ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াত ও ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আদেশ ১২ জানুয়ারি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৬ জানুয়ারি ২০১৫

জামায়াত ও ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আদেশ ১২ জানুয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা এবং রায় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় জামায়াতে ইসলামী ও দলের ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল, ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, আইনজীবী তাজুল ইসলামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আদালত অবমাননার বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল আদেশ দেবে ১২ জানুয়ারি। প্রসিকিউশন ও তাজুল ইসলামের আইনজীবীর শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল এ দিন নির্ধারণ করেছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগজ্ঞের রাজাকার কমান্ডার পলাতক সৈয়দ মোঃ হাসান আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষী মোঃ এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া জবানবন্দীতে বলেছেন, হাসান আলীর নির্দেশে আমার বাবাকে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। আজ পরবর্তী সাক্ষীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। সোমবার আদালত অবমাননার শুনানিতে প্রসিউিশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। অন্যদিকে তাজুল ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন এহসান এ সিদ্দিকী। শুনানিতে জেয়াদ আল মালুম বলেন, তাজুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেছে যে, সব সাক্ষ্য দালিলিক দলিলপত্র প্রসিকিউশন জমা দিয়েছে তা ডাস্টবিনে ফেলার জন্য। তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালের মামলার সঙ্গে সরকারের কোন সম্পর্ক নেই। এ মামলা হলো প্রসিকিউশন বনাম আজহারুল ইসলাম। তাজুলের বক্তব্য ধরে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির বিবৃতি দিয়েছে এবং জামায়াতে ইসলামী ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল দিয়েছে। এটা ট্রাইব্যুনালের কর্মকা- ও কর্তৃত্বকে চ্যালেজ্ঞ করা হয়েছে। তার এই বক্তৃতায় আদালত অবমাননা হয়েছে। ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেছেন, তাজুলের বক্তব্যের সঙ্গে অন্য নেতাদের বক্তব্যের সংযোগ রয়েছে। আইনজীবী যা বলেছেন অন্যরাও তাই বলেছেন। ট্রাইব্যুনালের মর্যাদার বিষয়টি হলো শুধুমাত্র এজলাসের মধ্যে সম্মান দেখানো হয় না। এর বাইরেও সম্মান দেখাতে হয়। আমরা কতখানি আবেগপ্রবণ হয়ে এ্যাডভোকেসি করব সেটা দেখাতে হবে। আমরা মনে করি, পাগল শিশুই শুধুমাত্র অর্থহীন কথা বলবে। অন্যরা বলবেন না। অন্যদিকে ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী শুনানিতে বলেন, তাজুল ইসলামের বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। পরে আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা আদালত অবমাননা করিনি। অতীতেও আদালতের ওপর শ্রদ্ধা ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। তারপরেও যদি কোনক্রমে ট্রাইব্যুনাল মনে করেন যে, আমার বক্তব্য ট্রাইব্যুনালকে আঘাত করেছে তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য ৬ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল ১২ জানুয়ারি আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করেছে। উল্লেখ্য, ১ জানুয়ারি প্রসিকিউশনপক্ষ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা এবং রায় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় জামায়াতে ইসলামী এবং দলের ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল, ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, আইনজীবী তাজুল ইসলামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করা হয়। বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর ৪৯ পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগটি দাখিল করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। যাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির মহিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুর রহমান এবং ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতিকুর রহমান। এছাড়া সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামী। বুধবার চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মৃত্যুদ- প্রদান করে। এই রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়েছে সেটা গ্রহণ না করে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হলেই সুবিচার হতো। যে তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদ-াদেশ দেয়া হয়, তার একজন সাক্ষী ছয় কিলোমিটার, একজন তিন কিলোমিটার এবং দেড় কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে রেলগাড়ি থেকে তাকে নামতে দেখেছেন। এই সাক্ষীর ভিত্তিতে ফৌজদারি আইনে বিচার করা যায় না। এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ফাঁসিতো দূরের কথা প্রসিকিউশনের জরিমানা করা হলে ভালো হতো।’ এছাড়া ওই রায়ের প্রতিবাদে বুধ ও বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামী দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়। পাশাপাশি জামায়াতের নেতৃবৃন্দ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছেন, যা আদালত অবমাননার শামিল। হাসান আলী ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগজ্ঞের রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মোঃ হাসান আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষী মোঃ এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া জবানবন্দীতে বলেছেন, হাসান আলীর নির্দেশে আমার বাবাকে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। আজ পরবর্তী সাক্ষীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৭-৫৮ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- কোনা ভাওয়াল, থানা- তাড়াইল, জেলা- কিশোরগঞ্জ। আমি পঞ্চম শ্রেণীতে লেখাপড়া করেছি। মুক্তিযুদ্ধকালীন আমি কৃষিকাজ করতাম। জবানবন্দীতে তিনি আরো বলেন, আসামি রাজাকার হাসান আলী দারোগা আমার বাবাকে ঘুম থেকে তুলে আমার বড় ভাই শাহজাহান ভূঁইয়ার কথা জিজ্ঞাসা করে। একপর্যায়ে আসামির নির্দেশে রাজাকাররা আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর রাজাকাররা আমার দাদী ও দাদাকে ধরে নিয়ে তাড়াইল থানার দিকে চলে যায়। আমি এ ঘটনা জঙ্গলে লুকিয়ে দেখেছিলাম। সকালবেলা আমি ও গ্রামের লোকজন পুকুর থেকে আমার পিতার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করি এবং ওই দিনই বাড়ির কাছে মসজিদের সামনে তার দাফন করি। এই ঘটনার পরের দিন আমার দাদী কামরুন্নেছা আমাদের বাড়িতে আসে এবং সে বলে যে, আসামি হাসান আলীসহ রাজাকাররা তাকে এবং আমার দাদাকে তাড়াইল থেকে কিশোরগঞ্জ ডাকবাংলো মিলিটারি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আমাদের জানায় যে, আমার চাচা কামারুজ্জামানকে পাঁচ দিনের মধ্যে এনে না দিলে দাদা ও দাদী দু’জনকেই মেরে ফেলবে। এই সংবাদ পেয়ে আমরা আমাদের গ্রামের দুদার বাপকে ভারতে পাঠিয়ে কামরুজ্জামানকে চার দিনের মাথায় নিয়ে আসি। পরে আমাদের স্থানীয় শান্তি কমিটির মেম্বার আবুল হোসেন বিএসসি ও লক্কু মিয়া আমার চাচা কামরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে কিশোরগঞ্জ ডাকবাংলো মিলিটারি ক্যাম্পে যায়। ওই ক্যাম্পের পাকিস্তানী মেজর ইফতেখার আমার চাচা কামরুজ্জামানের হাতের কনুই ও পায়ের হাঁটুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে, তিনি মুক্তিযুদ্ধের কোন ট্রেনিং গ্রহণ করেননি। এরপর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। হাসান আলী আমার দাদা ও দাদীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। পরে তাদের মুখ থেকে এ সকল কথা শুনেছি। সাক্ষী বলেন, আমি হাসান আলীকে চিনি। তিনি আজ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত নেই।
×