ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিভিন্ন মহলের শোক ॥ মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন হকি তারকা জুম্মন লুসাই

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

বিভিন্ন মহলের শোক ॥ মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন হকি তারকা জুম্মন লুসাই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সাবেক জাতীয় হকি খেলোয়াড় জুম্মন লুসাই আর নেই। রবিবার দুপুরে বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই সাবেক তারকা খেলোয়াড় সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে পরলোকগমন করেন। বেশ কয়েকদিন যাবত গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত জুম্মন লুসাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ব্রেন হ্যামারেজে আক্রান্ত হয়ে ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ মেডিক্যালে ভর্তি হন। সেখান থেকে পরেরদিন তাকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু শেষতক মৃত্যু নামক অমোঘ নিয়তির কাছে হার মানেন এক সময়কার মাঠ কাঁপানো হকি তারকা জুম্মন লুসাই। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। এছাড়াও জুম্মন লুসাইয়ের মৃত্যুতে ঊষা ক্রীড়া চক্র ও আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবও শোক জানিয়েছে। ১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট সিলেটের লুসাই পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন দেশবরেণ্য হকি তারকা জুম্মন। তার পিতা হারেঙ্গা লুসাই হকি খেলোয়াড় ছিলেন। তার চাচাত ভাই রামা লুসাই হকির পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় ছিলেন। তার ভাই জুবেল লুসাইও হকি খেলোয়াড়। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ১৯৮২-৯০ পর্যন্ত একটানা খেলেছেন তারকাখ্যাতি নিয়ে। জুম্মন লসাই তার খেলোয়াড়ি জীবনের স্বর্নালি সময় কাটিয়েছেন আবাহনীতে, খেলেছেন প্রায় দেড় যুগ। হকির নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষটি পরিবার ছেড়ে আবাহনী ক্লাবেই থাকতেন। চিকিৎকরা জানিয়েছেন শরীরের ঠিকমত যতœ না নেয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি কিডনি, যকৃত ও মস্তিষ্ক সমস্যায় ভুগছিলেন। শুক্রবার তাকে ভর্তি করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি)। কিন্তু শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ থাকায় তাকে বাঁচাতে পারেননি চিকিৎকরা। প্রসঙ্গত, জুম্মন লুসাইকে বলা হতো ‘পেনাল্টি কর্নার স্পেশালিস্ট।’ উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে জুম্মন লুসাই একমাত্র হকি খেলোয়াড় যিনি বিশ্ব একাদশে খেলার সযোগ পেয়ে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছিলেন বাংলাদেশের। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ১৯৮৫ সালে এশিয়া কাপে ইরানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেন। ১৯৭৮ সালে প্রথম বিভাগ বাংলাদেশ পুলিশ হকি দলের জার্সিতে খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন। পরবর্তিতে দীর্ঘদিন দাপটের সঙ্গে খেলেছেন দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনীতে। পরবর্তিতে খেলোয়াড়ি জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর আবাহনী লিমিটিডের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণময় খেলোয়াড়ি জীবনে জুম্মন ১৯৮২ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত নবম এশিয়ান গেমসে, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় এশিয়া কাপে, ১৯৮৬ সালে শিউলে অনুষ্ঠিত দশম এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অপরিহার্য সদস্য ছিলেন এই কৃতী সেন্টার হাফ। জাতীয় দলের সহঅধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রয়াত জুম্মন লুসাই। এছাড়া সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের হয়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। বড় মাপের খেলোয়াড়ের সন্মান হিসেবে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ গেমস এ তিনি মশাল প্রজ্জ্বলন করেছিলেন। মরহুমের মরদেহ আজ ১২টায় মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে আনা হবে। তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ক্লাব কর্মকর্তা, হকি সংগঠক, সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়রা উপস্থিত থাকবেন। হকি তারকা জুম্মন লুসাইয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন, আবাহনী ক্লাব লিমিটেড, মোহামেডান স্পোর্টিং লিমিটেড, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশন, সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবার ও বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি।
×