ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায়ীরা এবার আইনের আশ্রয় নেবেন

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

ব্যবসায়ীরা এবার আইনের আশ্রয় নেবেন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের অর্থনীতির স্বার্থে হরতাল-অবরোধ বন্ধে সুযোগ থাকলে এফবিসিসিআই আইনের আশ্রয় নেবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, অতীতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানানো হলেও তাঁরা কথা শোনেনি। তাই এবার রাজনৈতিক সমঝোতার আহ্বান জানাবে না ব্যবসায়ীরা। এখন আমরা খতিয়ে দেখছি কী ধরনের আইনী ব্যবস্থা নেয়া যায়। শনিবার বিকেলে ‘দেশের বিরাজমান সহিংসতা এবং অবরোধের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি’ নিয়ে আয়োজিত এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে যে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল তা কাটিয়ে না উঠতেই আবারও রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সহিংসতা দেশের অর্থনীতিকে আবারও বিপদাপন্ন করে তুলছে। অবরোধ কর্মসূচীর নামে সহিংসতার মাধ্যমে দেশের সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের মতো অসুস্থ রাজনীতির বলি হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে। প্রয়োজন হলে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিচালনা পর্ষদ আমাকে সেই ম্যান্ডেট দিয়েছে। এখন আমরা খতিয়ে দেখছি কী ধরনের আইনী ব্যবস্থা নেয়া যায়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতার আহ্বান জানাবে না ব্যবসায়ীরা। অতীতে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি। এখন আমরা আর তাদের একসঙ্গে বসার অনুরোধ করছি না। প্রয়োজন হলে তারা নিজেরাই সেই উদ্যোগ নেবে। আমরা চাই ব্যবসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, হরতাল, অবরোধের কারণে তিনটি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হলোÑ পরিবহন, উৎপাদন ও পর্যটন। তিনি বলেন, পরিবহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শুধু যাত্রীদেরই ভোগান্তি হচ্ছে না, এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে উৎপাদন এবং পণ্য পরিবহন (সাপ্লাই চেইন) ব্যবস্থায়। পরিবহন না থাকায় কৃষি পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটছে, যার কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কাঁচামাল সরবরাহ না হওয়ায় উৎপাদন কর্মকা-ও ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প পুঁজিহারা হচ্ছে। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটছে। অবরোধ, হরতালের কারণে পরিবহন খাত অচল হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দুই লাখের বেশি বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান অচল হয়ে আছে। ২০ লাখের বেশি পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এই খাতে দৈনিক ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, পর্যটন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কক্সবাজারে ২০০ থেকে ৩০০ হোটেলে মন্দা ভাব দেখা দিয়েছে। হোটেলে কোন লোকজন নেই। অবরোধ ও হরতালের কারণে দৈনিক দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে থাকে আর ক্ষতির সিংহভাগই ব্যবসায়ীদের বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিরাজমান রাজনৈতিক সহিংসতায় ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে ব্যাংকের সুদ মওকুফের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, উৎপাদন ব্যবস্থা বন্ধ থাকা সত্ত্বেও শিল্প প্রতিষ্ঠানের খরচ মেটানোর জন্য অতিরিক্ত সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে ব্যাংকের শ্রেণীবিন্যাসকৃত ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এটি ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কাজী আকরাম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে যদি বেসরকারী খাতের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যার প্রভাবে দেশে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে বলে তিনি মনে করেন। দেশের কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে যে কোন মূল্যে বিরাজমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অক্ষুণ্ণ রাখা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি মনোয়ারা হাকীম আলী, সহসভাপতি হেলাল উদ্দিনসহ অন্যান্য পরিচালকরা।
×