ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সেমিনার

বিএনপিকে অবৈধ ঘোষণার দাবি এইচটি ইমামের

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫

বিএনপিকে অবৈধ ঘোষণার দাবি এইচটি ইমামের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বিএনপিকে অবৈধ ঘোষণার দাবি জানিয়ে বলেছেন, সংলাপ হবে গণতন্ত্রমনাদের সঙ্গে। কোন আঁততায়ী ও দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। যারা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের মূলনীতির বিশ্বাসী নয়, তাদের কিসের আলোচনা? বিএনপিকে সংলাপ করতে হলে আগে যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গীগোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার লিখিত দিতে হবে। এরপর বিনয়ের সঙ্গে বললেই কেবল আগামী নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নিয়ে সংবিধানের মধ্যে থেকে তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি আয়োজিত ‘গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও সাফল্যের এক বছর’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপিকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা উচিত তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে এইচটি ইমাম বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আদালতও ইতোমধ্যে সামরিক শাসনগুলো অবৈধ ঘোষণা করেছে। সামরিক শাসকদের সব কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জিয়াউর রহমানের দল বিএনপিও অবৈধ। তাছাড়া বিএনপি এখন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী কর্মকা- চালাচ্ছে। এসব কারণে বিএনপিকে অবৈধ ঘোষণা করার বিষয়টি এখন ভাবার সময় এসেছে। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের কনফারেন্স লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান। আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আবদুর রশীদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি, ৭১ টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল বাবু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল প্রমুখ। সেমিনারটি পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি নাকচ করে দিয়ে এইচটি ইমাম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৯৯৬ সালে একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে হয়েছিল। বর্তমানে সেই প্রয়োজনটা আর নেই। তাছাড়া আদালত এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক আখ্যায়িত করে রায় দিয়েছে। আর মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে কি হবে না, সেটা নির্ভর করছে সরকারের ওপর। সরকার চাইলে দুই ২ বছর পর নির্বাচন হতে পারে, আবার ৪ বছর পরও হতে পারে। আবার চাইলে তার আগেও হতে পারে। তিনি বলেন, সংবিধানের মধ্যে থেকে সংলাপ হতে পারে। সংবিধানের মধ্যেই অনেক কিছু সংযোজন করা যেতে পারে। নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও ক্ষমতা দেয়া যেতে পারে। সরকারের সাফল্যগুলো জনগণের কাছে প্রচারিত না হওয়ার জন্য সরকারকেই দায়ী করে এইচটি ইমাম বলেন, সরকারের পক্ষে প্রচার যতটুকু হচ্ছে তার পুরোটাই করছে আওয়ামী লীগের প্রচার সেল। ভালো কাজগুলোর প্রচার না হওয়ায় তথ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সকলের একটা ক্ষোভ রয়েছে। প্রচারের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলো দায়সারা গোছের কিছু কাজ করে তাদের দায়িত্ব শেষ করে। বছরে তারা একটি প্রকাশনা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই করে না। তিনি বলেন, তারেক জিয়া লন্ডনে বসে আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। সরকারের এখন দায়িত্ব হবে যুক্তরাজ্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বলা, তারেক জিয়াকে তাদের দেশ থেকে বের করে দেয়া হোক, নতুবা আমাদের হাতে হস্তান্তর করা হোক। দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে বাঁচিয়ে রাখা প্রসঙ্গে এক বক্তার বক্তব্যের জবাবে সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, খালেদা জিয়া নিজেই আত্মহত্যা করছেন। আর যিনি আত্মহত্যা করতে চান তাঁকে কী করে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিটি কার্যক্রম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রবিরোধী। যারা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করে তাদের রাজনৈতিক অধিকার থাকতে পারে না। বিএনপিকে পাকিস্তানপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করে প্রচার- অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই আওয়ামী লীগকে ভারতপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে আসছে। অথচ বিএনপি মনেপ্রাণে পাকিস্তানপন্থী হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের প্রচার আগে দেখা যায়নি। সাম্প্রতিক সময় এই প্রচার কিছুটা দেখা যাচ্ছে। এই প্রচার আরও জোরদার করতে হবে। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরও ত্বরান্বিত করতে আপীল বিভাগে একটি বিশেষ বেঞ্চ বসানোর দাবি জানান। ডাঃ দীপু মনি বলেন, বিএনপি একটি নিবন্ধিত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হলেও তাদের কার্যক্রম জঙ্গী সংগঠনের মতো। কাজেই জঙ্গী সংগঠনের মতো তাদের মোকাবেলা করতে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জঙ্গীবাদী কার্যক্রম বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক আচরণ করলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের গতির সঙ্গে তাঁর দল আওয়ামী লীগকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মোজাম্মেল বাবু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতির সঙ্গে তাঁর দল আওয়ামী লীগ তাল মেলাতে পারছে না। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাঙামাটির সরকারী মেডিক্যাল কলেজের কার্যক্রম উদ্বোধন ঘোষণার সময় সেখানকার ছাত্রলীগ-যুবলীগ তাঁর বিরোধিতা করেছে। এটা সঠিক নয়।
×