ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দরপত্র তৈরি, চূড়ান্ত করা ও পরিবেশগত পরামর্শ মিলবে

মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র ॥ চার কোম্পানির সঙ্গে পরামর্শক নিয়োগ চুক্তি সই

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র ॥ চার কোম্পানির সঙ্গে পরামর্শক নিয়োগ চুক্তি সই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাতারবাড়ি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রর পরামর্শক নিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বুধবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সঙ্গে জাপান, জার্মানি এবং অস্ট্রেলীয় চার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়। বিদ্যুত কেন্দ্রটি ২০২২ সালে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারিত থাকলেও ২০১৮ এর মধ্যে অন্তত একটি ইউনিট উৎপাদনে আনার জন্য অনুরোধ করছে সরকার। এটি দেশীয় শতভাগ মালিকানার প্রথম কয়লাচালিত বড় বিদ্যুত কেন্দ্র। কক্সবাজারের মহেশখালিতে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে অর্থায়ন নিশ্চিত করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। মহেশখালিতে যে বিদ্যুত হাব নির্মাণ করা হচ্ছে এটি তারও প্রথম কেন্দ্র। চুক্তিতে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির পক্ষে কোম্পানি সচিব মিজানুর রহমান চার কোম্পানির পক্ষে প্রকল্প প্রধান হিরোতো ইতাগাকি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি হওয়া চারটি কোম্পানি হচ্ছে জাপানের টোকিও ইলেক্ট্রিক পাওয়ার সার্ভিসেস কোম্পানি, নিপ্পন কোয়ে কোম্পানি, জার্মানির ফিশনার জিএমবিএইচ এ্যান্ড কো এবং অস্ট্রেলিয়ার এসএনইসি ইন্টারন্যাশনাল পিপিওয়াই লিমিটেড। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রে ১০৮ মাস বা ৯ বছর ধরে এরা পরামর্শক হিসেবে কাজ করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের আগে দরপত্র প্রস্তুত, বিদ্যুত কেন্দ্রটির দরপত্র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা, পর্যবেক্ষণ, পরিবেশগত বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করবে কোম্পানিগুলো। এ জন্য নয় বছরে তাদের ৬০০ কোটি টাকা দিতে হবে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিকে। বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরও এটির পরিবেশ এবং রক্ষণাবেক্ষণে পরামর্শ দেবে এরা। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদনের সময়সীমা দুই বছর এগিয়ে আনার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বিদ্যুত জ্বালানি সংস্থানে তার মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জাইকাকে অর্থায়নের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জাপান আমাদের অনেক বড় বন্ধু রাষ্ট্র। দেশের উন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে তারা অবদান রেখে চলেছে। বিদ্যুত উৎপাদনের মাস্টার প্লান প্রণয়ন ছাড়াও তিনি মহেশখালিতে আধুনিক নগরী এবং বিদ্যুত হাব করার জন্য একটি আধুনিক পরিকল্পনা দ্রুত করে দিতে জাইকাকে অনুরোধ করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাপান এবং বিদ্যুত জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মাতারবাড়ি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য মোট এক হাজার ৪১৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকা থেকে বিদ্যুত সঞ্চালনের জন্য পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ৮০০ কিলোভোল্ট ডাবল সার্কিট ট্রান্সমিশন নির্মাণ করবে। পিজিসিবি এজন্য কাজও শুরু করেছে। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় প্রকল্প এলাকায় যাতায়াতের জন্য সড়ক প্রশস্তকরণ ও নতুন সড়ক নির্মাণের কাজ করবে, আমদানি করা কয়লার জাহাজের চলাচল সহজ করতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুতায়নের কাজ করবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। বিদ্যুত বিভাগ জানায়, সরকার এই প্রকল্প এলাকায় আরও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে। এছাড়া এখানে গভীর সমুদ্র বন্দর, কয়লা রাখার টার্মিনাল এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মিত হবে। এতে করে ভবিষ্যতে এই এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকা- বেড়ে যাবে। কক্সবাজার জেলার মহেশখালি উপজেলার মাতারবাড়ি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রটি মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নে নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ৬০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের বিদ্যুত কেন্দ্র ছাড়াও ১০ হাজার মেগাওয়াটের কয়লা নামানোর জন্য বন্দর এবং মহেশখালির আধুনিক নগরায়নের জন্য ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের সব থেকে বড় প্রকল্প হবে এটি। তবে শুধু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হবে ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো। জাইকার তৈরি করা ২০১০ সালের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রটি আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলবে। কেন্দ্রটির জন্য বছরে তিন দশমিক ৭৩ মিলিয়ন টন কয়লা দরকার হবে। পরিবেশ দূষণ রোধে বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে আল্ট্র সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
×