ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ২২ জানুয়ারি ২০১৫

ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ ইন উইন এন্টারপ্রাইজের উদ্যোগে আগামীকাল বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে সালমান খান ও আয়েশা তাকিয়া অভিনীত ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘ওয়ান্টেড’। এরপর পর্যায়ক্রমে মুক্তি পাবে ‘ডন-২, ‘থ্রি ইডিয়টস’ ও ‘তারে জামিন পার’। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে চলচ্চিত্রশিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক ও কলাকুশলীদের জোট চলচ্চিত্র ঐক্যজোট। তারা বলেছেন বাংলাদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রদর্শন যদি নিষিদ্ধ করা না হয় তাহলে তারা কঠোর আন্দোলনে যাবেন। এমনকি অন্যান্য আন্দোলনের মতো শরীরে কাফনের কাপড় পরে রাজপথে নামারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা। অন্যদিকে চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের এ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আমদানিকারকরা বলছেন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই চলচ্চিত্র আমদানি করছেন তারা। সাফটা চুক্তির বাইরে যাননি তারা। তথ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সব নিয়মকানুন মেনে তারা চলচ্চিত্রগুলো আমদানি করেছেন। এক্ষেত্রে তারা বেআইনী কিছু করেননি। আমদানিকারকরা আরও বলছেন ভারতীয় চলচ্চিত্র চললে দেশীয় নকলবাজরা নকল করতে পারবে না। সে জন্যই তারা এ আন্দোলনে নেমেছে। ভারতীয় চলচ্চিত্র আমাদানির বিরুদ্ধে সোচ্চার পরিচালক, শিল্পী ও কলাকুশলীদের সমন্বয়ে গঠিত চলচ্চিত্র ঐক্যজোট মঙ্গলবার বিএফডিসির পরিচালক সমিতির সামনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, শিল্পী সমিতির সভাপতি শাকিব খান, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, চিত্রাভিনেতা রুবেল, অমিত হাসান, মিজু আহমেদ, প্রবীণ অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান গুলজার। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ভারতীয় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে কুচক্রীমহল এদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তারা আরও বলেন, কোন জাতিকে ধ্বংস করতে হলে সে জাতির সংস্কৃতি ধ্বংস করে দেয়াটাই হচ্ছে মোক্ষম উপায়। আর পরিকল্পিতভাবে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী এদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে ধ্বংসের নীল নকশায় মেতে উঠেছে। বর্তমান সরকারকে চলচ্চিত্রবান্ধব উল্লেখ করে তারা বলেন, বর্তমান সরকার যখন চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে ঠিক সেই সময়েই কুচক্রীমহল এই শিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা শুরু করেছে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রয়োজনে রক্ত দিতেও কুণ্ঠাবোধ করবে না বলে জানান তারা। সংবাদ সম্মেলন শেষে এফডিসি গেটে মানববন্ধনে অংশ নেয় চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের নেতারা। চলচ্চিত্র ঐক্যজোট নেতা ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি চিত্রপরিচালক সোহানুর রহমান সোহান জানান, হিন্দী চলচ্চিত্র আমদানি ও প্রদর্শনের বিরুদ্ধে তারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করবেন। তারা আশা করছেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিন্দী চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যাপারে ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারির নির্দেশনা দেবেন। সোহানুর রহমান সোহান আরও বলেন, হিন্দী চলচ্চিত্র আমদানির বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে প্রক্রিয়াধীন। ভারতীয় বা উপমহাদেশীয় যে কোন চলচ্চিত্রের ব্যাপারে এখনও কোন চূড়ান্ত রায় আসেনি। কিন্তু তারা আদালতের রায়ের অপেক্ষা না করেই আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের মাধ্যমে অনুমতি এনে তথ্য মন্ত্রণালয় তথা সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। তিনি বলেন, আইনের ফাঁকফোকর গলে তারা সেন্সর বোর্ডের দুর্নীতিগ্রস্ত ভাইস চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বাংলাদেশী চলচ্চিত্র শিল্পে ধস নামাতে চাইছে। