ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অর্জন

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অর্জন

এবারে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এক ধরনের প্রাপ্তি এবং অর্জনে কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ হচ্ছে। ১৯৭১ সালের নয় মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও পরবর্তী ৪৩ বছর ধরে আমরা পরাজিত শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধরত আছি। ১৯৭৫ সালে এসব পাকিস্তানপন্থী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি পরাজিত শত্রুরা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। নিজ দেশে পরবাসী হয়ে আমাদের সহ্য করতে হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণে পবিত্র সংসদে মন্ত্রীর বেশে, কখনও বা লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে লাখো শহীদের পবিত্র ভূমি মহান শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে স্বাধীনতা দিবসে কলঙ্কের ছায়া ফেলতে। জানি না জাতি কিভাবে এমন করুণ মুহূর্তগুলো সহ্য করেছিল। আমাদের অস্তিত্বের লড়াই বারবার বিপন্ন হয়েছে, তবু থেমে যায়নি। যে বিরোধী শক্তিরাই ক্ষমতায় আসুক না বাঙালী জাতি এ অপশক্তিকে সংগ্রামের মাঝেই মোকাবিলা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি কোনদিনই এদেশের ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। এমনই বিপন্ন মুহূর্তে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের উদ্যোগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ মানুষের হত্যাকারী, লাখ লাখ মা-বোনের ধর্ষণকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ১৯৯২ সাল থেকে নিরলসভাবে আপোসহীন প্রতিবাদ জানিয়ে চলেছে। শহীদ জননীর প্রয়াণের পর থেকে তাঁর ¯েœহধন্য-আদর্শধন্য সন্তানরা একইভাবে এ সংগঠনের কাজ অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে চলেছে। এই আন্দোলন এগিয়ে নেবার জন্য পুরোভাগে যাঁদের নাম না বললেই নয়, তাঁরা হলেন বিশিষ্ট লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির এবং কাজী মুকুল, যাঁদের অবদান জাতি চিরজীবন মনে রাখবে। এই আন্দোলনের প্রথম থেকে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন তাঁরা হলেনÑ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, শহীদ জায়া সালমা হকসহ আরও অনেকে। শহীদ জননীর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে আমাদের নতুন প্রজন্ম ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের শাহবাগ অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। নতুন প্রজন্মের এমন ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান সারাবিশ্বের তরুণ সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। শহীদ জননীর এ আন্দোলনের সমাপ্তভার অর্পিত হয়েছে তরুণ সমাজের ওপর। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের সফলতাÑ যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালকে আন্তরিক ধন্যবাদ, জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের অধিকার ও মর্যাদার বিষয়টিকে নির্মূল কমিটিই সামনে এনেছে। ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ গণআদালতে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন কুষ্টিয়ার তিন বীরাঙ্গনা নারী। গণআদালতে তাঁর সাক্ষ্যপ্রদানের সুযোগ না থাকলেও বাড়িতে ফিরে তাঁরা সমূহ বিড়ম্বনা ও অপমানের শিকার হয়েছিলেন। নির্মূল কমিটি তাঁদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছে। ১৯৯৬ সালে প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নির্মূল কমিটি এই বীরাঙ্গনাদের নিয়ে গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কথা শুনেছেন, আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছেন। ২০১৪ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের নির্যাতিত নারীদের মুক্তিযোদ্ধার সম্মান প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আমি নিজেকে বহু বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে রেখেছিলাম সামাজিক অপমান ও মর্যাদাহীনতার কারণে। ১৯৯৯ সালের ১০ নবেম্বর জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে নির্মূল কমিটি আমাকে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করেছে, যে অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের অধিনায়কবৃন্দ এবং বরেণ্য বুদ্ধিজীবীগণ। সেই থেকে আমি সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছি শহীদ জননীর আন্দোলনের সঙ্গে। নির্যাতিত নারীদের উৎসাহিত করছি যুদ্ধাপরাধী ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য। ১৯ জানুয়ারি ২০১৫
×