ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাশকতার বিরুদ্ধে পাশে থাকবে ইলেকট্রনিক মিডিয়া

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫

নাশকতার বিরুদ্ধে পাশে থাকবে ইলেকট্রনিক মিডিয়া

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সহিংসতা ও নাশকতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সরকারকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিলেন ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান নির্বাহীগণ এই প্রতিশ্রুতি দেন। বৈঠকের পর মিডিয়া প্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের বলেন, সরকারকে সহযোগিতা দিয়ে রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করতে আমরা একমত হয়েছি। আমরা সহিংসতা-নাশকতার পক্ষে নই, জাতির আর্তনাদের পক্ষে। বৈঠকের পর মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী অঞ্জন চৌধুরী, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু এবং বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা বলেন, সহিংসতা ও নাশকতার বিরুদ্ধে সরকারকে সহযোগিতা করতে খোলামেলা কথা হয়েছে। আমরা সবাই একমত হয়েছি কোন বিষয়ে যেন সেনসেশন তৈরি না করি। বৈঠকের পর অঞ্জন চৌধুরী বলেন, আলোচনার বিষয় ছিল বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কী দায়িত্ব তা নিয়ে। বর্তমানে দেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, এখানে আমাদের যে ভূমিকা তা আমরা কীভাবে পালন করছি। বৈঠকে যা ওঠে এসেছে তা হলো, সত্যটা তুলে ধরার জন্য মন্ত্রীরা অনুপ্রাণীত করেছেন। বিএনপির অবরোধ-সহিংসতার বিষয়ে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এটা আন্দোলন নয়। এটা নাশকতা। আমরা একমত হয়েছি আন্দোলনের কার্যক্রম এবং নাশকতার ভিন্ন রকম নিয়ে। অঞ্জন চৌধুরী বলেন, আমরা দেশের জন্য যা ক্ষতিকর তা অবশ্যই করব না। আবারও বলছি আন্দোলন না, এটা নাশকতা। শুধু মিডিয়াপার্সন হিসেবে নয়, দেশবাসী হিসেবেও স্বীকার করেছি। দেশে যেভাবে নাশকতা হচ্ছে তা যদি আমরা উৎসাহিত করি তাতে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য এটা ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া ভারতীয় চ্যানেল বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান অঞ্জন চৌধুরী। একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু বলেন, আমরা সবাই একমত হয়েছি মিডিয়ার অপার শক্তি ব্যবহার করে নাশকতা দমনে রাষ্ট্র ও সরকারের পাশে থেকে আমাদের সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করব। সন্ত্রাসীদের কোন দল নেই। এটা কোন আন্দোলন নয়। এটা নাশকতা। নাশকতার বিরুদ্ধে দেশ-জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ব্যাপারে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। সরকারের পক্ষ থেকে কোন সেন্সরশীপ আরোপিত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মোজাম্মেল বাবু বলেন ‘নো নাথিং’। আমাদের ওপর কোন সেন্সরশীপ আরোপ করা হয়নি। বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, তাঁরা (মন্ত্রীরা) একটা কথা বলেছেন সহিংসতা এবং রাজনীতিটাকে আমরা না মিলিয়ে ফেলি। বুলবুল বলেন, সহিংসতা সহিংসতা, আর রাজনীতি রাজনীতিই। সহিংসতা যদি রাজনীতি দখল করে নেয়, তাহলে রাজনীতি বিপজ্জনক জায়গায় পড়বে। আমরা বলেছি আমরা সুষ্ঠু রাজনীতির পক্ষে, সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারার পক্ষে এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে। সন্ত্রাস এবং সহিংসতা একসঙ্গে চলতে পারে না। কাজেই ডিকটেশন বা কোন নির্দেশনা ছিল না, এমনকি কোন অনুরোধ করা হয়নি। এখানে বিষয়গুলো পর্যালোচনা হয়েছে। পর্যালোচনার পর মিডিয়ার মানুষ হিসেবে আমরা একমত হয়েছি এখন যেগুলো চলছে তা সহিংসতা। বার্ন ইউনিটের যে চিৎকার তা জাতির আর্তনাদ। আমরা জাতির আর্তনাদের পক্ষে। আর্তনাদ যারা সৃষ্টি করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে। বৈঠকে শেষে শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনের নামে দেশে নাশকতা ও সন্ত্রাস চলছে। এ কারণে অনেক কিছুই মানুষের অগোচরে, মানুষ জানতে পারছে না। দেশের অবস্থা, আমদানি-রফতানি স্বাভাবিকভাবে চলছে, মানুষ তা জানতে পারছে না। এই জিনিসগুলো তুলে ধরা এবং পাশাপাশি হাইওয়েতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার গাড়ি ঢাকা থেকে চলাচল করছে বিভিন্ন জায়গায়, এ বিষয়টি মানুষ অবহিত নয়। কারণ দু’একটি বাস পোড়ানো বা ট্রাক পোড়ানো মানুষের সামনে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। সে কারণে মানুষ মনে করছে সারাদেশেই বোধহয় এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ বিষয়গুলো যাতে সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয় এবং মিডিয়া অনেক বিষয়ে ওয়াকিফহাল ছিল না। সে বিষয়গুলো শুনেছেন। তাদের কাছে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছি, তারা সম্মত হয়েছেন। শিল্পমন্ত্রী বলেন, এটা রাজনীতি নয় সন্ত্রাস এবং নাশকতা। সন্ত্রাস রাজনীতিকে গাইড করতে পারে না। আদর্শকে স্থাপন করতে পারে না। সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ নাশকতা মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারে না। নিরাপত্তাহীনতা দিতে পারে। এ কাজটি সরকার বা জনগণের বিরুদ্ধেই নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই এটি করা হচ্ছে আমাদের কাছে প্রতীয়মান। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। কিছু সন্ত্রাসী নাশকতা কার্যকলাপ ছাড়া এগুলোই তুলে ধরার আলোচনা হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত বৈঠক। তবে বৈঠকে সিনিয়র মন্ত্রীরা আমন্ত্রিত হয়ে এসেছেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং জাসদ নেতা ও সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদল।
×