ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালে দর্শনার্থী নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫

শাহজালালে দর্শনার্থী নিষিদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এখন থেকে কোন দর্শনার্থী হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না। নিষিদ্ধ করা হয়েছে টিকেট কেটে বাণিজ্যিক দর্শনার্থীদেরও। এমনকি এসাইনমেন্ট ছাড়া সিভিল এ্যাভিয়েশনের কোন স্টাফও আগের মতো অহরহ বিমানবন্দরে প্রবেশাধিকার পাবে না। মঙ্গলবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক জরুরী বৈঠকে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে কতদিন এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে তা জানাতে পারেনি সিভিল এ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, আপাতত কোন দর্শণার্থী বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করবে না সেটাই জানি। পরবর্তী নিদের্শ না দেয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচী শুরুর দিন থেকেই্ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকায় গাড়ি ভাংচুর অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলার মতো ঘটনা ঘটে। বিশ্ব এজতেমার আখেরী মোনাজাতের দিনও শাহজালাল বিমানবন্দর বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এ হুমকির দুদিন আগে বিমানবন্দর গোলচক্কর এলাকায় একটি ট্র্রাক্সিক্যাবের ভেতরে যাত্রী বেশে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরানোর সময় হাতে-নাতে আটক করা হয় একজনকে। তাকে ওই দিনই বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন ছয় মাসের কারাদ- প্রদান করেন। মূলত এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার এ আদেশ জারি ও কার্যকর করে। একই সঙ্গে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে । আর্মড পুলিশ জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভিন্ন স্থানে নাশকতামূলক কর্মকা-ের পরিপ্রেক্ষিতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একজন কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার থেকেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দর্শনার্থীদের টিকেট কেটে ভেতরে ঢোকার সুযোগ। প্রতিদিন গড়ে এ বিমানবন্দর ব্যবহার করে ১০ হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করেন। যাত্রীদের বিদায় ও অভ্যর্থনা জানাতে যাত্রীদের পরিবার-পরিজনও বিমানবন্দরে যান। এ কারণে বিমানবন্দরে সারাক্ষণই বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম থাকে। এদের মধ্যে প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ৩০০ টাকা করে টিকিট কেটে প্রিয়জনদের বিমানবন্দরের ভেতরে এগিয়ে দিতে কিংবা অভ্যর্থনা জানাতে কনকর্স হল পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ পান। মঙ্গলবারের এ সিদ্ধান্তের কারণে সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিমানবন্দরের ভেতরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থা ও সিভিল এ্যাভিয়েশনের অনুমতি নিয়েও প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক লোক বিমানবন্দরে প্রবেশ করার সুযোগ পেতো। তাদের ওপরও এখন কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। যাঁরা ভিআইপি ও সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করার অধিকারী তাঁদের ব্যাপারেও ব্যাপক নজরদারি থাকবে। এদিকে বিমানবন্দরের গেট ইজারাদারেরা রাতেই জরুরী বৈঠকে বসেন। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একজন সদস্য জানান, সিভিল এ্যাভিয়েশন আগে থেকে কোন ধরনের আলোচনা সমঝোতা ছাড়াই একতরফা সিদ্ধান্ত। এতে ইজারাদার যতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার চেয়েও বেশি দর্শনার্থীরা দুর্ভোগের শিকার হয়। যাঁরা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে ইতোমধ্যেই বিমানবন্দরে এসে পড়েছে তাঁরা যদি আগেই এ সিদ্ধান্ত জানতো তাহলে ঢাকাতেই আসতো না। এ বিষয়টি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারতো। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের অধিনায়ক রাশেদুল ইসলাম খান বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার স্বার্থে সবাইকে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে হবে। এ সিদ্ধান্তে হয়তো দর্শনার্থীদের সাময়িক কষ্ট হবে। এপিবিএন সব সময়ই সমান গুরুত্ব দিয়ে বিমান বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
×