ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোয়ার্টারের চেয়েও বেশি কিছু আশা মুশফিকের

প্রকাশিত: ০৩:০১, ২১ জানুয়ারি ২০১৫

কোয়ার্টারের চেয়েও বেশি কিছু আশা মুশফিকের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যেখানে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলাই বাংলাদেশ দলের জন্য কষ্টকর। সেখানে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কোয়ার্টার ফাইনালের চেয়েও বেশিকিছু আশা করছেন সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক ও দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম! বোঝাই যাচ্ছে, মুশফিকের স্বপ্নে সেমিফাইনালের বসতি। মুশফিক নিজেই মঙ্গলবার তা জানালেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কতদূর যাওয়ার সামর্থ্য আছে? এমন প্রশ্ন উঠতেই মুশফিক বললেন, ‘সামর্থ্য আমাদের অনেক আছে। এখন অনেক পারফর্মার। যদি টিম হিসেবে দেখেন, পাঁচজন যদি একসঙ্গে পারফর্ম করতে পারে তাহলে দলের দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। তখন দ্বিতীয় রাউন্ড কেন অনেক দূরে যেতে পারব। দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে পারব এ রকম একটা আশা আছে। তবে আমাদের প্রথম ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। ওটা ভালমতো শুরু করতে পারলে পরেরগুলো বেশ ভাল হবে। আমার মনে হয় আমাদের খেলোয়াড়রা অনেক উদগ্রীব। অনেকেই বলছে, আমরা হয়ত ভাল খেলতে পারব না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ফিল করি বাংলাদেশেরও ও রকম কন্ডিশনে ভাল খেলা সম্ভব।’ এ জন্য একাধিক উইনিং মোমেন্টের আশা করছেন মুশফিক। ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১১-এ চার বিশ্বকাপের মধ্যে ’০৭ সালেই বাংলাদেশ কেবল উইনিং মোমেন্ট পেয়েছে। প্রথম ম্যাচেই ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে। এবারও মুশফিকের আশা, ‘২০০৭ সালে একটা (উইনিং মোমেন্ট) হয়েছে। আশা করব এবার যেন তিন-চারটা হয়।’ সেই উইনিং মোমেন্টের শুরু ১৮ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ থেকেই চান মুশফিক। বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি চিন্তা করছি কোয়ার্টার ফাইনাল। সবকিছু আসলে নির্ভর করছে প্রথম ম্যাচের উপর। আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে কিভাবে শুরু করব সেটাও দেখে নেয়া উচিত। প্রথম ম্যাচটিতে আমরা ভাল করতে পারলে দ্বিতীয় ম্যাচগুলোতে সেই আত্মবিশ্বাস কাজ করবে।’ মুশফিক বাস্তবতাতেও আছেন, ‘কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য আমাদের চারটি ম্যাচ জিততে হবে। এটাই আমাদের টার্গেট। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।’ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার জন্য চারটি ম্যাচ জেতা কী সম্ভব? বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আছে ‘এ’ গ্রুপে। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দলগুলো হচ্ছে-আফগানিস্তান, স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও আরেক স্বাগতিক দল নিউজিল্যান্ড। শুরুতেই চারটি জয় কী সম্ভব? এরপর না আসবে ‘নকআউট’ পর্ব। যে জিতবে সেই পরের ধাপে এগিয়ে যাবে। মুশফিক সম্ভাবনার কথাই ভাবছেন, ‘যেকোন বিশ্বকাপেই ছোট-বড় কোন বিষয় না। আমাদের মতো দল যে শুধুই হারবে, তা না। বড় দলগুলো বেশ চাপে থাকবে। সবার প্রত্যাশা থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড জিতবে। কিন্তু তা না, ওদের উপরে আরও বেশি চাপ থাকে। অন্য কথা চিন্তা না করে আমাদের শক্তি, কম্বিনেশন নিয়ে কাজ করা আমাদের একমাত্র কাজ। ঠিকমতো কাজ করতে পারলে আমরা যেকোন দলকে হারাতে পারব যে কোন দিনে।’ যে কোন দলকে যে কোন দিন হারানোর সামর্থ্য বাংলাদেশ এর আগেও দেখিয়েছে। বিশ্বকাপের কথাই যদি ধরা হয়, বাংলাদেশ যখন প্রথম বিশ্বকাপ খেলে তখন পাকিস্তানকে হারায়। ২০০৭ সালেত ভারতকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডেই উঠে গেছে। একই আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডকেও হারিয়েছে। এবার তাই বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নিয়েই ভাবনায় থাকবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষরা। বাংলাদেশের কাছে হারলেই যে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যাবে। অবশ্য এবার বিশ্বকাপে যে কন্ডিশন একটা বড় বিষয় তা মানছেন মুশফিকও, ‘কন্ডিশন একটা বড় জায়গা। কারণ যেখানে খেলতে যাবেন সেখানকার পিচ, আবহাওয়া ও সব কিছু বুঝেই কিন্তু খেলতে হবে। বোলিং, ব্যাটিং সবকিছুই কিন্তু ভিন্ন হবে। প্রথম দশ ওভার খুব চ্যালেঞ্জিং হবে। শুধু আমাদের জন্য না, সব দলের জন্যেই। সেদিক থেকে বলব কম রান হলেও প্রথম দশ ওভারে আমাদের সেভাবেই খেলতে হবে, যেন পরে উইকেট হাতে রেখে এ্যাটাক করতে পারি। সেগুলো আমাদের পরিকল্পনা আছে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের উইকেটে বাউন্স অনেক ধারাবাহিকভাবে আসে। একজন ব্যাটসম্যান যখন সেট হয়, তখন কিন্তু রান করা সহজ হয়। যা আমাদের উইকেটেও কঠিন। কারণ, একটা বল থেমে আসে আবার পরেরটা দ্রুত আসে। সেদিক থেকে বলব ভাল খেলার সুযোগও আছে। কিন্তু অনেক হার্ডওয়ার্ক করতে হবে। দুটোর মিল রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখন শুধু করে দেখানোর সময়। এশিয়ার বাইরের দেশগুলো স্পিনে দুর্বল। তাদের জন্য স্পিনটা কঠিন। যা আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। পেস বোলিং নিয়ে একটু কাজ করতে হবে। বিশেষ করে শেষ দিকের বোলিংয়ে। এভাবে ভাল করতে পারলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও ভাল করা যাবে।’ মুশফিক ব্যক্তিগতভাবেও দলকে কিছু দিতে চান। যা এর আগে ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপ খেলে দিতে পারেননি। দুই বিশ্বকাপে ১৪ ম্যাচে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছেন মুশফিক। মাত্র ১টি অর্ধশতক আছে। ২১.২০ গড়ে রান ২১২। যা দলের নির্ভরযোগ্য একজন ব্যাটসম্যানের সঙ্গে মানানসই নয়। এবার তাই মুশফিক চান, ‘টার্গেট তো সবারই থাকে ভাল খেলা ও ধারাবাহিক পারফর্ম করা, এক শ’ করা। আমারও সে রকম কিছু আছে। যখনই সুযোগ পাব ম্যাক্সিমাম যেন অর্জন করতে পারি। ম্যাচের সেরা হতে পারি এবং আমার দল যেন সেটার জন্য জিতে। কিন্তু স্কোর অনেকেই করেন কিন্তু ম্যাচ না জেতাতে পারলে সে স্কোরের কোন ভিত্তি নেই। চেষ্টা থাকবে দল হিসেবে যেন ভাল খেলি। ছয়টা ম্যাচ পাব, চেষ্টা করব ম্যাক্সিমাম যতটুকু করা যায়।’
×