ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাসপাতাল থেকে পালালেন রিজভী, গুলশান অফিস থেকে পাপিয়া ও রানু

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

হাসপাতাল থেকে পালালেন রিজভী, গুলশান অফিস থেকে পাপিয়া ও রানু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুলিশ ও এ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে এসেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। জানা যায়, বুধবার ভোরে বিল পরিশোধ না করে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসে তিনি গুলশানের একটি বাসায় অবস্থান করেন। সেখান থেকেই তিনি ভিডিও বার্তায় ঘোষণা দিয়েছেন পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসা ছিল রাজনৈতিক কৌশল। তাই এ নিয়ে এখন কিছু বলবেন না। এদিকে বুধবার ভোরে রিজভী যখন এ্যাপোলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসেন ঠিক তখনই বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় থেকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যান বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া ও রেহানা আক্তার রানু। উল্লেখ্য, নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ রুহুল কবির রিজভীকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এ্যাপোলে হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর থেকে রিজভী সেখানেই অবস্থান করছিলেন। মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতার হলে রুহুল কবির রিজভী হাসপাতাল থেকেই দলের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে ফখরুলের মুক্তি দাবির পাশাপাশি অবরোধ কর্মসূচী সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশে তার গুলশান কার্যালয়ে পিপার স্প্রে মারা হয়েছে বলেও রিজভী বিবৃতিতে উল্লেখ করেন। জানা যায়, শনিবার রাত থেকে পুলিশ পাহারায় রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে বিল পরিশোধ না করেই সবার অগোচরে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এর পর রিজভীর বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় জিডি করে এ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের নিরাপত্তা নির্বাহী শাহ আলম বাদী হয়ে ভাটারা থানায় এ জিডি করেন। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হতে থাকলে দুপুরের দিকে রিজভীর এক ভাই এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসার বিল পরিশোধ করেন। জানা গেছে, এ্যাপোলো হাসপাতালে রিজভীর চিকিৎসার বিল আসে ৫৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে আগেই ৩০ হাজার টাকা বিল পরিশোধ ছিল। বাকি ২৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তার ভাই। আরও জানা যায়, শনিবার পুলিশ রিজভীকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে বলা হলেও সেদিন রিজভীর স্ত্রীও হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে তার ভর্তির কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। রিজভীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন বিএনপি কর্মীরা জানিয়েছেন, শীতের রাতে হাসপাতালের কেবিনের দরজার বাইরে গোয়েন্দা পুলিশের কয়েক সদস্য ঘুমিয়ে থাকার ফাঁকে বুধবার ভোরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন রিজভী। তবে তিনি এখন সুস্থ আছেন। তবে কোথায় আছেন আপাতত বলা যাবে না। জানা যায়, গ্যাস্ট্রোলজির অধ্যাপক ডাঃ মজিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে এ্যাপোলো হাসপাতালের দশম তলার ১১ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন রুহুল কবির রিজভী। রবিবার বিকেলে গুলশানের এক বাসায় অবস্থানকালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে প্রেরিত ভিডিও বার্তায় ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচী চলবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশেই গুলশান কার্যালয়ে পিপার স্প্রে ছোড়া হয়েছিল। তিনি দেশবাসীকে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে অবরোধ কর্মসূচী বাস্তবায়নে সর্বাত্মকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্র্মীর মুক্তি দাবি করেন। ভিডিও বার্তায় রিজভী বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি সুস্থ হলেই আবার দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন। এই ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী সরকার হিটলারের গ্যাস চেম্বার স্টাইলে খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। দুর্বার আন্দোলনে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এদিকে অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয়ে রেখে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বুধবার ভোরে পালিয়ে এসেছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া ও রেহানা আক্তার রানু। তবে কেউ কেউ বলছে পুলিশের সঙ্গে সমঝোতা করেই তারা গুলশান কার্যালয় থেকে চলে গেছেন। উল্লেখ্য, শনিবার রাত থেকেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন মহিলা দলের প্রভাবশালী এই দুই নেতা। সোমবার বিকেলে খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয় থেকে বের করার চেষ্টা হিসেবে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে সেøাগান দেয়ার পাশাপাশি কার্যালয়ের গেটে লাথি মেরে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তারা। অবশ্য মঙ্গলবার রাতে মহিলা দলের আরেক নেতা নীলুফার চৌধুরী মনিসহ আরও ক’জন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় থেকে পালিয়েছেন বলেও জানা গেছে। অবশ্য সেলিমা রহমানসহ মহিলা দলের আরও যে ক’জন নেতা এখনও খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছেন তারাও যে কোনভাবে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
×