পাল্টা কর্মসূচী ঘোষণা করবে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। এই কর্মসূচীর আওতায় অধিভুক্ত সারাদেশের ২৬ লাখ দোকানে হরতাল-অবরোধ বন্ধে ব্যানার টানানো হবে। ওই ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতি রুখে দিতে ব্যবসায়ীদের জন্য সচেতনতামূলক নির্দেশনা থাকবে। এছাড়া রাজধানীতে কয়েক লাখ ব্যবসায়ীর মানববন্ধন এবং অনশন কর্মসূচী আসছে। হরতাল-অবরোধ বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বিএনপি নেত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। এছাড়া একদিনের জন্য কাঁচাবাজারসহ সারাদেশের সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ করে দেয়ার মতো কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। এরপরও হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করা না হলে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে রাজপথে আরও কঠোর কর্মসূচী দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এসএ কাদের কিরণ জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আমাদেরও হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে রাজপথে নামা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের বোর্ড সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামীকাল শনিবার কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। সারাদেশের ২৬ লাখ দোকান মালিক হরতাল-অবরোধের শিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীকে এই কর্মসূচী প্রত্যহার করতেই হবে। আমরা অশান্তি চাই না। গত এক বছরে আমরা কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়। কিন্তু হরতাল-অবরোধ দিয়ে সব অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়া হচ্ছে। একদিনের হরতালে শুধু দোকানদারদের নিট ক্ষতি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা। এটা আর বেশিদিন চলতে দেয়া যায় না। আইনী পদক্ষেপ নিতে এফবিসিসিআই কমিটি গঠন করেছে ॥ হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে এফবিসিসিআই একটি কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির সভাপতি হয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও ফেনী চেম্বারের সভাপতি শাহেদ রেজা। ইতোমধ্যে এই কমিটি আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তাঁদের পরামর্শে শীঘ্রই আদালতে যাওয়া হচ্ছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এফবিসিসিআই বরাবরই হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কোন কথাই আমলে নেয়া হচ্ছে না। এ কারণে এবার আইনগতভাবে কিছু করা যায় কিনা, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত কমিটি ইতোমধ্যে আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছ। তাঁদের পরামর্শমতো আমরা এগোচ্ছি। তিনি বলেন, সারাদেশের ৩৫৫টি এ্যাসোসিয়েশন থেকে হরতাল-অবরোধ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এফবিসিসিআইকে অনুরোধ করেছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এ বিষয়ে সবকিছু করবে এফবিসিসিআই।
×