ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শপথ গ্রহণের পর প্রধান বিচারপতির দ্রুত সিদ্ধান্ত ॥ আপীল বেঞ্চ পুনর্গঠন

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

শপথ গ্রহণের পর প্রধান বিচারপতির দ্রুত সিদ্ধান্ত ॥ আপীল বেঞ্চ পুনর্গঠন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। তিনি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হলেন। শনিবার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ নতুন প্রধান বিচারপতিকে শপথ পড়ান। এদিকে, শপথ গ্রহণের পর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বেঞ্চ পুনর্গঠন করেছেন সদ্য দায়িত্ব পাওয়া প্রধান বিচারপতি। পরে বিকেলে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগের এই জ্যেষ্ঠ বিচারককে গত সোমবার প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ছাড়াও কয়েকজন সাবেক প্রধান বিচারপতি উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। শপথ অনুষ্ঠান শুরুর কয়েক মিনিট আগে প্রধান বিচারপতির পোশাক পরে দরবার হলে প্রবেশ করেন এসকে সিনহা। পরপরই দরবার হলে ঢোকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মধ্যে ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, তিন বাহিনীর প্রধান, আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। শপথের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নতুন প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এদিকে, দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগে কোন ধরনের সিরিয়াল লঙ্ঘন না করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেষ্ঠ্য আইনজীবী ড. কামাল হোসেনসহ আইনজ্ঞরা। ১৯৫১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের আলীনগর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বিচারপতি এসকে সিনহা। তার বাবা প্রয়াত ললিত মোহন সিনহা ও মা ধনাবতী সিনহা। বিচারপতি এসকে সিনহা চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি পাস করার পর ১৯৭৪ সালে সিলেট জেলা জজ আদালতে এ্যাডভোকেট হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯৭৮ সালে হাইকোর্টে এবং ১৯৯০ সালে আপিল বিভাগে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০০৯ সালের ১৬ আগস্ট তাকে আপীল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আপীল বিভাগের যে বেঞ্চ বাতিল করেছিল, এস কে সিনহা ছিলেন তার অন্যতম সদস্য। এছাড়া ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় দেয়া বেঞ্চেও সদস্য হিসাবে ছিলেন তিনি। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে সুপ্রীমকোর্ট থেকে মৃত্যুদ- দেয়ার ঐতিহাসিক রায়ে বেঞ্চেও ছিলেন তিনি। যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপীল শুনানিতেও ছিলেন এসকে সিনহা। আরেক যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জমানের আপীল আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণকারী বেঞ্চের নেতৃত্বও দিয়েছেন বিচারপতি এসকে সিনহা। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বেঞ্চ পুনর্গঠন প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বেঞ্চ পুনর্গঠন করেছেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। শনিবার সকালে বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পর আদালতে এসে তিনি বেঞ্চ পুনর্গঠন করেন বলে জানিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার এসএম কুদ্দুস জামান। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি নিজে ১ নম্বর বেঞ্চের নেতৃত্বে থাকছেন এবং ২ নম্বর বেঞ্চের নেতৃত্বে দেয়া হয়েছে বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের অন্য বিচারকরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাছান ফয়েজ সিদ্দিকী। আর বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সঙ্গে ওই বেঞ্চের বিচারকরা হলেন- বিচারপতি মোঃ ইমান আলী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তবে এর আগে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ছিলেন আপীল বিভাগের ১ নম্বর বেঞ্চে, যে বেঞ্চে যুদ্ধাপরাধের মামলাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হয়ে থাকে। এর আগে সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ছিল সুপ্রীমকোর্টের ১ নম্বর আপীল বেঞ্চ। এবং দ্বিতীয় বেঞ্চটি ছিল বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার নেতৃত্বে। সাধারণত সুপ্রীমকোর্টের ১ নম্বর আপীল বেঞ্চেই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আপীল মামলার শুনানি হয়ে থাকে। যুদ্ধাপরাধের মামলার আপীল শুনানিও হয় আপীল বিভাগের ১ নম্বর বেঞ্চেই। খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার একাধিক লিভ টু আপীল আবেদনের এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বাড়ি সংক্রান্ত আপীল মামলার শুনানি হয়েছে এ বেঞ্চে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামি জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার পক্ষে-বিপক্ষে দায়ের করা দুইটি আপীল আবেদনেরও শুনানি হয়েছে আপীল বিভাগের ১ নম্বর বেঞ্চে। আপীল শুনানি শেষে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদ- দিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। পরে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তার মৃত্যুদ- কার্যকরও হয়েছে। এই ঐতিহাসিক রায় প্রদানকারী বেঞ্চেও ছিলেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। এছাড়া ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপীল আবেদনের শুনানিও হয় আপীল বিভাগের ১ নম্বর বেঞ্চে। সংখ্যা গরিষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে সাঈদীর আমৃত্যু কারাদ- হলেও একমাত্র বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীই যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে দিয়েছিলেন মৃত্যুদ-। যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জমানের আপীল মামলার শুনানিও হয়েছে এ বেঞ্চেই। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের দেয়া সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ-ের রায়ই বহাল রেখেছেন সুপ্রীমকোর্টের ১ নম্বর আপীল বেঞ্চ। কামারুজ্জমানের আপীল শুনানি গ্রহণকারী বেঞ্চেও ছিলেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। শনিবার সকালে বঙ্গভবনে দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, যিনি এসকে সিনহা নামেই সমধিক পরিচিত। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের এই জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে গত সোমবার প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা নিবেদন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছেন প্রধান বিচারপতি। এ সময় তাকে স্বাগত জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান, সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান। এরপর প্রধান বিচারপতি তাদের সঙ্গে নিয়ে স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তারা শহীদদের স্মরণে কিছুসময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।
×