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বর্তমান সভাপতি অভিনেতা শাকিব খান বলেন, আইনের ফাঁকফোকর গেলে দেশের শত্রুরা সেন্সর বোর্ডের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে আঁতাত করে ভারতীয় হিন্দী চলচ্চিত্র সেন্সর করিয়ে নিচ্ছেন। এই কুচক্রীমহল বিভিন্ন হলে ডিজিটাল মেশিন ভাড়ার টাকা দিতে চান না, অথচ কোটি কোটি টাকা খরচ করে তারা হিন্দী চলচ্চিত্র আমদানি করতে পারেন। তখন তাদের টাকার অভাব হচ্ছে না। শাকিব জানান, শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে কলাকুশলীরা হিন্দী চলচ্চিত্র আমদানির বিপক্ষে আন্দোলনে মাঠে থাকবেন। অন্যদিকে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও পরিবেশক সমিতি বলছে, হল মালিকদের স্বার্থেই ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি করা হচ্ছে। বাংলা চলচ্চিত্রের বাজার নিতান্ত খারাপ বলেই হিন্দী চলচ্চিত্র প্রদর্শন করছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন সাফটা চুক্তির আওতায় ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির বদলে ইতোমধ্যেই ভারতে প্রদর্শিত হয়েছে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র শাকিব খান অভিনীত ‘মা আমার স্বর্গ’ ও শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘বৈষম্য’। তবে খোদ শাকিব খান এতে সন্তুষ্ট নন। তিনি বলছেন, চলচ্চিত্র পরিচালক, শিল্পী সমিতি কারও সঙ্গে কথা না বলে যেনতেন চলচ্চিত্র মুক্তি দিলেই তো হলো না। চিত্রনায়ক অমিত হাসান বলছেন, তারা আমাদের পেটে লাথি মারলে, আমরা তাদের বুকে লাথি মারব। প্রবীণ অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান আশা করছেন, মোসাহেবদের অলীক স্বপ্ন খোদ প্রধানমন্ত্রী সত্যি হতে দেবেন না। দেশীয় সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্র ধ্বংসের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় হিন্দী চলচ্চিত্র আমদানিকারক ইনউইন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মোহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, আমরা তো মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই চলচ্চিত্র আমদানি করছি। তথ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সব নিয়মকানুন মেনে আমরা চলচ্চিত্রগুলো আমদানি করেছি। তিনি বলেন বাংলা চলচ্চিত্রের বাজার খুব ভাল যাচ্ছে না। হল মালিকরা লোকসানের মুখে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে হলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। হল বন্ধ হলে আমরা সিনেমা চালাব কোথায়? তিনি জানান, সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নিয়ে তারা ভারতীয় প্রদর্শকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায় এগুলো ভারতের বিভিন্ন ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রের অনুকরণে নির্মিত। তারা এসব চলচ্চিত্র ভারতের সেন্সর বোর্ডে জমা দিলে উল্টো তাদেরই ক্ষতি হবে। নওশাদ মনে করেন, বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বাংলাদেশের দর্শকদের ভারতীয় হিন্দী চলচ্চিত্রের প্রতিও আগ্রহ রয়েছে। এখন ঘরে বসেই স্যাটেলাইট চ্যানেলে কিংবা ইউটিউবের মাধ্যমে তারা হিন্দী চলচ্চিত্র দেখছে। তাই তারা হলে ভারতীয় চলচ্চিত্র চালাতে চাইছেন। নওশাদ আরও বলেন, ঐক্যজোট নেতারা বলছেন ভারতীয় চলচ্চিত্র তারা এ দেশের হলে প্রদর্শন করতে দেবেন না। কিন্তু তারা কী পারবেন ভারতীয় চ্যানেলগুলোর প্রচার বন্ধ করতে? আমরা তো একবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তখন ঐক্যজোট নেতারা তো কেউ আসেননি।
×