ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অদ্ভুত আঁধার এক-

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২২ জানুয়ারি ২০১৫

অদ্ভুত আঁধার এক-

দেশের মানুষকে বোকা ও নালায়েক ঠাওরাচ্ছেন এক শ্রেণীর রাজনীতিক। ধরেই নিয়েছেন দেশবাসী চোখে ঠুলি পরে আছে। তাই কিছুই দেখতে পায় না, শুধু শব্দ শোনে বোমাবাজির। আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়তে থাকা যানবাহনের শব্দ কর্ণকুহরে প্রবেশ করে। আর তাকে ছাপিয়ে মর্মমূলে ঘা মারে আহতদের আর্তনাদ। স্বজন হারাদের আহাজারি। আর তাদের কানের কাছে এসে চিৎকার করে শোনায়, আমরা এসব করি না। করে ওরা, যারা ক্ষমতায়। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা কেন এসব ঘটিয়ে নিজের ক্ষমতার মসনদের পায়ায় কুড়াল মারবেন- সে কথাটা আর বলেন না। জীবনানন্দ দাশ দূরদর্শী বলেই আজকের এই চিত্রটি বিশ শতকের চল্লিশের দশকে লিখেছিলেন, ‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে পৃথিবীতে আজ/ যারা অন্ধ সবচে বেশি চোখে দেখে তারা’। দেশজুড়ে যারা পৈশাচিকতা, নাশকতা, সহিংসতা, হানাহানি চালিয়ে যাচ্ছে তারাই উচ্চ নিনাদে জানান দিতে চায়, আমরা এসব করছি না। আমরা শান্তিবাদী। জার্মানির হিটলারের মন্ত্রী গোয়েবলস লজ্জায় মাথা হেঁট করতেন যদি একালে থাকতেন। যারা অবরোধ কর্মসূচী দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে, অরাজকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে, মানুষ হত্যা, সম্পদ বিনষ্ট করছে তারা সাফাই গাইছে। চোরাগোপ্তা হামলায় জনজীবন বিপন্ন করেছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক দলটি চিৎকার করে বলে, জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। অথচ এরাই অবরোধ-হরতাল ডেকে অশান্তির কালোমেঘে ঢেকে দিয়েছে দেশ। বিএনপির চেয়ারপার্সন ও অবরোধ ডাকা নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অভিযোগÑ দেশে চলমান সহিংসতা ঘটাচ্ছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। যদি তাই হবে, তবে সহিংসতাকারীদের, বোমাবাজদের প্রতি গুলি করার নির্দেশের তিনি বিরোধিতা করছেন কেন। তিনি বা তার দলের নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সন্ত্রাস দমনের বিরোধিতা করছেন কেন। গুলিতে তো হতাহত হবে সন্ত্রাসে জড়িত তার লীগ কর্মীরা আর তাতে তো তার সীমাহীন খুশি হওয়ার কথা। অবরোধ ডেকেছেন তিনি আর বলছেন, ক্ষমতাসীনরাই সারাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। তাকে অফিসে অবরুদ্ধ করার আগে সারাদেশকে অবরুদ্ধ করেছে সরকার। তার অর্থ দাঁড়ায়, বেগম জিয়ার অবরোধ কর্মসূচী সরকারই পালন করেছে। মূলত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটাতে সচেষ্ট বিএনপি ভাল করে জানে এবং নিশ্চিত হয়েছে যে, আন্দোলন করে, গণঅভ্যুত্থান ঘটানো মতো জনসমর্থন বা নেতাকর্মী তাদের দলে নেই। তাই এই সরকারকে নামাতে হলে প্রথমে দেশবাসীকে সহিংসতা চালাতে হবে। চোরাগোপ্তা হামলা করে নিরীহ মানুষ মারতে থাকলে এক সময় সারাদেশের জনগণ সরকারের ওপর দোষ চাপাতে পারবে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য। এমনভাবে সহিংসতা বাড়তে বাড়তে একসময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অরাজকতায় মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে পতন ঘটাবে সরকারের। বেগম জিয়া জানেন বটে। কিন্তু বলেন না যে, গত এক বছরে এই সরকার কোন নির্বাচন দেয়নি। তখন কিন্তু সহিংসতা হয়নি। মানুষ আগুনেও পোড়েনি। কিন্তু যখনই অবরোধ কর্মসূচী দেয়া হয়েছে, তখন থেকেই আগুনে পুড়ে মরছে নিরীহ মানুষ। আর বেগম জিয়া এই হত্যার দায় থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য যতই কৈফিয়ত বা বয়ান দেন, দেশবাসী যে জানে সত্য কোথায়। যতই তা কঠিন হোক।
×