ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রেফতারকৃত আইএস জঙ্গীরা এমন তথ্য দিয়েছে

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার ছক ছিল ওদের

প্রকাশিত: ০৩:২২, ২১ জানুয়ারি ২০১৫

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার ছক ছিল ওদের

গাফফার খান চৌধুরী ॥ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগাতে তৎপর বাংলাদেশের আইএস জঙ্গীরা। তারা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছে। টার্গেটের তালিকা আসছে পাকিস্তানসহ বিশ্বের একটি প্রভাবশালী দেশ থেকে। আইএসের বাংলাদেশী এজেন্টদের অর্থের উৎস জানার চেষ্টা চলছে। তাদের ব্যাংক হিসাব, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যাবতীয় আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় সম্মিলিত অনুসন্ধানে নেমেছে। বাংলাদেশে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে ব্যর্থ হলে তারা সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার পরিকল্পনা করছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী কবির ব্যতীত তিনজনের আগেই পাকিস্তানে ছিল। সবার পরে পাকিস্তান যাওয়ার কথা ছিল কবিরের। পরে চারজনেরই সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার কথা ছিল। চার আইএস জঙ্গী সম্পর্কে এমন তথ্যই জানা গেল গোয়েন্দাদের কাছ থেকে। গত ১৮ জানুয়ারি রাত তিনটার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও খিলক্ষেত থেকে গ্রেফতার হয় চার আইএস জঙ্গী সাখাওয়াতুল কবির (৩৫), আনোয়ার হোসেন বাতেন (৩২), রবিউল ইসলাম (৩৫) ও নজরুল ইসলাম (৪০)। উদ্ধার হয়েছে জিহাদী বই, লিফলেট, জঙ্গী প্রশিক্ষণের ভিডিওসহ নানা সরঞ্জাম। তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনগুলো অতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে। যদিও সরকারের তৎপরতার কারণে তারা কোন সময়ই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে আলকায়েদা, তেহরিক-ই-তালিবান অব পাকিস্তান, জশ-ঈ-মোহাম্মদ, জশ-ঈ-মোস্তফা, আইএস জঙ্গীরা বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে এদেশে নেটওয়ার্ক বিস্তারের কাজ করছিল। জিজ্ঞাসাবাদকারী গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতারকৃতরা চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছিল। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা রয়েছে আইএসসহ অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনগুলোর। টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের তালিকা আসছে পাকিস্তানসহ একটি প্রভাবশালী দেশ থেকে। ওই দুইটি দেশে বাংলাদেশের জেএমবিসহ আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনগুলোর তৎপরতা আছে। যাদের সঙ্গে বাংলাদেশের জেএমবি ও আইএস জঙ্গীদের যোগাযোগ আছে। হামলা বাস্তবায়নের খরচ বহনের দায়িত্ব ছিল নজরুল ইসলামের। নজরুল ইসলাম একজন শিল্পপতি। নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বহুতল ভবনে এ্যালোমিনিয়ামের মই তৈরির বিশাল কারখানা আছে তার। গাজীপুরের ছয়দানায় তার বিশাল কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা বলছেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বড় ধরনের নাশকতা চালানো সম্ভব না হলে তাদের পাকিস্তানে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এদের মধ্যে কবির ব্যতীত তিনজনের আগে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তাদের পাকিস্তানে সমরাস্ত্রের পুরনো প্রশিক্ষণ নতুন করে করার পরিকল্পনা ছিল। বাংলাদেশে থেকে কবিরের আরও জিহাদী ভাই পাকিস্তানে পাঠানোর চেষ্টা করছিল। সবার যাওয়ার পর পাকিস্তানে যাওয়ার কথা ছিল কবিরের। পাকিস্তান থেকে গ্রেফতারকৃত চারজনের সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার কথা ছিল। তাদের অর্থের উৎস জানতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যাবতীয় লেনদেন খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃত চার আইএস জঙ্গী যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত অধিকাংশ সমরাস্ত্র চালনায় পারদর্শী। শুধু তারা বিমান চালাতে অক্ষম। গ্রেফতারকৃত কবির পাকিস্তানে সব ধরনের সমরাস্ত্রের ট্রেনিংপ্রাপ্ত। সে ২০০৬ সালে জেএমবির কারাবন্দী আমির জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফনের মেয়ের জামাই ইজাজের হাত ধরে জিএমবিতে যোগ দেয়। ইজাজের মাধ্যমেই ২০০৯ সালে তিনি পাকিস্তান চলে যান। সেখানে আলকায়েদায় যোগ দেন। মতবিরোধের কারণে আলকায়েদা ছেড়ে আইএস-এ যোগ দেন। গ্রেফতারকৃতরা আইটি বিশেষজ্ঞ। তারা বাংলাদেশে আইএস জঙ্গী সংগঠনটির হয়ে তৎপরতা চালাচ্ছিল।
×