ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতি সমিতির সেমিনারে বারকাত

বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে দেশ মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যেত

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১০ জানুয়ারি ২০১৫

বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে দেশ মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যেত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেছেন, দেশ স্বাধীনের পর একটি পরাজিত গোষ্ঠী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাক পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করে। এই হত্যাকা-ে দেশী ও বিদেশী শক্তি কাজ করেছিল। বঙ্গবন্ধু আজ বেঁচে নেই। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজকের বাংলাদেশের অর্থনীতি মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে অনেক গুণ ছাড়িয়ে যেত। আমার আলোচিত নিবন্ধ বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন-দর্শনের নিরিখে বঙ্গবন্ধু ‘বেঁচে থাকলে’ বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ আজ কোথায় দাঁড়াত?- এমন ভাবনাটি অনেকটা সম্ভাবনার মতো। কতকগুলো অর্থনৈতিক চালক ও অনুমিতির সমন্বয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তাত্ত্বিকভাবে আমি এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছি। আমার নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুসহ বাংলাদেশ এবং তথ্যগতভাবে অর্থনৈতিক চিত্র ও উপাত্তের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার তুলনা করেছি। যেখানে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুসহ বাংলাদেশ ও আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাত্ত্বিক ওই লেখচিত্রে বঙ্গবন্ধুসহ বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) হওয়ার কথা ছিল ৪২,১৫৮ কোটি ডলার। আজকের বাংলাদেশের জিডিপি ৮,৮৫৫ কোটি ডলার আর মালয়েশিয়ার বর্তমান জিডিপি ১৫,৪২৬ কোটি ডলার। চিত্রে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুসহ বাংলাদেশ মালয়েশিয়ারও বহুগুণ ওপরে অবস্থান করছে। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমরা কি হারালামÑ অর্থনৈতিক তথ্যপ্রমাণেও তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ঊনবিংশতম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ২০১৫-এর দ্বিতীয় দিনের বিশেষ প্লেনারি অধিবেশন : ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি ও উন্নয়ন পুনর্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে তাঁর “বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন-দর্শনের নিরিখে বঙ্গবন্ধু ‘বেঁচে থাকলে’ বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ আজ কোথায় দাঁড়াত?” নিবন্ধ পাঠ করার সময় তিনি এসব কথা বলেন। আবুল বারকাত বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধুহীন এই বাংলাদেশের তুলনায় আমাদের জিডিপি প্রায় ৫ গুণ বেশি হতো। মাথাপিছু জিডিপিতেও আমাদের মালয়েশিয়াকে অতিক্রম করার কথা ছিল; যা হওয়ার কথা ছিল প্রায় ৬০৬১ ডলার, আর মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ৫৩৩৪ ডলার। মূল চলকসমূহের নিরিখে ‘বঙ্গবন্ধুসহ’ আজকের বাংলাদেশ আজকের মালয়েশিয়াকে শুধু অতিক্রমই করত তাই-ই নয়, বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের সমতাভিমুখী বৈশিষ্ট্যের কারণে তা হতো প্রগতিশীল বৈষম্যহ্রাসকারী মাথাপিছু উৎপাদন। যাকে বৈষম্যহ্রাসকারী মাথাপিছু প্রকৃত আয় হিসেবেও অভিহিত করা যায়। তিনি আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ মানে কী? এটা আমরা ভাবি না। ৩০ লাখ শহীদ খুব ভাবনার বিষয়। ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে ৩০ লাখ পরিবার জড়িত। আর এই ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে ২৮ লাখই গ্রামের মানুষ। তাদের পরিবারের কতটা কষ্ট হয়েছে তা ঠিকভাবে কেউ অনুধাবনই করতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হলেন অথবা চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেলেন তার পরিবারের সংশ্লিষ্ট ক্ষতি-মূল্য অনেক, এর ফলে জিডিপি বৃদ্ধির হার কমে গেল। জাতীয় সম্পদ ও জাতীয় স্টক হ্রাস পেল। যুদ্ধে অংশ নেয়া নারীদের বীরাঙ্গনা বলা হয়, এই শব্দটি যার দেয়া তিনি বৈষম্য সৃষ্টি করে রেখেছেন। নিবন্ধে বলা হয়, জনগণই ইতিহাস সৃষ্টি করে, জনগণই অপার শক্তির মূল উৎস। জনগণের প্রতি গভীর ভালবাসাÑ এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-দর্শনের মূল ভিত্তি। বিশেষ করে জনগণের স্বার্থ বিশেষত দরিদ্র মেহনতী মানুষের স্বার্থ ছিল বঙ্গবন্ধুর কাছে সব কিছুর উর্ধে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে (স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস থেকে) বঙ্গবন্ধু মাত্র ১৩১৪ দিন দেশ শাসন করেছিলেন। এর মধ্যেই সংবিধান প্রণয়ন করাসহ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্বির্নিমাণে তিনি অত্যন্ত সফল হয়েছিলেন। নিবন্ধে আরও বলা হয়, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজকের বাংলাদেশের অর্থনীতি মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে অনেক গুণ ছাড়িয়ে যেত। বঙ্গবন্ধুর প্রগতিবাদী উন্নয়ন দর্শন বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক শ্রেণী কাঠামোর আমূল পরিবর্তন-রূপান্তর ঘটে যেত। আবুল বারকাতের এই নিবন্ধটি উৎসর্গ করা হয় প্রয়াত অধ্যাপক ড. আবু মাহমুদকে। মোঃ মোয়াজ্জেম হেসেন খান তাঁর ‘বাাংলাদেশ উন্নয়ন ভাবনা : তত্ত্ব ও বাস্তবতা’ শীর্ষক নিবন্ধ পাঠকালে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণেই জমির পরিমাণ ক্রমাগত কমছে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে আদি পুঁজি ভূমি ধ্বংস করা যাবে না। ভূমি হচ্ছে আদি এবং অবিনশ্বর উৎপাদন উপাদান। শিল্পোন্নয়নের জন্য মিষ্টি পানির দরকার, তাই আমাদের নদীগুলোকে খনন করে আরও গভীর করা উচিত। নদীগুলো যাতে পানি ধরে রাখতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাস্তাঘাট নির্মাণ করে আমাদের আবাদী জমিগুলো নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে আবার এই খাতেই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি। কোনক্রমেই ভূমি নষ্ট করা যাবে না। বর্তমানে চীন তাদের ভূমি উদ্ধার করছে। গ্রামে বহুতল ভবন নির্মাণ করে তারা তাদের জমি সংরক্ষণ করছে। আমাদেরও সেই পথে হাঁটা উচিত। মোঃ জহির উদ্দিন খান আরিফের ‘দারিদ্র্যের বহুমাত্রিকতা এবং দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ নিবন্ধে বলা হয়, শুধু জনগণের আয় ও সম্পদের স্বল্পতার কারণেই দারিদ্র্য সৃষ্টি হয় না, বরং মানবিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত নানাবিধ অধিকার ও সুযোগে ভোগের বঞ্চনা থেকেও মানুষ দারিদ্র্যে ভোগে। পরিবার ও সমাজে নানাভাবে যন্ত্রণার শিকার হয়ে চিন্তাশক্তি ও কর্মশক্তি হারায়। ফলে ওই সব জনগোষ্ঠী অকাল মৃত্যুমুখে পতিত হয়। দ্বিতীয়দিনের প্রথম সেশনে মোট ৮টি নিবন্ধ পাঠ করা হয়, যার প্রত্যেকটিই এক একজন প্রয়াত অর্থনীতিবিদদের উৎসর্গ করা হয়। ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অর্থনীতিবিদরা তাঁদের সুচিন্তিত লেখনীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরা নিবন্ধে ভবিষ্যত করণীয় সম্পর্কেও মতামত ব্যক্ত করেন।
×