ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জ্বালাও পোড়াওয়ের কন্ট্রোল রুম!

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

জ্বালাও পোড়াওয়ের কন্ট্রোল রুম!

শংকর কুমার দে ॥ অবরোধের নামে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে মানুষজন মারার জন্য অঘোষিত কন্ট্রোল রুম খোলার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। একটি কন্ট্রোল রুম দেশে আর একটি কন্ট্রোল রুম হচ্ছে বিদেশে। কন্ট্রোল রুম থেকে টেলিফোনে রাজধানী, জেলা ও শহর পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশ দিচ্ছে ইন্ধনদাতারা। ইন্ধনদাতাদের কাছ থেকে নির্দেশ আসার পর পরই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে নিরীহ নিরপরাধ মানুষজনকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। আর বহির্বিশ্বে অবরোধ সফল হচ্ছে বলে প্রচার করার কৌশল নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানান, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা ১৪ দিনের অবরোধের বলি হচ্ছে ২৮ জন। এরমধ্যে সর্বনাশা পেট্রোল বোমায় ও পেট্রোল ঢেলে গাড়িতে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে ১৬ জনকে। আহত হয়েছে শতাধিক, যার মধ্যে অনেককেই পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে সারাজীবন কাটাতে হবে। কন্ট্রোল রুম থেকে টেলিফোনে নির্দেশ আসার পর পরই নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় অবস্থান মজবুত রাখতে পেট্রোল বোমা ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে মানুষজন পুড়িয়ে মারছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে কন্ট্রোল রুম থেকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। কন্ট্রোল রুম থেকে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় টেলিফোনের মাধ্যমে নির্দেশ পাচ্ছেন। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতারা আবার থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশ দিচ্ছেন। এভাবে একাধিক ধাপ বা পর্যায় পেরিয়ে নির্দেশ যাচ্ছে ভাড়াটিয়া পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারী বোমাবাজদের কাছে। নির্দেশ পাওয়ার পর তারা যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে মানুষজনকে জীবন্ত দ্বগ্ধ করে পুড়িয়ে মারছে। সূত্র জানায়, যানবাহনে পেট্রোল বোমা ও পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়ার ঘটনা পরদিন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টি মিডিয়ায় প্রকাশ পাচ্ছে। এই খবরগুলো পৌঁছে দেয়া হচ্ছে কন্ট্রোল রুমে। কন্ট্রোল রুম পরিচালনাকারীদের কাছে যে এলাকার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে যত বড় করে প্রকাশ পাচ্ছে সেই এলাকার নির্দেশ পালনকারী নেতার তত বেশি কদর বেড়ে যাচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে দলে বড় পদ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এভাবে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে মানুষজন পুড়িয়ে হত্যা ও আহত করে টানা ১৪ দিনের অবরোধ টেনে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, রবিবার রাজধানী ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ইডেন কলেজের ছাত্রী বহনকারী গাড়িতে আগুন ধরিয়ে চার ছাত্রীকে আগুনে দ্বগ্ধ ও নারায়ণগঞ্জের একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ডাক্তার দম্পতিসহ ২০ জনকে দ্বগ্ধ করার ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। এর আগের দিন গাজীপুরে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে এক ট্রাক হেলপারকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তার আগের দিন বরিশালেও পেট্রোল বোমা মেরে পুড়িয়ে মারা হয়েছে আরও একজনকে। এর আগে রংপুরে ছয়জনকে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনাগুলোকে বিদেশে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে জানানো হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়া, বোমাবাজি, ভাংচুর করে নিরীহ নিরপরাধ মানুষজনকে হত্যার ঘটনাগুলো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের বিএনপির কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ থেকে অবরোধ ও অবরোধ সফল করার জন্য নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন এবং লন্ডনে বসে বিএনপির সিনিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের অবরোধ ও অবরোধ পালনকারী নেতাদের খোঁজখবর নেয়াসহ দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশে এখন অবরোধের নামে মানুষজনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনাকেও সাফল্য বলে দাবি করা হচ্ছে বলে খবর পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা এবং বোমাবাজির ঘটনায় যারা জড়িত, দুর্বৃত্ত ও দুর্বৃত্তদের অর্থায়ন, মদদদাতা, ইন্ধনদাতাদের গ্রেফতারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×