ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যৌথবাহিনীর অভিযানে ঢাকায় পেশাদার বোমাবাজ নিহত ॥ সারাদেশে গ্রেফতার দেড় শতাধিক

দূরপাল্লার যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসছে

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২১ জানুয়ারি ২০১৫

দূরপাল্লার যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও খণ্ড খণ্ড হরতালে দেশব্যাপী নাশকতার ঘটনায় যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে। অভিযানের ফলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসছে। স্বাভাবিক হয়ে আসছে দূরপাল্লার যানবাহনের চলাচল। অভিযানকালে মঙ্গলবার ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক পেশাদার বোমাবাজের মৃত্যু হয়েছে। নিহত বোমাবাজ গত ১৭ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে পুলিশভ্যানে ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়ে ১৪ পুলিশকে আহত করার সঙ্গে জড়িত ছিল। এ নিয়ে পুলিশভ্যানে বোমা হামলার ঘটনায় ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুইজনের মৃত্যু হলো। মঙ্গলবার নিহত বোমাবাজ নুরুজ্জামান জনি পেশাদার বোমাবাজি, বোমা তৈরি, মজুদ ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত। পুলিশের তালিকাভুক্ত পেশাদার অপরাধী ছিল সে। নিহত জনি ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের খিলগাঁও থানার সাধারণ সম্পাদক ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। জনির বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অন্তত ৯টি বোমাবাজির মামলা রয়েছে। অভিযানে সারাদেশে দেড়শতাধিক গ্রেফতার হয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কায় সমাবেশ করার অনুমতি না পেয়ে ৬ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসমাবেশ বিশ্ব এজতেমা চলাকালেও অবরোধ বহাল ছিল। অবরোধে নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। তারা গ্রেফতার এড়িয়ে ভাড়াটে বোমাবাজদের দিয়ে সারাদেশে চোরাগোপ্তা হামলা পরিচালনা করতে থাকে। সারাদেশে ভয়াবহ তা-বে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়। অন্তত পাঁচ শতাধিক যানবাহনে ভাংচুরসহ অগ্নিসংযোগ করে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং জনজীবনে স্বস্তির ফিরিয়ে আনতে নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে দেশব্যাপী যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে। রাজধানীতে থানাভিত্তিক সন্ত্রাসী ও বোমাবাজদের তালিকা অনুযায়ী সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে যৌথবাহিনী। চলমান অভিযানে ১২ বোমাবাজসহ শতাধিক পেশাদার সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়েছে। মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। কতিপয় সন্ত্রাসী ওই এলাকায় নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক করছে বলে তথ্য ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানাটির জোড়পুকুর মাঠে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাঠে প্রবেশ করা মাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। তারা পালানোর চেষ্টা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পিছু নিলে সন্ত্রাসীরা হাতবোমা ও গুলি চালাতে থাকে। পুলিশও বাধ্য হয়ে গুলি চালায়। কয়েক মিনিট ধরে বন্দুকযুদ্ধ চলে। একপর্যায়ে সব স্বাভাবিক হয়ে গেলে পুলিশ আলো জ্বালিয়ে সেখানে তল্লাশি চালায়। তল্লাশিকালে ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড তাজা বুলেট, ৬টি হাতবোমা ও একটি পেট্রোল বোমা উদ্ধার হয়। আর আহত অবস্থায় সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় নুরুজ্জামান জনিকে (৩০)। আহত জনিকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত চারটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক জনিকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, মৃত্যুর আগে জনি বোমাবাজ, বোমাবাজদের নির্দেশদাতা, অর্থদাতাসহ অনেকের নামই প্রকাশ করেছে। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। জনি পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও বোমাবাজ। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অন্তত নয়টি মামলা আছে। নিহত জনি গত ১৭ জানুয়ারি শনিবার রাতে মৎস্য ভবনের সামনে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলাকারীদের অন্যতম। সে পেশাদার বোমাবাজ, বোমার তৈরি, মজুদ ও সরবরাহকারী ছিল। এদিকে মঙ্গলবার বন্দুকযুদ্ধে নিহত জনি রাজধানীর খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলে তার পিতা ইয়াকুব আলীর দাবি। চলমান অভিযানের ধারাবাহিকতায় এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি রবিবার রাত তিনটার দিকে যৌথবাহিনী মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচাবাজার এলাকায় অভিযানে যায়। অভিযানকালে সেখানে অবস্থিত সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ শর্টগান থেকে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও বাধ্য হয়ে গুলি চালায়। কয়েক মিনিটি ধরে বন্দুকযুদ্ধ চলে। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড তাজা বুলেট ও ৫টি হাতবোমা উদ্ধার হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার হয় ইমরুল কায়েস (৩০) নামে এক পেশাদার বোমাবাজ। দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত চারটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার পিতার নাম আনোয়ার হোসেন। বাড়ি নড়াইল জেলার ডুমুরতলা থানাধীন দুর্গাতলা গ্রামে। তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন দক্ষিণ মুশুদ্দি এলাকার ভাড়ায় থাকতেন। তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। নড়াইল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্থানীয় জামায়াত নেতা ছিলেন ইমরুল। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর জানান, তার বিরুদ্ধে নড়াইল থানায় আটটিসহ ডজনখানেক মামলা রয়েছে। অধিকাংশই বোমাবাজি, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা। নিহত বোমাবাজ মৎস্য ভবনের সামনে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলাকারীদের অন্যতম। পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে তিনি ঢাকায় যাত্রাবাড়ীতে বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি পেশাদার বোমাবাজ, বোমা তৈরি, মজুদ ও সরবরাহকারী ছিলেন। সারাদেশে থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সারাদেশে মঙ্গলবার যৌথবাহিনীর অভিযানে অন্তত দেড়শতাধিক গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই যানবাহন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ পুলিশের উপর হামলা হামলার আসামি। এছাড়া সারাদেশে বিজিবির নিরাপত্তায় ১৭০টি তেলবাহী ট্যাঙ্কার এবং বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ অন্তত লক্ষাধিক যানবাহন দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করেছে বলে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ জানিয়েছেন।
×