ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

১১তম সাক্ষীর জবানবন্দী

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ সিরাজ মাস্টারের নির্দেশে টেংরাখালীতে ৫ জনকে রাজাকাররা হ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ সিরাজ মাস্টারের নির্দেশে টেংরাখালীতে ৫ জনকে রাজাকাররা হ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১১ তম সাক্ষী হাজরা জাহিদুল ইসলাম ওরফে মন্নু জবানবন্দীতে বলেছেন, সিরাজ মাস্টারের নির্দেশে টেংরাখালীতে রাজাকাররা গুলি করে ৫ জনকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন সতীশ চন্দ্র ম-ল, আশরাফ আলী খান, বাবু খান, নজরুল শেখ এবং মনীন্দ্র নাথ সাহা। এ ছাড়া সিরাজ মাস্টার লতিফ তালুকদার ও আকরাম খানের নির্দেশে বাগেরহাটে ৫০০ জনকে হত্যা করে। সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে আংশিক জেরা করেন। আজ আবার তাকে জেরা করার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। সাক্ষীর জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন । সাক্ষী তার জবানবন্দীতে আরও বলেন, ২২ এপ্রিল ১৯৭১ সালে মাওলানা একেএম ইউসুফ, ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন, রজব আলী ফকির ও আসামি সিরাজ মাস্টার লঞ্চযোগে বাগেরহাট থেকে কচুয়ায় আসে। কচুয়ার ডাকবাংলোতে অবস্থান নিয়ে স্থানীয় মুসলিম লীগের লোকজনের সহায়তায় একটি মিটিং করে। ঐ সভায় তারা বলেন, পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য রাজাকার বাহিনী গঠন করা হবে এবং যারা রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করতে ইচ্ছুক তারা তাদের কাছে নাম দিতে পারেন। এই ঘোষণার পরে আসামি আব্দুল লতিফ তালুকদারের নেতৃত্বে আনুমানিক ১০০/১৫০ জন রাজাকার বাহিনীতে যোগদানের জন্য নাম লিপিবদ্ধ করেন। পরের দিন আব্দুল লতিফ তালুকদার ও আসামি আকরাম খানের নেতৃত্বে ঐ ১০০/১৫০ লোক রাজাকারের প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য খুলনায় যায়। ৭দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা ফিরে এসে কচুয়ায় রাজাকার ক্যাম্প করে। এর পর আমিসহ শেখ ফজর আহম্মেদ, সুবোধ চন্দ্র করাতী, মোঃ শুকুর আলী, আব্দুল হাকিম বালী, আব্দুল হাকিম শেখসহ অনেকে ভারতে গিয়ে সাতচুড়া যুব প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। দীর্ঘ এক মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পরে ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। এবং নিজ এলাকায় অবস্থান নেই। কচুয়ায় স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পটি কিভাবে উৎখাত করা যায় সে দয়িত্ব আমাদের দেয়া হয়। আমরা এলাকার রাজাকারদের অবস্থান ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, একাত্তরের ২২ নবেম্বর আমরা কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পের সামনে ভৈরব নদের অপরপারে অবস্থান গ্রহণ করি । ঐদিন বিকেল ৪টার দিকে আসামি সিরাজ মাস্টার, লতিফ তালুকদার এবং আকরাম খানের নেতৃত্বে ১০/১২ রাজাকার টেংরাখালী থেকে আশরাফ আলী খান ও সতীশ চন্দ্র ম-ল, কচুয়া থেকে বাবু খান, নজরুল শেখ এবং বারইখালী থেকে মনীন্দ্র নাথ সাহাকে ধরে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসে। রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে এসে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। তাদের আত্মীয়স্বজনরা রাজাকার ক্যাম্পে এসে তাদের খোঁজখবর জানতে চাইলে তাদের ক্যাম্প থেকে বের করে দেয়। আমরা এই ঘটনা ভৈরব নদের অপরপার থেকে দেখতে থাকি।
×