ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘বোমাবাজ চক্র’ এখন যৌথবাহিনীর টার্গেট

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২১ জানুয়ারি ২০১৫

‘বোমাবাজ চক্র’ এখন যৌথবাহিনীর টার্গেট

শংকর কুমার দে ॥ ‘পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারী, বোমাবাজ চক্র’ এখন যৌথবাহিনীর প্রধান টার্গেট। অবরোধের নামে জঙ্গী কায়দায় চোরাগোপ্তা হামলা করে আসছে এই ধরনের দুর্বৃত্ত চক্র। নাশকতাকারী এই ধরনের সহিংস সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে, পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে নিরীহ নিরপরাধ মানুষজনকে পুড়িয়ে মারায় জড়িত সহিংস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর এ্যাকশনে গেছে যৌথবাহিনী। যৌথবাহিনীর কঠোর এ্যাকশনে যাওয়ার ফলে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারী, বোমাবাজ চক্রের আতঙ্ক সৃষ্টির দৌরাত্ম্য কমে আসতে শুরু করেছে। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এই খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, কোন এলাকায়, কার নির্দেশে, কারা পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে যানবাহনে আগুন দিচ্ছে তা খুঁজে বের করে কঠোর এ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যৌথবাহিনীকে। যৌথবাহিনী কঠোর এ্যাকশনে যাওয়ার কারণে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারী, বোমাবাজ সহিংস সন্ত্রাসীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই ধরনের সংঘবদ্ধ দুবর্ৃৃত্তরা যেখানে আত্মগোপন করছে সেখানেই এ্যাকশনে যাচ্ছে যৌথবাহিনী। যৌথবাহিনীর ওপর আক্রমণ করছে সহিংস সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীরা। দু’পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাও ঘটছে। খোদ রাজধানীতেই যৌথবাহিনীর সঙ্গে সহিংস সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী দুর্বৃত্ত দলের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় দু’জন মারা গেছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সহিংসতাকারী, গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারী, হাতবোমা ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারীকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার দেয়া হবে।’ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মোঃ মাসুদুর রহমান বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য এই মুহূর্তে আর কোন অপরাধী কর্মকা- ধর্তব্যের বিষয় নয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভাল ও সন্তোষজনক। শুধুমাত্র অবরোধের নামে একমাত্র পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, বোমাবাজি ও যানবাহনে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটছে। এই ধরনের দুর্বৃত্তায়ন নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই জনজীবন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে আসবে। যৌথবাহিনীর এ্যাকশনের ফলে ক্রমেই অবরোধের নামে নাশকতার ঘটনার দৌরাত্ম্য কমে আসছে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা। গোয়েন্দা সংস্থার রেকর্ড থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, যৌথবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগকারীদের দুর্বৃত্তায়নের কাজ ও দুর্বৃত্ত চক্রকে চিহ্নিত করার কাজ করছে পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এসব বোমাবাজরা ভাড়ায় বিভিন্ন এলাকায় হাতবোমা ছুড়ে মারে। এই চক্রের সদস্যরা নির্দিষ্ট একটি এলাকায় একটি বা দুটি মিশন সম্পন্ন করতে গড়ে দুই থেকে তিন হাজার টাকায় চুক্তি হয়। বোমা কেনা ও অপারেশনের জন্য টাকা পাওয়ার পর তারা নির্দিষ্ট এলাকায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। রাজধানীর গুলিস্তান থেকে পুরান ঢাকাসহ যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, জুরাইন, খিলগাঁও, সুবজবাগ, কমলাপুর ও মতিঝিল এলাকাজুড়ে হাতবোমা ও ককটেল তৈরির কারিগর রয়েছে। একেকটি বোমা ও ককটেল গড়ে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকায় বিক্রি হয়। বংশাল, সুরিটোলা, চকবাজার, সোয়ারীঘাট, লক্ষ্মীবাজার ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় বেশিরভাগ হাতবোমা তৈরি হয়। এই এলাকা থেকে বোমা রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় সরবরাহ করা হয় বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার তালিকা থেকে জানা গেছে, গে-ারিয়া, বংশাল ও জুরাইন এলাকায় ফারুক, কালু, পান্না, মিলন ও শহীদের নাম বোমাবাজদের তালিকায় উঠে এসেছে। কোতোয়ালি, নয়াবাজার, সুরিটোলা, নর্থসাউথ রোড, ওয়ারী, সূত্রাপুর, নবাবপুর, গুলিস্তান এলাকায় জামাল মল্লিক, ডালিম, জাবেদ, বাপ্পী, মিন্টু, হোসেন মিয়া, ভাগ্নে শহীদ, মোহন, রবিন, মামুন ও ফারুকের নাম রয়েছে। লালবাগ, যাত্রাবাড়ী, সুবজবাগ, খিলগাঁও, শাহজাহানপুর ও মতিঝিল এলাকায় বোমারু ইসমাইল, বাবলা, রতন, ফারুক ও আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম রয়েছে। এরমধ্যে নতুন ঢাকার ১৫টি স্থানকে স্পর্শকাতর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যার মধ্যে শাহবাগ, পল্টন, বাংলামোটর, কাওরানবাজার, ধানম-ি-২৭, আগারগাঁও, শ্যামলী, মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশন, কাজীপাড়া, সরকারী বাঙলা কলেজের সামনে, মহাখালী, বনানী, কাকলী, খিলক্ষেত, এলিফ্যান্ট রোড, বিমানবন্দর গোলচত্বর ও আজমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সবচেয়ে বেশি বোমাবাজ ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে খবর পেয়েছে গোয়েন্দারা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ডিসি সৈয়দ বজলুল করিম দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, অবরোধের নামে যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে, পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার ঘটনার মতো সহিংস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নাশকতা দমনে আরও কঠোর হতে হবে যৌথবাহিনীকে। সাবেক এই গোয়েন্দা কর্মকর্তার প্রশ্ন- দেশের নিরীহ নিরপরাধ মানুষজন, যানবাহনারোহী, পথচারীদের ওপর অবরোধের নামে পৈশাচিক হামলার ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো এখন চুপ কেন? সাধারণ মানুষজনের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলা খেলতে দেয়া যায় না। অতীতে দেখা গেছে, যখনই যৌথবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর এ্যাকশনে গেছে তখনই সহিংস সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিয়েছে।
×