ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরায় গার্মেন্টস কর্মী খুন, গুলশানে পিটিয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

উত্তরায় গার্মেন্টস কর্মী খুন, গুলশানে পিটিয়ে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যথারীতি গার্মেন্টস থেকে বেরিয়ে বাসায় রওনা হন শাপলা। তারপর মাঝপথ থেকে উধাও। সারারাত খুঁজেও তার সন্ধান মেলেনি। পরদিন বুধবার বেলা বারোটায় বিমানবন্দর থানার পুলিশ উত্তরার ১ নং সেক্টরের একটি ড্রেনের মাঝে পড়ে থাকতে দেখে এক তরুণীর লাশ। তারপর শনাক্ত হয়, তিনিই আগের রাতে নিখোঁজ হওয়া শাপলা। খবর পেয়ে বাসা থেকে ছুটে আসেন তার মা বেদেনা । তিনি থানা প্রাঙ্গণে পুলিশের পিকআপে দেখতে পান কাপড়ে মোড়ানো শাপলার লাশ। সেখানেই চিৎকার, বুক চাপড়িয়ে কান্না, আর্তনাদ, ‘কে করল এমন সর্বনাশ। কে মারল তাকে? তার তো কোন শত্রু ছিল না।’ তারপর বিমানবন্দর থানার ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয় বেদেনাকে। ওসি শাহ আলমের কক্ষে তখন বসা সহকারী কমিশনার আওরঙ্গজেব খান লেনিন। তিনি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে বেদেনার মুখ থেকে শুনতে চান, ঘটনার আগে-পরের কাহিনী। তাদের দু’জনের সামনেই বেদেনা জানান, শাপলার কোন শত্রু ছিল না। স্বভাব চরিত্র ভাল। তবে স্বামী রাজু তাকে সন্দেহের চোখে দেখত। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তরার একটি টেইলার্স থেকে কাজ শেষে বাসার উদ্দেশে রওনা হয়। রাত আটটায়ও বাসায় না ফেরায় বেদেনা ও শাপলার স্বামী রাতভর বিভিন্ন স্থানে সন্ধান চালান। রাতে উত্তরা থানায় গিয়েও খোঁজখবর নেন। বুধবার ভোরেও তাঁকে খোঁজা হয়। মেয়ের জন্য যখন অস্থির, তখন বেলা বারোটায় বিমানবন্দর থানার দারোগা কবিরুল খবর দেন শাপলার লাশ থানায়। দারোগা কবিরুল জানান, টহল দেয়ার সময় উত্তরার ১নং সেক্টরের মেইন রাস্তার পাশের ড্রেনে পড়ে থাকতে দেখা যায় মেয়েটার দেহ। তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তার শরীরে তেমন কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে রাতেই শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ এখানে ফেলে গেছে খুনীরা। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঠানো হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে। এ বিষয়ে শাপলার মা বেদেনা বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ইতোপুর্বে আটক শাপলার স্বামীকে আসামি করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বেদেনা জানান, তাঁর বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। তাঁর দু’মেয়ের বড় জন শাপলা, যার বয়স পনেরো। ঢাকায় থাকছেন উত্তরার ফরিদাবাদে। তিনিও একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। শাপলা কাজ করত ফরিদাবাদের একটি টেইলার্সে। গত পহেলা বৈশাখে শাপলার সঙ্গে বিয়ে হয় রাজু নামের এক ব্যক্তির। পেশায় গাড়ির ড্রাইভার রাজুর সঙ্গে শাপলার জানাশোনা ছিল। বিয়েটা মূলত সে জন্যই। বিয়ের পর শাপলা জানতে পারেন, ঘরে সতীন রয়েছে। সতীনের ঘরে দুটো সন্তানও আছে। তারা থাকে রাজশাহীতে। সহকারী কমিশনার আওরঙ্গজেব খান লেনিনের উদ্দেশে থানায় বসে বেদেনা বলতে থাকেন, ‘বিয়ের পর স্বামীর নির্যাতনের শিকার হতো শাপলা। এমনকি সপ্তাহখানেক আগেও শাপলাকে চরম মারধর করেছিল রাজু। এ নিয়ে দেনদরবারও হয়। সে জন্যই রাজুকেও সন্দেহ হচ্ছে। জানতে চাইলে ওসি শাহ আলম বলেন, ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে কিভাবে শাপলাকে হত্যা করা হয়েছে। আপাতত মনে হচ্ছে শ্বাসরোধ করেই মারা হয়েছে। হত্যার আগে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে সেটাও নিশ্চিত হওয়া যাবে ময়নাতদন্তের পর। বেদেনার কথাবার্তায় রাজুও সন্দিগ্ধ। গুলশানে পিটিয়ে হত্যা ॥ এদিকে গুলশানে সাবের হোসেন (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশান-২ নম্বরের তাহের টাওয়ারের পাশে স্থানীয় দোকানদার তাকে লাথি, ঘুষি ও লাঠিপেটা করে। আহত অবস্থায় সাবেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর দেড়টার দিকে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি আরও জানান, গুলশান-২ নম্বরে এক ব্যক্তিকে লাঠিপেটা করা হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে আটক করা হয়। ঘটনার অনুসন্ধানে তাদের থানায় এনে জিজ্ঞাসদ করা হচ্ছে। সাবেরের বাবার নাম ওসমান (মৃত)। বাসা মিরপুর ১২ নং সেকশন, ব্ল-ডি, লাইন-১০। মৃত সাবেরের স্ত্রী সুমি জানান, চকবাজার থেকে স্টেশনারি সামগ্রী কিনে তা বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতেন সাবের। পুলিশের কাছ থেকে ফোন পেয়ে ঢামেক এসেছি। ঢামেকে ইঞ্জেকশনসহ যুবক আটক ॥ এ ছাড়া বুধবার বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিন হাজার পিস ইঞ্জেকশনসহ জহিরুল হক (২৭) নামের এক যুবককে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। চানখাঁর পুল এলাকার জনি ফার্মেসি থেকে তাঁকে আটক করা হয়। জহিরুল হক হোসেনী দালান এলাকার আব্দুর রবের ছেলে।
×