ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মন্ত্রণালয়ে আজ জরুরী বৈঠক

যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি ফিরে পেতে পথনক্সা হচ্ছে ॥ সরকার ডব্লিউটিওর বালি প্যাকে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি ফিরে পেতে পথনক্সা হচ্ছে ॥ সরকার ডব্লিউটিওর বালি প্যাকে

এম শাহজাহান ॥ যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পেতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বালি প্যাকেজ বাস্তবায়ন চায় সরকার। এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি পথ নকশা তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি তৈরি হওয়ার পর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে তুলে দেয়া হবে। দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এ সুবিধা পাওয়া বাংলাদেশের অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করতে ডব্লিউটিওর কাছে জোরালো দাবি জানাবে বাংলাদেশ। বালি প্যাকেজের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চাওয়া হবে। এ লক্ষ্যে আজ ১১ জানুয়ারি রবিবার ডব্লিউটিও সংক্রান্ত জরুরী বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। জানা গেছে, এ বছরের ডিসেম্বরে ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের পরবর্তী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলন সামনে রেখে ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলো স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করছে। এ কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা বালি প্যাকেজের বাস্তবায়ন চাই। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক দেশে পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া গেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এ সুবিধা নেই। এ জন্য বালি প্যাকেজ বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এলডিসি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পাবে। একই সঙ্গে বালি সম্মেলনে গৃহীত অন্যান্য প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের রফতানি বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে। সূত্র জানায়, বালি প্যাকেজে তিনটি ইস্যু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইস্যু তিনটি হচ্ছে-ডেভেলপমেন্ট ইস্যু, বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি ও কৃষি। এগুলোর মধ্যে ডেভেলপমেন্ট ইস্যুর আওতায় চারটি এলডিসি দেশের ইস্যু ও মনিটরিং মেকানিজম রয়েছে। এলডিসি দেশের চারটি ইস্যু হচ্ছে- শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, রুলস অব অরিজিন, সার্ভিসেস ওয়েভার বাস্তবায়ন ও কটন ইস্যু। এছাড়া দোহা রাউন্ডের এজেন্ডাভুক্ত অবশিষ্ট ইস্যুসমূহ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট একটি ওয়ার্ক প্রোগ্রাম তৈরি করা হবে। এদিকে, শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, হংকং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব উন্নত দেশ এখনও কমপক্ষে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদান করেনি, তারা ডব্লিউটিওর আগামী সম্মেলনের আগে প্রদেয় এসব সুবিধা বাড়াবে। অন্যদিকে রুলস অব অরিজিন সহজ ও স্বচ্ছ করার জন্য প্রথমবারের মতো একটি গাইড লাইন তৈরি করা হয়েছে। যদিও এই গাইড লাইন অনুসরণ বাধ্যতামূলক নয়, তবুও এটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। কটন ইস্যু প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তুলা উৎপাদনকারী চারটি দেশ বেনিন, বারকিনা ফাসো, মালি ও শাদÑ এই চার দেশের জন্য তুলা রফতানিতে বাজার সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে তুলার জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান এবং উন্নত দেশে তুলা উৎপাদনের ওপর ডোমেস্টিক সাপোর্ট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্র মতে, ধনী দেশগুলোর কঠিন শর্তের বেড়াজালে পণ্য রফতানিতে স্বল্পোন্নত বা এলডিসি দেশের সুযোগ নিতে পারছে না বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডব্লিউটিওর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় রফতানিতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা নিশ্চিত হতে পারছে না। তবে এবার এলডিসি দেশের অনুকূলে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা, প্রেফারেন্সিয়াল বা শুল্কমুক্ত স্কিমের রুলস অব অরিজিন সহজ, শিথিল করা এবং সেবা খাতের বাণিজ্যে প্রেফারেন্সিয়াল মার্কেট একসেস প্রদান সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়ে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। হাতেগোনা কয়েকটি পণ্যের ওপর নির্ভর হয়ে রয়েছে দেশের রফতানি খাত। রফতানি বহুমুখীকরণ এবং উৎপাদিত পণ্যের রফতানি বাড়াতে বাজার সম্প্রসারণের চেষ্টা রয়েছে সরকারী-বেসরকারী উভয় খাতের। এজন্য ডব্লিউটিওর মিনিস্ট্রিয়াল পর্যায়ের কয়েকটি বৈঠকেও তুমুল দর কষাকষি করা হয়েছে। কিন্তু লাভ কিছুই হয়নি। তবে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা ডব্লিউটিও থেকে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে এগিয়ে রয়েছে। সূত্র জানায়, দেশের মোট রফতানির ৭৬ শতাংশই তৈরি পোশাক। তৈরি পোশাক রফতানির ৪০ শতাংশই আবার একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়ে থাকে। যার পরিমাণ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। এলডিসি দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধায় পোশাক রফতানি হওয়ার কথা। কিন্তু আফ্রিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এ সুবিধা আদায় করতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশকে তা দেয়া হয়নি। বরং সম্প্রতি যেসব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া ছিল তাও স্থগিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাজার সুবিধা পাওয়াটা রফতানিকারকদের প্রতিযোগিতার ওপর নয়, নির্ভর করে তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিওর পরিচালক নূরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, পোশাক রফতানিতেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা প্রয়োজন। অথচ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এটি বাংলাদেশ পায়। এ বিষয়টি সরকার ডব্লিউটিওর কাছে তুলে ধরবে। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরে ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বালি প্যাকেজ বাস্তবায়নে আবারও জোর দাবি জানানো হবে। আগামী রবিবারের বৈঠকে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। জানা গেছে, এলডিসি দেশ হিসেবে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে দ্রুত দেশের রফতানি বাজার আরও সম্প্রসারণ হবে। বাড়বে রফতানি। ভিশন-২১ বাস্তবায়নে উদ্যোক্তারা ৫০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির যে স্বপ্ন দেখছেন তা বাস্তবায়নে রফতানি বাড়াতেই হবে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, দ্রুত বাজার সম্প্রসারণ ও দেশের পণ্য রফতানি বাড়াতে হবে। টেক্সটাইল, ঘড়ি, চামড়াজাতপণ্য জুতো ও কৃষিজাত পণ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত ও রুলস অব অরিজিনের জটিলতায় ইউরোপে পূর্ণ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায় না। এই সুবিধা পেতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, যেসব দেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে সে সুযোগ এখন নিতে হবে। তবে এজন্য প্রয়োজন সরকারী নীতি সহায়তা।
×