ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্পর্শকাতর স্থাপনায় হামলা হতে পারে

অবরোধে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

অবরোধে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশে অবরোধ চলাকালে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ভিআইপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের হিটলিস্টের অন্তর্ভুক্ত। হামলা করে উড়িয়ে দেয়া হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থাপনা। দেশী-বিদেশী মহলের তৈরি করা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ছক অনুযায়ী ডাকা অবরোধে উস্কানি দিচ্ছে জঙ্গী গোষ্ঠী ও যুদ্ধাপরাধীরা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পাওয়ার পর সারাদেশে জঙ্গী, সন্ত্রাসী, অপরাধী, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানান, সারাদেশের জেলা শহর, থানা পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মী, ক্যাডারদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে তাদের গ্রেফতার করার অভিযান চালানো হচ্ছে। গ্রেফতার অভিযান শুরুর পর সারাদেশের জেলা, শহর ও থানা পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও ক্যাডাররা আত্মগোপনে চলে গেছে। আত্মগোপনে থেকে তারা চোরাগুপ্তা হামলা করে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, বোমাবাজি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। জঙ্গী, সন্ত্রাসী, অপরাধী চক্রের সদস্যদের নাশকতা, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য মাঠে নামানো হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুন, রাস্তায় গাছ ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারের পতন ঘটানোর জন্য পর্দার অন্তরালে তৎপরতা চালাচ্ছে দেশী-বিদেশী মহল। যুদ্ধাপরাধী ও আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দিয়ে মাঠে নামাচ্ছে তারা। দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলাকালে বড় ধরনের নাশকতা তৈরি করে দেশের ভেতরে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। ৫ জানুয়ারি নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশের ভেতরে অস্থিতিশীলতা ও অস্থিরতা তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ার পর অবরোধ চলাকালের সময়কে বেছে নেয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার সম্প্রতি তৈরি করা এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সরকার পতনের আন্দোলন চাঙ্গা করতে ও দেশে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য বিএনপি জোট নিজেদের সভা-সমাবেশে বোমা হামলা চালিয়ে প্রাণহানিসহ নানা ধরনের নাশকতার ছক কষছে। অবরোধ আন্দোলনে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে বিভিন্ন ইসলামী দল ও জঙ্গী সংগঠন সংশ্লিষ্ট যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর হয়ে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকা- ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে অচলাবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে অবরোধসহ নানা কর্মসূচীর আড়ালে অরাজকতা, নাশকতা, বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আন্দোলনের পক্ষে আন্তজাতিক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতাও জোরদার করার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিস্ট কাজ করে চলেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাশকতা চালাতে প্রথমে জঙ্গী সংগঠনগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি শিবির ক্যাডারদের দিয়ে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শোডাউনের নামে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হবে। শিবির-জামায়াত নেতাদের মুক্ত করার সুযোগ তৈরির চেষ্টা করবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক মিশনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করাসহ তৎপরতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, পাকিস্তান, সৌদি আরব, চীন, সুইডেন, ইইউ, কানাডা, ভারত, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, জার্মানি, শ্রীলঙ্কা ও তুরস্কের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল চীন ও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আইন বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনসহ ডান-বামপন্থী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক পরিচিতি আছে তাদের সম্পৃক্ত করার কৌশল নেয়া হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে ২০ দলীয় জোটের অবরোধের আন্দোলনের সময় যেকোন ধরনের নাশকতা প্রতিরোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে। পুলিশ সদর দফতর ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে জরুরী চিঠি পাঠিয়েছে। ছয় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছেও নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। সর্বক্ষণিকভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে পুলিশ ও র‌্যাবকে। সে আলোকে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোয় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
×